পঞ্চগড়ে গণপরিবহন চালুর দাবিতে মহাসড়কে বিক্ষোভ

পঞ্চগড়ে গণপরিবহন চালুর দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন ত্রাণবঞ্চিত কর্মহীন শ্রমিকেরা। ছবি: প্রথম আলো
পঞ্চগড়ে গণপরিবহন চালুর দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন ত্রাণবঞ্চিত কর্মহীন শ্রমিকেরা। ছবি: প্রথম আলো

পঞ্চগড়ে গণপরিবহন চালুর দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের ত্রাণবঞ্চিত কর্মহীন শ্রমিকেরা। এ সময় মহাসড়কের দুই পাশে শত শত জরুরি পণ্যবাহী যানবাহন আটকা পড়ে।
আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকেরা। এ সময় অনেকেই মহাসড়কে শুয়ে পড়েন। অবরোধের কারণে শহরে প্রবেশের মূল পথ করতোয়া সেতুতে তীব্র রোদে আটকা পড়ে অসংখ্য যানবাহন ও পথচারীরা। এ ছাড়া মহাসড়কের দুই পাশে শত শত জরুরি পণ্যবাহী যানবাহনও আটকা পড়ে।
খবর পেয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গোলাম রব্বানী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের ত্রাণসহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি লকডাউনের নির্দেশনা অমান্য করে চলা যানবাহনগুলোর বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে তাঁরা অবরোধ তুলে দেন।


বিক্ষোভকারী শ্রমিকদের ভাষ্য, সরকারের গণপরিবহন বন্ধ ঘোষণার পর থেকেই প্রায় ৪৫ দিন ধরে তাঁরা কর্মহীন হয়ে ঘরে বসে রয়েছেন। ধারদেনা করে খুব কষ্টে চলছে তাঁদের সংসার। সরকারি ত্রাণসহায়তাও জোটেনি তাঁদের ভাগ্যে। জেলার ২ হাজার ৫০০ জন শ্রমিকের মধ্যে পঞ্চগড় পৌরসভার মাত্র ১০০ জন শ্রমিক ১০ কেজি করে চাল পেয়েছিলেন, তা–ও ফুরিয়ে গেছে। এমনকি শ্রমিকনেতারাও তাঁদের পাশে দাঁড়াননি বলে অভিযোগ করেন কিছু কিছু শ্রমিক।
শ্রমিকদের দাবি, সরকার ধীরে ধীরে সবকিছু শিথিল করছে। মার্কেটগুলো খুলে দিচ্ছে। পণ্যবাহী ট্রাক চলছে, ছোট যানবাহনগুলোতে মানুষ চলাচল করছে আর শুধু যাত্রীবাহী বাস চলাচল করতে দিচ্ছে না। এটা তাঁদের ওপর অন্যায় করা হচ্ছে বলে দাবি করে তাঁরা বলেন, হয় ত্রাণ দিক, নইলে বাস চালাতে দিক।


বিক্ষোভকারী বাসচালক রফিজ উদ্দীন বলেন, ‘জরুরি পণ্য পরিবহনের নাম করে সব যানবাহনই চলছে। শুধু আমাদের বাস চলতে দিচ্ছে না। আমরা ৪৫ দিন ধরে কর্মহীন হয়ে পড়ে আছি। স্ত্রী-সন্তানদের জন্য খাবার জোগাড় করতে পারছি না। আমরা যে কত কষ্টে আছি, সেটা দেখার কেউ নাই। আমাদের ত্রাণ দিতে না পারলে বাস চালাতে দেন।’

অবরোধের কারণে শহরে প্রবেশের মূল পথ করতোয়া সেতুতে তীব্র রোদে আটকা পড়ে অসংখ্য যানবাহন ও পথচারীরা। ছবি: প্রথম আলো
অবরোধের কারণে শহরে প্রবেশের মূল পথ করতোয়া সেতুতে তীব্র রোদে আটকা পড়ে অসংখ্য যানবাহন ও পথচারীরা। ছবি: প্রথম আলো

যাত্রীবাহী বাসের সুপারভাইজার দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘ঘরে খাবার নেই বলেই রাস্তায় নেমেছি। যত দিন বাস চলাচল বন্ধ থাকবে, তত দিনের জন্য ত্রাণ দেন, তা না হলে আমাদের কাজ ফিরিয়ে দেন। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, আমাদের সন্তানদের কথা বিবেচনা করেন। আমরা আর চলতে পারছি না, আমাদের বাঁচান।’


পঞ্চগড় জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সড়ক সম্পাদক মনির হোসেন বলেন, ‘জেলার পাঁচটি উপজেলায় আমাদের সংগঠনের মোট শ্রমিক আড়াই হাজার। বাস চলাচল বন্ধের পর শ্রমিক ইউনিয়ন থেকে পাঁচ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছিল। শুধু পঞ্চগড় পৌরসভা এলাকায় ৮০০ শ্রমিক আছেন, যাঁদের মধ্যে ১০০ শ্রমিক পৌরসভা থেকে ১০ কেজি করে চাল পেয়েছেন।’ তিনি বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের উপজেলাভিত্তিক তালিকা পাঠানো এবং ত্রাণসহায়তার আশ্বাস দেওয়ার পর অবরোধ তুলে নেওয়া হয়েছে।


ইউএনও গোলাম রব্বানী বলেন, শ্রমিকেরা গণপরিবহন চালুর দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছিলেন। সরকারের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা ছাড়া তা সম্ভব নয় বলে তাঁদের বোঝানো হয়। এ ছাড়া যেসব শ্রমিক ত্রাণসহায়তা পাননি, পর্যায়ক্রমে তাঁদের ত্রাণসহায়তা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। পরে তাঁরা অবরোধ তুলে নিয়েছেন এবং বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।