স্বজনেরা লাশ না ধরলেও গোসল করান ইউপি সদস্য রোজিনা

করোনায় আক্রান্ত নারীর লাশ দাফনে কাউন্সিলর মাকসুদুল আলমের দলের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ শহরের মাসদাইর কবরস্থানে যাচ্ছেন নারী ইউপি সদস্য রোজিনা আক্তার।  ছবি: তাঁর ফেসবুক থেকে
করোনায় আক্রান্ত নারীর লাশ দাফনে কাউন্সিলর মাকসুদুল আলমের দলের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ শহরের মাসদাইর কবরস্থানে যাচ্ছেন নারী ইউপি সদস্য রোজিনা আক্তার। ছবি: তাঁর ফেসবুক থেকে

করোনার ভয়ে স্বজনেরাও লাশ ধরছেন না। প্রতিবেশীরাও কেউ এগিয়ে আসছেন না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাশ পড়ে থাকছে বাড়িতে ও সড়কের সামনে। বিষয়গুলো নাড়া দেয় নারী জনপ্রতিনিধিকে। সেই চিন্তা থেকে লাশের গোসল করাতে উদ্যোগী হন নারী ইউপি সদস্য রোজিনা আক্তার।

আগে কখনো লাশ গোসলের অভিজ্ঞতা না থাকলেও ইতিমধ্যে শিখে নিয়েছেন নিয়মরীতি। ইতিমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া দুই নারীসহ ছয়জনের লাশের গোসল করিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার এনায়েতনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সংরক্ষিত ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নারী সদস্য ৭। যত দিন করোনা থাকবে, তত দিন মৃতদেহের গোসল করানোর কাজ চালিয়ে যাবেন বলে জানান তিনি।

রোজিনা প্রথম আলোকে বলেন, করোনার কারণে বিভিন্ন স্থানে লাশ পড়ে থাকার বিষয়টি তাঁকে নাড়া দেয়। তিনি তাঁর ফেসবুক আইডিতে ঘোষণা দেন, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়াসহ নারীদের লাশ দাফনে গোসল করাবেন তিনি। ফেসবুকের তাঁর ওই স্ট্যাটাস দেখে গত ২৫ এপ্রিল সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর (যিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির লাশের দাফন ও সৎকারে আলোচিত) মাকসুদুল আলম তাঁকে ফোন দেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া এক নারীর লাশ গোসল করানোর জন্য। গত ২৬ এপ্রিল তিনি প্রথম শহরের আমলাপাড়া এলাকায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ওই নারীর লাশের গোসল করান। তাঁকে সহযোগিতা করেন মাসদাইর কবরস্থানের গোসলের দায়িত্বে থাকা মণি আক্তার। পরে কাউন্সিলর মাকসুদুল আলমের তত্ত্বাবধানে মাসদাইর কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।

>রোজিনা আক্তার নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার এনায়েতনগর ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী সদস্য।

ওই দিন পশ্চিম মাসদাইর এলাকায় ডায়াবেটিসে এক নারীর মৃত্যু হয়। তিনি ওই নারীর গোসল করান। এরপর ৩ মে একই দিনে তিন নারীর মৃত্যু হয়। ‍এ ছাড়া শহরের চারারগোপ এলাকার আরও এক নারীর মৃত্যু হলে মৃতদেহের গোসল দেন তিনি।

রোজিনা আক্তার
রোজিনা আক্তার

রোজিনা আক্তার বলেন, লাশ গোসল করানোর আগে সুরক্ষাসামগ্রী (গাউন, হ্যান্ড গ্লাভস, মাস্ক, ক্যাপ ও বুটজুতা) পরে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী গোসল করানো হয়। গোসল করানো শেষে পিপিই আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়। তাঁকে এনায়েতনগর ইউপি চেয়ারম্যান দুটি পিপিই, স্থানীয়ভাবে এক জোড়া গামবুট দেওয়া হয়। এখন অনেকেই তাঁকে ব্যক্তি উদ্যোগে সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ করছেন।

এ ব্যাপারে জেলা করোনাবিষয়ক ফোকাল পারসন সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘তাঁরা পিপিই ব্যবহার করে লাশের গোসল করাচ্ছেন। যেহেতু তাঁরা স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করছেন, আমরা নির্দিষ্ট সময় পরপর তাঁদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছি ও করব।’

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা বারিক বলেন, ‘মানবতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ইউপি সদস্য রোজিনা। গর্ব করার মতো কাজ করে চলেছেন। তাঁর এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।’