পুলিশে আক্রান্ত বেশি, বিজিবিতে কেউ নেই

করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স
করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও পরিষেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত পুলিশেই সবচেয়ে বেশি সদস্য করোনায় আক্রান্ত। এরপর রয়েছে বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। তবে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কোনো সদস্য গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হননি।

বিজিব পরিচালক অপারেশন লে. কর্নেল ফাইজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, শুরু থেকেই বিজিবি সব ধরনের সতর্কতা নিয়েছে। হয়তো সে কারণে এখন পর্যন্ত বাহিনীর কোনো সদস্য করোনায় আক্রান্ত হননি। তিনি বলেন, এরপরও যাতে সবাই সতর্ক থাকেন, সে ব্যাপারে কঠোর দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। করোনা প্রতিরোধে বাহিনীর সব সদস্যকে প্রয়োজনমতো ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

গতকাল বিকেল পর্যন্ত পুলিশ বাহিনীতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৫৩। এর মধ্যে শুধু ঢাকায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫৭৬ জন। এ সময় সারা দেশে ১ হাজার ১৭৯ জন পুলিশ সদস্যকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। আর আইসোলেশনে আছেন ১ হাজার ৬৩ জন। করোনায় আক্রান্ত ৮৫ জন পুলিশ সদস্যকে সুস্থ ঘোষণা করা হয়েছে। করোনায় পাঁচ পুলিশ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে।

পুলিশের বড় ইউনিটগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত রয়েছে র‍্যাবে। সেখানে এখন করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৯৯। র‍্যাবের সবচেয়ে বেশি লোক আক্রান্ত নারায়ণগঞ্জের র‍্যাব-১১তে। তবে কোন ব্যাটালিয়নে কত লোক আক্রান্ত, তা বলতে রাজি হননি র‍্যাব কর্মকর্তারা।

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম প্রথম আলোকে বলেন, শুরু থেকে র‍্যাব সদস্যদের তিন ভাগে ভাগ করে দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হয়। যাতে এক ভাগ আক্রান্ত হলে অন্যরা এসে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারে। এ কারণে র‍্যাবের কিছু লোক করোনায় আক্রান্ত হলেও বাহিনীর কাজে কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয়নি। এখন সব র‍্যাব সদস্যকে করোনা প্রতিরোধে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

পুলিশ সদর দপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, র‍্যাব ছাড়াও পুলিশের আরও যেসব বড় ইউনিট আছে, সেগুলোতেও সদস্যরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি সদর দপ্তর জানিয়েছে, আনসার বাহিনীতে গতকাল পর্যন্ত ৩৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ব্যাটালিয়ন আনসার আছেন ৮ জন, অঙ্গীভূত আনসার ২৩ জন, নারী আনসার ১ জন এবং সাধারণ কর্মচারী আছেন ১ জন। এর মধ্যে ৪ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। ৫ জন নিজ বাসায় কোয়ারেন্টিনে আছেন। বাকিরা হাসপাতাল ও আবাসিক হোটেলে অবস্থান করছেন। আনসার সূত্র জানিয়েছে, আনসার সদস্যরা বিভিন্ন হাসপাতালসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় দায়িত্ব পালন করার সময় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সে ৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের ১ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে এবং বাকি ৮ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, আগুন নেভাতে তাঁরা যেসব পোশাক পরেন সেটা অগ্নিনিরোধক, কিন্তু এটা জীবাণু আটকাতে পারে না। সে কারণে অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজে অংশ নিতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে ৭ জন সদরঘাট ফায়ার স্টেশনের এবং ২ জন পোস্তগোলা ফায়ার স্টেশনে কাজ করেন। সবাই ভালো আছেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এখন জীবাণু প্রতিরোধে পোশাক পরে দায়িত্ব পালন করছেন বলে তাঁরা জানান।