হাত খরচের ১০০ টাকা না পেয়ে ভাইকে হত্যা

ছবিটি প্রতীকী
ছবিটি প্রতীকী

বন্ধ মিষ্টির দোকানে জীবন ঘোষের রক্তাক্ত মৃতদেহ পড়েছিলো। খুনিকে গ্রেপ্তারের জন্য বাবা নারায়ণ ঘোষ তাই অজ্ঞাত ব্যক্তির নামে মামলা করেছিলেন মুগদা থানায়। ঘটনা তদন্ত করে পুলিশ বলছে, জীবনকে হত্যা করেছেন তারই ছোট ভাই রাজীব ঘোষ। হাত খরচের জন্য ১০০ টাকা না পেয়ে জীবনের মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করেছিলেন রাজীব।

গত বৃহস্পতিবার ঘটেছে মর্মান্তিক এই ঘটনাটি রাজধানীর উত্তর মুগদায়। সেখানে "জীবন ফুড ফ্যান্টাসি" নামে এই পরিবারের একটি মিষ্টির দোকান রয়েছে। নারায়ণ ঘোষের তিন ছেলে জীবন ঘোষ, মিন্টু ঘোষ ও রাজীব ঘোষ মিলে দোকানটি চালাতেন। রমজান উপলক্ষে ইফতার সামগ্রী বিক্রী করছিলেন তারা। পুলিশ গতকাল শুক্রবার রাজীব ঘোষকে গ্রেপ্তার করেছে। আজ শনিবার তিনি আদালতে ভাইকে হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন।

সবুজবাগ থানায় করা মামলায় নারায়ণ ঘোষ উল্লেখ করেছেন, বৃহস্পতিবার জীবন ঘোষ বাসায় দুপুরের খাবার খেয়ে দোকানে যান। এ সময় তিনি ছোট ভাই রাজীবের জন্য খাবার সঙ্গে করে নেন। দুই ভাই মিলে সন্ধ্যা পর্যন্ত ইফতার সামগ্রী বিক্রী করেন। সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে রাজীব একা বাসায় ফিরেই গোসল করতে চলে যান। গোসল সেরে বেরুলে রাজীবের কাছে তিনি জীবনের কথা জানতে চান। জীবনের উত্তর ছিলো, দোকানের রান্নাঘর থেকে সে পেছনের গেট দিয়ে বের হয়ে এসেছে। আসার সময় দেখেছে সামনের শাটারে তালা লাগানো।

নারায়ণ ঘোষ মামলায় বলেছেন, রাজীবের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় রাত নয়টার দিকে দোকানের "ডুপ্লিকেট" চাবি নিয়ে তিনি রাজীবকে সঙ্গে নিয়ে দোকানে যান। দোকানের শাটার খুলে বাতি জালিয়ে রাজীব চিৎকার দিয়ে বলে, "বাবা। ভাই নাই"। জীবনের মৃতদেহ দোকানের মেঝেতে পড়েছিলো। চারপাশে রক্ত আর রক্ত। গলায় দোকানের হাত মোছার গামচা প্যাচানো।

রাজীবকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পুলিশকে বলেছেন, বড় ভাই জীবনের কাছে তিনি ১০০ টাকা চেয়েছিলেন। কিন্তু জীবন তাকে টাকা দেননি। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে তার প্রচন্ড রাগ উঠে। তখন দোকানের সামনে থেকে একটি ইট নিয়ে তিনি জীবনের মাথার পেছনে আঘাত করেন। জীবন মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তখন আবারো মাথায় আঘাত করলে রক্ত বেরোতে শুরু করে। রক্ত থামানোর জন্য রাজীব গামছা দিয়ে মাথা চেপে ধরেন। কিন্তু রক্ত থামে না, জীবনও আর নড়াচড়া করা করেন না। তখন ভয় পেয়ে দোকান লাগিয়ে তিনি বাসায় চলে যান।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাজীব হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ইট রাস্তায় এবং দোকানের চাবি ম্যানহোলের ভিতরে ফেলে দিয়ে বাসায় চলে যান। ঘটনাস্থল থেকে তারা রাজীবের দেখানো মতে রক্তমাখা ইট ও বাসার বাথরুম থেকে হত্যাকান্ডের সময় তার পড়নে থাকা গেঞ্জি উদ্ধার করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের সবুজবাগ অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মো. রাশেদ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার পর ঘটনাস্থলের বিপরীত পাশের ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করেন তারা। সেখানে রাজীবের সন্দেহজনক গতিবিধি পান তারা। এরপর গ্রেপ্তারের পর তিনি নিজেই খুনের কথা স্বীকার করেন।

রাশেদ হাসান বলেন, রাজীব মাদকাসক্ত ছিলেন। কিছুদিন আগে তিনি মাদকাসক্ত উন্নয়ণ কেন্দ্র থেকে ফিরেছেন। প্রায়ই তিনি বড় ভাই জীবনের কাছে টাকা চাইতেন। কিন্তু জীবন দিকে চাইতেন না। টাকার জন্য একদিন রাজীব তাকে অপহরণ করা হয়েছে এমন একটা নাটকও সাজিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরও পরিবার টাকা দেয়নি। টাকা নিয়ে প্রায়ই ঝগড়া হতো। শেষমেষ খুনই করে বসলেন।