মধ্যপ্রাচ্য থেকে কয়েক সপ্তাহে ফিরছেন ২৮ হাজারের বেশি বাংলাদেশি

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে কারাগারে থাকা অভিবাসীদের সাধারণ ক্ষমার আওতায় দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে। সেই সঙ্গে তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো ফেরত পাঠাচ্ছে তাদের দেশগুলোতে থাকা বেকার ও অবৈধ অভিবাসীদের। সব মিলিয়ে এসব তালিকায় থাকা বাংলাদেশের অন্তত ২৮ হাজার ৮৯৬ জন আগামী কয়েক সপ্তাহে দেশে ফিরছেন। 

আজ বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গণমাধ্যমে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় এ তথ্য জানান। তিনি এদিন বিকেলে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পঞ্চম আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকের পর গণমাধ্যমে বার্তাটি পাঠান।


আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সুবিধা-অসুবিধার প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে অনেকে ফিরছেন। আমাদের কোয়ারেন্টিন সুবিধা কতটা আছে, সেটা যাচাই–বাছাই করে আমরা তাঁদের দেশে নিয়ে আসছি। গত সপ্তাহে আমরা মধ্যপ্রাচ্য থেকে ৩ হাজার ৬৯৫ জনকে ফিরিয়ে এনেছি।’


পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, এখন পর্যন্ত ফিরে আসা লোকজনের বড় অংশ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে সাধারণ ক্ষমার আওতায় জেল থেকে ছাড়া পাওয়া লোকজন। এ ছাড়া ওমরাহ হজের পর আটকে পড়া, অবৈধ এবং অনিয়মিত অভিবাসীরা ফিরে এসেছেন বাংলাদেশে।


পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ধারণামতে, আগামী কয়েক সপ্তাহে ২৮ হাজার ৮৪৯ জন প্রবাসী আসতে পারেন। আমরা কীভাবে তার ব্যবস্থা করব, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি।’


তবে আগামী কয়েক সপ্তাহে কোন দেশ থেকে কত বাংলাদেশি আসবেন, সেটি উল্লেখ না করলেও সৌদি আরব থেকে ৪ হাজার ২৬২ জন, কুয়েতের বন্দিশিবিরে থাকা সাড়ে চার হাজারের বেশি, মালদ্বীপ থেকে দেড় হাজার এবং ওমান থেকে এক হাজার বাংলাদেশির ফেরার কথা জানিয়েছেন। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান, লেবানন থেকে বাংলাদেশের লোকজনের ফেরার বিষয়টি তিনি উল্লেখ করেছেন ভিডিও বার্তায়।


আব্দুল মোমেন বলেন, ‘গণমাধ্যমে কুয়েতে থাকা বাংলাদেশি শ্রমিকদের বিক্ষোভের প্রসঙ্গ এসেছে। সেখানে চারটি বন্দিশিবিরে আমাদের সাড়ে চার হাজার নাগরিক দেশে ফেরার অপেক্ষায় আছেন। সেখানে খাবারের সংকট হয়েছে বলে জেনেছি। এরপর মিশনকে তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছি। আমরা মিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ১৯০ জনের তাালিকা পাঠিয়েছি। এর মধ্যে ১৪৪ জনকে দেশে আসার জন্য ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। কুয়েত সরকার যখনই ফ্লাইট শিডিউল পাঠাবে, আমরা তাঁদের গ্রহণ করে নেব।’


বিদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশের নাগরিকদের লাশ আনার বিষয়েও ভিডিও বার্তায় মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আব্দুল মোমেন এ বিষয়ে বলেছেন, করোনায় মারা গেলে সৌদি আরব বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশ বিদেশি নাগরিকের লাশ সেখানে দাফন করবে। আর যদি কোনো দেশ অভিবাসীর লাশ ফেরত পাঠায়, তবে তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম মেনে পাঠাবে। লাশ বাক্স থেকে বের করা যাবে না। লাশের চেহারা দেখা যাবে না।


পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ভারত, জাপান, চীন, সিঙ্গাপুরে আটকে পড়া ২ হাজার ৮৫৩ জনকে সরকার ফিরিয়ে এনেছে। এ ছাড়া ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশের আরও নাগরিককে বিশেষ ফ্লাইটে ফিরিয়ে আনার প্রস্তুতি চলছে।


আজকের পঞ্চম আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের কর্মকর্তারা অংশ নেন।