করোনা জয় করে বাড়ি ফিরলেন বাবা-ছেলে

প্রথমে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন বাবা। এর তিন দিন পর ছেলের শরীরেও করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়। বাবা ও ছেলেকে রাখা হয় লালমনিরহাট সরকারি নার্সিং কলেজে স্থাপিত আইসোলেশন ইউনিটে। সেখানে চিকিৎসক ও নার্সদের সঠিক চিকিৎসাসেবা ও নিজেদের মনোবলের জোরে বাবা টানা ২১ দিন আর ছেলে ১৮ দিন করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে জয়ী হয়েছেন। রোববার দুপুরে সেখান থেকে তাঁদের ছাড়পত্র দেওয়া হয়।

ওই করোনাজয়ী দুই রোগী হলেন লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের গুড়িয়াদহ গ্রামের কামরুল ইসলাম (৩০) ও তাঁর ছেলে আবু সালমান (৭)। এদের মধ্যে কামরুল ইসলাম লালমনিরহাট জেলার প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনা রোগী ও তাঁর ছেলে জেলার দ্বিতীয় করোনায় আক্রান্ত রোগী। লালমনিরহাটের সিভিল সার্জন নির্মলেন্দু রায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কামরুল ইসলাম নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বউবাজারে রাজমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন। তিনি গলাব্যথা নিয়ে ৮ এপ্রিল গ্রামের বাড়িতে আসেন। ৯ এপ্রিল তাঁর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ল্যাবে পাঠানো হয়। ১১ এপ্রিল তাঁর নমুনার পরীক্ষার ফলাফলে তিনি করোনা ‘পজিটিভ’ হিসেবে শনাক্ত হন। ওই দিন রাতেই তাঁকে চিকিৎসার জন্য বাড়ি থেকে লালমনিরহাট সরকারি নার্সিং কলেজের আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। গত ১৪ এপ্রিল তাঁর ছেলে আবু সালমানের নমুনা পরীক্ষার ফল করোনা পজিটিভ আসে। এ কারণে তাঁকেও চিকিৎসার জন্য ১৪ এপ্রিল একই স্থানে নিয়ে আসা হয়। তাঁরা একই কক্ষে থাকলেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আলাদা বিছানায় ছিলেন। এরপর দুবার বাবা ও ছেলের শরীর থেকে নমুনা নিয়ে ল্যাবে পরীক্ষার করার পর ফল নেগেটিভ এলে তাঁদের ছাড়পত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাকে এখানে নিয়ে আসার দিন আমার মা করিমন নেছা আমাকে বলেছিলেন, ‘‘আমি দোয়া করছি, তুমি সুস্থ হয়ে ফিরে আসবে।’’ আজ ফিরে এসে খুব ভালো লাগছে। করোনা নিয়ে যত ভয় ছিল, তা নিজের মনোবল ও চিকিৎসকদের পরামর্শমতো চলে জয় করেছি।’

আইসোলেশন ইউনিটে কেমন সেবা পেয়েছেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে কামরুল ইসলাম বলেন, ‘চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যরা খুব সুন্দরভাবে আমাদের খোঁজখবর নিয়মিত নিয়েছেন ও পরামর্শ দিয়েছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উন্নত মানের এবং পুষ্টিকর খাবার দিয়েছে। লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের প্রধান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক রুহুল আমিন নিয়মিত ফল, শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির বোতল কিনে দিয়েছেন। লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহফুজ আলম ফোনে আমাদের খোঁজখবর রাখার পাশাপাশি গ্রামের বাড়িতে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছেন।’

রোববার দুপুরে কামরুল ইসলাম ও তাঁর ছেলে আবু সালমানকে ছাড়পত্র দিয়ে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের একটি অ্যাম্বুলেন্সে তাঁদের গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। এর আগে সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এক সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানে কামরুল ইসলামের হাতে তাঁর পরিবারের জন্য এক মাসের খাদ্যসামগ্রী ও কিছু নগদ টাকা তুলে দেওয়া হয়। জেলা পরিষদ, পুলিশ বিভাগ, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, সদর হাসপাতাল, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ও সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে তাঁকে এই সহায়তা দেওয়া হয়।