'যা হওয়ার একসঙ্গে হবে, ভয়ে সেবা থেকে সরব না'

বরিশালের উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শওকত আলী,  স্ত্রী মেডিকেল অফিসার নাদিরা পারভিন ও একমাত্র সন্তান।  ছবি: সংগৃহীত
বরিশালের উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শওকত আলী, স্ত্রী মেডিকেল অফিসার নাদিরা পারভিন ও একমাত্র সন্তান। ছবি: সংগৃহীত

মানবতার সেবায় তাঁরা নিজেদের নিয়োজিত করেছেন। যা হওয়ার একসঙ্গে হবে। ভয় পেয়ে মানুষকে সেবা দেওয়া থেকে সরে যাবেন না।

কথাগুলো চিকিৎসক দম্পতি শওকত আলী ও নাদিরা পারভিনের। তাঁরা উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্মরত। দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে তাঁরা একটানা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি, প্রথম দিকে অনেকে যখন নমুনা সংগ্রহ করতে ভয় পাচ্ছিলেন, তখন শওকত আলী নিজেই নমুনা সংগ্রহের কাজ করেন।

জানা গেছে, বরিশালের ১০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যে কেবল উজিরপুরে করোনা রোগীর সেবা দেওয়া হচ্ছে। সেখানে এ পর্যন্ত চারজন করোনা রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দুজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালের শের–ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আরেকজনের চিকিৎসা চলছে।

গতকাল শনিবার কথা হয় শওকত আলী ও নাদিরা পারভিন দম্পতির সঙ্গে। তাঁরা জানান, বিয়ের আট বছর পর সন্তানের বাবা–মা হন তাঁরা। সেই সন্তানের বয়স এখন ১৫ মাস। কিন্তু মানুষের সেবা করতে গিয়ে সেই দুধের সন্তানের সঙ্গ কিছু সময়ের জন্য ত্যাগ করতে হয়েছে তাঁদের। উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শওকত আলী বলেন, ‘করোনা রোগীর সেবা দেওয়ার নিয়ম অনুযায়ী, একজন চিকিৎসক ১০ দিন সেবা দেওয়ার পরে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকবেন, তারপর ৬ দিন পরিবারের সঙ্গে থাকবেন। কিন্তু আমার নিয়ম মানার সুযোগ ছিল না। রোগীকে সুস্থ করতেই এ নিয়ম ভেঙে একটানা ২০ দিন করোনায় আক্রান্ত দুই শিশুকে সেবা দিয়েছি। এখন এক রোগীকে টানা ৬ দিন ধরে সেবা দিয়ে যাচ্ছি। স্ত্রীকে ছুটি নিয়ে সন্তানের পাশে থাকতে বললে সে বলল, দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে মাঠ ছেড়ে যাবে না।’

জানতে চাইলে নাদিরা পারভীন বললেন, ‘করোনা পরিস্থিতি মানবতার সেবক হিসেবে নিজেকে উৎসর্গ করার সুযোগ করে দিয়েছে। সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাই না। দেশের এই দুঃসময়ে দুজনে বীরের মতো মানুষের পাশে থেকে ভূমিকা রাখতে চাই।’