করোনা মোকাবিলায় মান্নার ৮ দফা

করোনাভাইরাসের দুর্যোগ মোকাবিলায় দেশের অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, বিভিন্ন পেশাজীবী ও এনজিও প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে তিন থেকে পাঁচ বছর মেয়াদি একটি স্থায়ী ‘জাতীয় পুনর্গঠন কমিটি গঠন’সহ সরকারকে ৮ দফা প্রস্তাব দিয়েছে নাগরিক ঐক্য।

আজ রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ের মিলনায়তনে 'কোভিড–১৯ : বৈশ্বিক মহামারি ও বাংলাদেশ' শীর্ষক আলোচনা সভায় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না এসব প্রস্তাব দেন।

আলোচনা সভায় ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকার যেসব প্রণোদনা ব্যাংকের মাধ্যমে দিচ্ছে তা মূলত ধনী ও বড় ব্যবসায়ীদের জন্য। মাঝারি বা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য যতটুকু রয়েছে ব্যাংকিং জটিলতার কারণে তাঁরা সময়মতো সে সহায়তা পাবেন না। একই সঙ্গে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিরও অভাব রয়েছে বলে তিনি জানান।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের ( সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারও ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে বলেন, এখানে জীবন ও জীবিকার মতো দুটি গুরত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। জীবন রক্ষার ইস্যুতে সরকার সফল হতে পারেনি। তাদের প্রস্তুতির অভাব ছিল। যাঁরা দেশের বাইরে থেকে এসেছেন, তাঁদেরকে কোয়ারেন্টিনে রাখার বিষয়টি সরকার নিশ্চিত করতে পারেনি। সেই সঙ্গে ২৬ মার্চ ছুটির আগে একদল মানুষ ঢাকার বাইরে গিয়েছে, ৪ এপ্রিল একদল ফিরেছে, তারা আবার ঢাকার বাইরে গিয়েছে। এতে করে করোনার সংক্রমণ বেড়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ভালো কাজ করতে হলে সর্বদলীয় কমিটি দরকার। সব রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিতে হবে।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, 'এই অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হলে পৃথিবীর সব দেশ, সব শ্রেণি-পেশা ও রাজনৈতিক দলের মানুষকে নিয়ে যৌথভাবে এই সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে। কিন্তু সরকার সেদিকে যায়নি। এমনকি এই ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করার পরও সেই ব্যাপারে তাদের কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না।’

এ দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের কাছে ৮ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন মান্না। প্রস্তাবগুলো হচ্ছে—দেশের অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, বিভিন্ন পেশাজীবী, এনজিও প্রতিনিধির সমন্বয়ে ৩-৫ বছর মেয়াদি একটি স্থায়ী ‘জাতীয় পুনর্গঠন কমিটি' গঠন। ত্রাণ চুরি-স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির অভিযোগ দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে শাস্তির ব্যবস্থা, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেতন আগামী ৬ মাসের জন্য মওকুফ। মাদ্রাসাভিত্তিক লিল্লাহ বোর্ডিং, এতিমখানা ও বৃদ্ধাশ্রমগুলোতে আগামী তিন মাসের খাবার সরবারহ। দিনমজুর দুই কোটি পরিবারকে তিন মাসের খাবার সরবরাহ, মধ্যবিত্ত-নিম্নমধ্যবিত্তদের ৫০ শতাংশ ভর্তুকিতে রেশনিং ব্যবস্থা। দরিদ্র কৃষকদের সব ঋণ মওকুফ। এ মৌসুমের খাদ্যশস্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় বিনা খরচে কর্তন, ত্রাণ বিতরণ ও টিসিবি কাযর্ক্রম তদারকি, রেশনিং। কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার দায়িত্ব সামরিক বাহিনীর হাতে ন্যস্ত। চিকিৎসক,নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য পর্যাপ্ত ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুযায়ী সুরক্ষা উপকরণের ব্যবস্থা, সব ধরনের গৃহস্থালি ইউটিলি বিল আগামী তিন মাসের জন্য মওকুফ। ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত মাসিক আয়ের মানুষের বাড়িভাড়ার অর্ধেক সরকারকে বহন করা। ঋণ প্রণোদনা বিতরণ তদারকিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ও বর্তমান গর্ভনর, শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যক্তি, এনজিও প্রতিনিধি, অর্থনীতিবিদ, গবেষণা সংস্থার প্রতিনিধিসহ মনিটরিং সেল গঠন।

মাহমুদুর রহমান মান্নার সভাপতিত্বে আলোচনায় আরও অংশ নেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের ভিপি নুরুল হক, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা মুনির হোসেন কাশেমী, খেলাফত মজলিশের মাওলানা মাহবুবুল হক, এবি পার্টির অবসরপ্রাপ্ত মেজর আব্দুল ওহাব মিনার প্রমুখ।