ভাসানচরে জায়গা হলো ২৮ রোহিঙ্গার

নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ভাসানচর। এএফপি ফাইল ছবি
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ভাসানচর। এএফপি ফাইল ছবি

বর্ষা মৌসুমে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরের ওপর চাপ কমাতে সরকার মিয়ানমারের এক লাখ সংখ্যালঘু মুসলমানকে সরানোর জন্য বেছে নেয় ভাসানচরকে। বঙ্গোপসাগরে নতুন জেগে ওঠা ওই চরে সরকারের ওই উদ্যোগে জাতিসংঘের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক মহল শুরু থেকেই বিরোধিতা করে আসছে। যদিও ভাসানচরকে রোহিঙ্গাদের জন্য বাসযোগ্য করতে জাতিসংঘের কোনো কোনো সংস্থা বাংলাদেশকে সহায়তাও করেছে। শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের ছোট একটি দলকে গত শনিবার প্রথমবারের মতো পাঠানো হলো আলোচিত ভাসানচরে।

আজ রোববার দুপুরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, একটি ছোট ডিঙ্গি নৌকায় করে বেশ কিছু রোহিঙ্গা টেকনাফে ঢুকে পড়ে। পরে শনিবার গভীর রাতে ওই রোহিঙ্গাদের কোস্ট গার্ড ভাসানচরে নিয়ে গেছে। তাদের সেখানে কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে। আবারও কোনো রোহিঙ্গাকে সাগরে পাওয়া গেলে তাদের ভাসানচরে পাঠানো হবে।

কক্সবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শেষ পর্যন্ত উপায় না দেখে শনিবার ভোরে ৪০ জন রোহিঙ্গাকে নিয়ে একটি ডিঙ্গি নৌকা কক্সবাজারের নুনিয়ারছড়া প্যারাবনে ভেড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ২৮ রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় এক মানব পাচারকারীকে উদ্ধার করে। তাদের কোস্ট গার্ডের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। পরে কোস্ট গার্ড মহেশখালী চ্যানেল দিয়ে ভাসানচরে নিয়ে যায়।

নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস রোববার দুপুরে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদককে বলেন, ২৮ জন রোহিঙ্গার দলটিকে শনিবার দিবাগত রাতে ভাসানচরে নিয়ে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। আপাতত তাঁরা সেখানে থাকবেন। আশ্রায়ণের যে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তাঁর অধীনে রোহিঙ্গারা থাকবেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তাঁদের খাবার-দাবারের বিষয়ে দু-এক দিনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে।

এদিকে ভাসানচরে দায়িত্বপালনকারী একজন কর্মকর্তা জানান, রোহিঙ্গাদের আশ্রায়ণ প্রকল্পের একটি ক্লাস্টার হাউসে আলাদা রাখা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৫টি শিশু, ১৯ জন নারী ও ৪ জন পুরুষ।

মানব পাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে শ' পাঁচেক রোহিঙ্গা দুই সপ্তাহ ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছে গভীর সমুদ্রে। মালয়েশিয়ায় যাওয়ার নাম করে নারী-শিশুসহ নানান বয়সের এসব রোহিঙ্গাকে ট্রলারে উঠিয়েছিল পাচারকারীরা। কিন্তু মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ ৫০০ রোহিঙ্গাবোঝাই ট্রলার দুটিকে উপকূলে ভিড়তে দেয়নি। উপায় না দেখে পাচারকারীরা এদের নিয়ে এপ্রিলের ২৩ তারিখ ঢুকে পড়তে চেয়েছিল টেকনাফের বাহারছড়া দিয়ে বাংলাদেশের উপকূলে। এখানেও বিধিবাম। আবারও গভীর সমুদ্রে ফিরে যেতে হল ট্রলার দুটিকে। এদিকে আশ্রয় দিতে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে চিঠি লিখেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোও একই দাবি করছে। আর বাংলাদেশের একটাই কথা, এরা এ দেশের জলসীমায় নেই। নিতে হলে এ অঞ্চলের অন্য দেশগুলো নিক।