ভয়কে জয় করে করোনার নমুনা সংগ্রহ করছেন তাঁরা

সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় করোনাভাইরাসের শনাক্তকরণের পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহকারী দলের পাঁচ সদস্য। ছবি:প্রথম আলো
সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় করোনাভাইরাসের শনাক্তকরণের পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহকারী দলের পাঁচ সদস্য। ছবি:প্রথম আলো

ভয়কে জয় করে ছুটে চলছেন, খবর পেলেই পৌঁছে যাচ্ছেন মানুষের বাড়ি বাড়ি। তাঁরা তাঁদের কর্তব্যে অবিচল। স্ত্রী, সন্তান ও মা-বাবার আপত্তি উপেক্ষা করে সামাজিক দায়বদ্ধতা ও জনসেবার মহান লক্ষ্য নিয়ে তাঁরা তাঁদের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। মূলত করোনাভাইরাস শনাক্তকরণের পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করাই তাঁদের প্রধান কাজ। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মী তাঁরা। সংখ্যায় তাঁরা পাঁচজন।

সাতক্ষীরায় কারও করোনার উপসর্গ দেখা দিলে অথবা কেউ করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেলে ওই পাঁচ স্বাস্থ্যকর্মীর ডাক পড়ে। তাঁরা হলেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মো. আবুল কাসেম, শেখ মহিবুর রহমান, স্বাস্থ্য সহকারী মো. মেহেদী হাসান, মো. ফারুক হাসান ও অফিস সহায়ক সাইফুল্লা হাবীব।

কীভাবে এই কাজের সঙ্গে জড়িত হয়ে গেলেন, জানতে চাইলে স্বাস্থ্য সহকারী ফারুক হাসান বলেন, ‘প্রথম অবস্থায় ভয় কাজ করত। করোনা উপসর্গ আছে এমন রোগীর নমুনা নিতে যেতে হবে শুনলেই সন্তান ও স্ত্রী আপত্তি করত। তারপর ছিল না কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ ও ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী। এ অবস্থায় ভয় না করাটাই অস্বাভাবিক। একপর্যায়ে ভয়কে জয় করে আমরা রোগীদের নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু করি। কাউকে না কাউকে তো কাজটা করতে হবে—এ কথা স্ত্রীকে বোঝালাম। প্রথমে আপত্তি থাকলেও পরে আমার স্ত্রী আমার কথা বুঝতে পেরেছে। এখন আর তার আপত্তি নেই, বরং সাবধানের সঙ্গে কাজ করার উৎসাহ জোগায়।’

এ বিষয়ে মো. আবুল কাসেম বলেন, ‘করোনাভাইরাস রোগী সংস্পর্শে গেলেই আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা থাকে প্রায় শতভাগ। ফলে প্রথম দিকে ভয় কাজ করত, নানা রকম শঙ্কা ছিল। প্রথম দিকে নমুনা সংগ্রহে গেলে এক অজানা আতঙ্কে রাতে ঘুমও হতো না ঠিকমতো। বাড়ির ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীরও আপত্তি ছিল। নিজের জবাবদিহির জায়গা থেকে নিজে নিজে মন শক্ত করে এই কাজে অংশ নিলাম।’

মো. আবুল কাসেম বলেন, ‘স্ত্রী, সন্তানসহ স্বজনদের বোঝালাম, পিপিইসহ অন্যান্য সামগ্রী পরে যাব। স্বাস্থ্য বিভাগে চাকরি করে অসুস্থ মানুষের পাশে যাব না, তা হতে পারে না। তা ছাড়া রাষ্ট্র ও সমাজের কাছে দায়বদ্ধতাও রয়েছে। স্বাধীনতাযুদ্ধে মা তাঁর সন্তানদের যুদ্ধে পাঠিয়েছেন। যুদ্ধে যাওয়ার জন্য উৎসাহ জুগিয়েছেন। তোমরা এ সময় পেছনে টেনো না আমাকে। উৎসাহ দাও, সাহস জোগাও। ১৯৭১ সালে ছিল আমাদের জন্মভূমি বাংলাদেশ স্বাধীন করার যুদ্ধ। আর এ যুদ্ধ হচ্ছে গোটা বিশ্ব করোনামুক্ত করার যুদ্ধ। এ যুদ্ধের সৈনিক হওয়াও গর্বের। প্রথমে কয়েকবার আপত্তির পর এখন আর আপত্তি করে না কেউ। আমারও নমুনা সংগ্রহের কাজে যেতে একটা আলাদা ভালো লাগা কাজ করে।’

আবুল কাসেম ও ফারুক হাসানের মতো তাঁদের দলের অন্য সদস্য মহিবুর রহমান, মেহেদী হাসান ও সাইফুল্লা হাবীব এই কাজের ব্যাপারে খুবই আন্তরিক। তাঁদের সঙ্গে আলাপের সময় তাঁরা এই কথাই জানালেন।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান জানান, নমুনা সংগ্রহ দল আগ্রহ নিয়ে কাজ করে। তাঁদের তিনি উৎসাহ দেন। কখনো কখনো তিনিও তাঁদের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে যান। তাঁদের মধ্যে দুজনকে অনলাইনে দেখানো হয়েছিল কীভাবে নমুনা সংগ্রহ করতে হয়। এরপর ওই দুজন অন্যদের দেখিয়ে দিয়েছেন কীভাবে নমুনা সংগ্রহের কাজটি করতে হয়।