মাদক ব্যবসায় বাধা দেওয়ায় বিএনপির কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

মাদক ব্যবসায় বাধা দেওয়ায় কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলায় বিএনপির কর্মী আলমগীর হোসেনকে (৪২) কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল মঙ্গলবার রাতে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আলমগীর হোসেন কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার মথুরাপুর গ্রামের আইয়ুব আলীর ছেলে। তিনি কুমিল্লা-১০ আসনের বিএনপিদলীয় সাবেক সাংসদ ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন। আলমগীরকে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া দুজন হলেন মো. রুবেল (২৩) ও জালাল হোসেন (৪৫)।

এই ঘটনায় সাবেক সাংসদ মনিরুল হক চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আলমগীর তাঁর ওপর হামলা হতে পারে—এই আশঙ্কা জানিয়ে প্রায় ১০ দিন আগে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। কিন্তু সেটির তদন্ত হয়নি। পুলিশ কোনো ধরনের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। নিলে হয়তো এই খুনের ঘটনা ঘটত না। আমি এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই। একই সঙ্গে খুনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার দাবি করছি।’

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সদর দক্ষিণ উপজেলার মথুরাপুর এলাকার বিএনপির কর্মী আলমগীর হোসেনের সঙ্গে একই গ্রামের আওয়ামী লীগের কর্মী মো. রুবেল ও তাঁর সহযোগীদের সংঘর্ষ হয়। এ নিয়ে মামলা হয়। এরপর আলমগীর জামিন নিয়ে বের হন। কয়েক দিন আগে আলমগীরের কাছে এলাকায় থাকতে হলে চাঁদা দাবি করেন রুবেল ও তাঁর অনুসারীরা। কিন্তু আলমগীর তা দিতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর থেকে তাঁর প্রতি বিরক্ত তাঁরা। এ ঘটনায় আলমগীর হোসেন সদর দক্ষিণ মডেল থানায় একটি অভিযোগ করেন। ওই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শাহ আলম সেই অভিযোগ তদন্ত করছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার রাত সাতটা ৪৫ মিনিটে ১০ বিজিবির মথুরাপুর বিওপি এলাকার ২০০ গজ দূরে আলমগীরের বাড়ির সামনে দিয়ে মাদক পাচার করছিলেন মো. রুবেল। এ নিয়ে আলমগীর ও রুবেলের মধ্যে তুমুল বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে রুবেল তাঁর আরও পাঁচ অনুসারী নিয়ে অস্ত্র দিয়ে আলমগীরের ওপর হামলা চালান। এরপর তাঁরা আলমগীরের মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থান কুপিয়ে জখম করেন। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। খবর পেয়ে পুলিশ মথুরাপুর এলাকা থেকে রুবেল ও জালালকে গ্রেপ্তার করে। রুবেল একই উপজেলার মোড়াপাড়া গ্রামের হারুনুর রশিদের ছেলে।

রুবেলের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে স্থানীয় আওয়ামী লীগের অন্তত তিনজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রুবেল দলের পদধারী কেউ নন। দলের সমর্থক। তিনি এলাকায় মাদক ব্যবসা ও খারাপ কাজের সঙ্গে জড়িত।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আজ বুধবার দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে আলমগীর হোসেনের লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হয়।

এ বিষয়ে সদর দক্ষিণ মডেল থানার এসআই খাদেমের বাহার বলেন, ‘মাদক ব্যবসায় বাধা দেওয়ার কারণে এই ঘটনা ঘটে। আলমগীর অত্যন্ত নিরীহ ও এলাকায় ভালো লোক ছিলেন। তিনি ট্রাক্টর চালাতেন। তিনি তাঁর ওপর হামলার আশঙ্কার বিষয়ে থানায় অভিযোগ করেছিলেন। ওই অভিযোগের তদন্ত চলাকালে এই ঘটনা ঘটছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। পুলিশ হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’