যে সূত্রে করোনার সঙ্গে লড়ছে সূত্রা

করোনাযুদ্ধে ছবি নিয়ে শামিল ১০ম শ্রেণির সূূত্রা
করোনাযুদ্ধে ছবি নিয়ে শামিল ১০ম শ্রেণির সূূত্রা

করোনার এই দুঃসময়ে অসহায় মানুষ কী চায়? একটি সাহায্যের হাত। যে হাত কাউকে দেবে দুমুঠাে খাবার। কারও বা চাই নগদ অর্থ, যা দিয়ে মেটানো হবে খুব জরুরি প্রয়োজন। সাধ্য আর সাহস না থাকলে সে হাত কি বাড়াতে পারে কেউ? এ সূত্রের ব্যতিক্রম ঘটিয়েছে সূত্রা নামের ছোট মেয়েটি। তার আঁকা ছবি এখন কিছু অসহায় মানুষের সাহায্যের অবলম্বন। সূত্রার শিল্পের হাত হয়ে উঠেছে করোনাযুদ্ধের মোক্ষম হাতিয়ার।
রিকন ও মেকি চাকমা দম্পতির দুই মেয়ের মধ্যে বড় সূত্রা। তাঁদের গ্রামের বাড়ি পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলায়। রাজধানীর দিয়াবাড়ীর মাইলস্টোন কলেজের শিক্ষক রিকন চাকমা। থাকেন রাজধানীর উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরে।

বাবা ও মেয়ের প্রবল ইচ্ছা করোনাযুদ্ধে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবেন। বাড়িয়ে দেবেন সাহায্যের হাত। কিন্তু কীভাবে? তাঁরাও তো অন্য সবার মতো ঘরবন্দী। তাঁদের সাধ্যইবা কতটুকু? 
বুদ্ধি বের হলো। সূত্রা ভালো ছবি আঁকতে পারে। নিজে নিজেই শিখেছে। বিশেষ করে পোর্ট্রেট। ছবি এঁকে ফেসবুকে বেশ পরিচিতিও পেয়ে গেছে। একটি গ্রুপ হয়ে গেছে ওর। কেউ চাইলেই তার পোর্ট্রেট এঁকে দেয় মেয়েটি। ও ঠিক করল, ছবিই বিক্রি করবে। সেখান থেকে যে আয় হবে, তা দেওয়া হবে অসহায় মানুষকে, যাঁদের এ টাকার বড় প্রয়োজন। 

মেয়ের এ ইচ্ছায় সানন্দে সায় দিলেন বাবা। সূত্রা ফেসবুকে জানিয়ে দিল, কেউ চাইলেই তার ছবি এঁকে দেবে ও। এ জন্য সাধ্যমতো যে যাই দিক, সে অর্থ করোনারকালে দুর্ভোগে থাকা মানুষকে দিয়ে দেবে।

করোনাযুদ্ধে ছবি নিয়ে শামিল ১০ম শ্রেণির সূূত্রা
করোনাযুদ্ধে ছবি নিয়ে শামিল ১০ম শ্রেণির সূূত্রা

সূত্রা বলছিল, 'প্রথমে ভেবেছিলাম চার–পাঁচ হাজার টাকা হয়তো উঠবে। সেটাই দিয়ে দেব। কিন্তু দেখলাম, ব্যাপক সাড়া মিলছে।'
২৪ এপ্রিল সূত্রা ফেসবুকে প্রথম জানায় ওর ইচ্ছের কথা। এরপর আগ্রহীরা তাঁদের আলোকচিত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন। সূত্রা তাঁদের পোর্ট্রেট এঁকে দিয়েছে। 
সূত্রার বাবা রিকন চাকমা বলেন, 'এ পর্যন্ত ২৫টি ছবি বিক্রি হয়েছে। উঠেছে ৩০ হাজার টাকা। ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত একটি ছবিতে পাওয়া গেছে। পুরো টাকা আমরা পার্বত্য দুই জেলার একাধিক সংগঠনকে দিয়েছি।'
এই টাকা কোথায় কীভাবে দেওয়া হয়েছে, তাও ফেসবুকে লিখেছেন রিকন। তিনি বলন, 'পুরো বিষয়টিতে স্বচ্ছতা থাকুক, তাই সব হিসাব দিয়ে দিয়েছি।'

সূত্রাদের গ্রামের বাড়ি দীঘিনালার কামাকুছড়ার ২৬ পরিবারকে ৫০০ করে টাকা দেওয়া হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য সদক চাকমা এ অর্থ বিতরণ করেছেন। তিনি বাড়ি বাড়ি ঘুরে এ অর্থ দিয়েছেন। সহায়তা পেয়েছে ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ, রাঙামাটির করোনা ক্রাইসিস ফান্ড ও পাহাড়ি উদ্যোক্তা হাট–৩, উন্মেষ ও পিপিএল এবং বনফুল। 
এখন করোনার কারণে সব বন্ধ। তাই ছবিগুলো বাঁধাই করে দিতে পারেনি সূত্রা। ছবিগুলো এঁকে মোবাইলে সেগুলোর ছবি তুলে মেসেঞ্জারে পাঠিয়ে দিয়েছে। বিকাশের মাধ্যমে আগ্রহীরা অর্থ পাঠিয়েছেন। অবরুদ্ধ পরিস্থিতি শেষ হলে এসব ছবি পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে এই পাহাড়ি পরিবার।

তৃতীয় শ্রেণি থেকেই ছবি আাঁকা শুরু সূত্রার। স্কুলের শিক্ষকেরা এতে উৎসাহ জুগিয়ে আসছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অনেক পোর্ট্রেট এঁকেছে সে। গত ১৩ মার্চ চ্যানেল আই ও ক্যামব্রিয়ান গ্রুপের আয়োজনে বঙ্গবন্ধু ছবি আঁকার প্রতিযোগিতা হয়। এতে ৬০০ প্রতিযোগী অংশ নেয়। প্রথম ৫০ জনকে পুরস্কৃত করা হয়। এর মধ্যে সূত্রাও ছিল। সূত্রা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিও এঁকেছে একাধিক। 

সূত্রার ছবি যাঁরা কিনেছেন, তাঁদের একজন রাঙামাটির মনোঘর নামের এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক অশোক চাকমা। তিনি বলেন, 'মেয়েটি ছোট। কিন্তু ওর নিজের যে দক্ষতা, সেটাকে সম্বল করে ও সহায়তা করেছে মানুষকে। এটা বড় কাজ। এখানে উৎসাহ দিতে পেরেও ভালো লেগেছে।'