নারী ও শিশুদের ভরসা মতলব হাসপাতাল

করোনার আতঙ্কে প্রায় দুই মাস ধরে চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় সেবা কার্যক্রম চলছে সীমিত আকারে। এ অবস্থায় নারী ও শিশুদের ভরসাস্থল হয়ে দাঁড়িয়েছে আইসিডিডিআরবির মতলব হাসপাতাল। কিছুদিন ধরে এ হাসপাতালে ডায়রিয়া, কলেরার বাইরে প্রসূতিসেবাসহ সাধারণ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আইসিডিডিআরবির (আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ) মতলব হাসপাতালের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সেখানে গত ৯ দিনে (১ থেকে ৯ মে পর্যন্ত) প্রসবকালীন, প্রসব-পূর্ব ও প্রসবোত্তর চিকিৎসা নিয়েছেন ২৭৮ নারী। এ সময় সাধারণ প্রসব (নরমাল ডেলিভারি) হয় ১৭ জনের। সর্দি, জ্বর ও আমাশয় এবং আরও বিভিন্ন সাধারণ রোগের চিকিৎসা নিয়েছে ২৪টি শিশু। এদের বয়স শূন্য থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে। এ ছাড়া আট অপুষ্ট নবজাতককে ‘ক্যাঙারু মাদার কেয়ার ইউনিটে’ এবং ছয়টি নবজাতককে বিশেষ ইউনিটে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। চিকিৎসা নেওয়া ওই ৩০২ মা ও শিশুর সবাই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে।

হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা গেছে, ৯ দিন ধরে গড়ে চিকিৎসা নিয়েছে ৩৪ জন (মা ও শিশু)। এসব মা ও শিশুর বাড়ি চাঁদপুরের বিভিন্ন উপজেলা ও আশপাশে। গতকাল রোববার বেলা একটা পর্যন্ত সেখানে চিকিৎসা নিয়েছে ৭০ জন মা ও শিশু।

গতকাল ওই হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি ওয়ার্ডই রোগীতে ভর্তি। করোনার সংক্রমণ এড়াতে চিকিৎসক ও নার্সরা ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী (পিপিই) পরিধান করে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। উপজেলার দশপাড়া গ্রামের অন্তঃসত্ত্বা শাহানাজ বেগম (২১) বলেন, চিকিৎসকেরা তাঁকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও পরামর্শ দিয়েছেন। করোনার এ সময়ে এই হাসপাতালই এখন তাঁদের একমাত্র ভরসা। কয়েক দিন ধরে শারীরিক সমস্যা নিয়ে এখানকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে একাধিকবার গিয়েও চিকিৎসা পাননি। করোনার ভয়ে চিকিৎসকেরা সেখানে ভর্তি করা তো দূরের কথা, ব্যবস্থাপত্র লিখে দিতেও ভয় পাচ্ছেন।

আইসিডিডিআরবির জ্যেষ্ঠ চিকিৎসা কর্মকর্তা চন্দ্রশেখর দাস বলেন, মূলত এ হাসপাতালে ডায়রিয়া ও কলেরা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে লকডাউন ও করোনার আতঙ্কে প্রায় দুই মাস ধরে এখানে ডায়রিয়া-কলেরা রোগী ভর্তি হচ্ছে কম। এ হাসপাতালে ৭০টি শয্যা রয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে প্রতিদিন ১৪০-১৫০ জন রোগীর চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। করোনার এই দুর্যোগকালে ওই জনবল দিয়েই হাসপাতালটিতে বিশেষ ব্যবস্থায় মা ও শিশু রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। গত মার্চ থেকেই এ পদক্ষেপ নিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য জনবল রয়েছে হাসপাতালে।

চন্দ্রশেখর দাস আরও বলেন, করোনার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও এ হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা অত্যন্ত সতর্কতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এই দুর্যোগে কোনো রোগী, বিশেষ করে কোনো প্রসূতি ও শিশু যাতে যথাযথ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। নৈতিক বাধ্যবাধকতা ও দায়িত্ববোধের কারণে তাঁরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।