৭১ চিকিৎসকের নিয়োগ আটকে আছে

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় সরকার ৩৯তম বিসিএস থেকে নন–ক্যাডার পদে সুপারিশ পাওয়া দুই হাজার চিকিৎসককে ক্যাডার পদে নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু একই বিসিএসে ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য পিএসসির সুপারিশ থাকা ৭১ জন চিকিৎসকের নিয়োগ আটকে আছে কয়েক মাস ধরে। কী কারণে তাঁদের নিয়োগ আটকে আছে, সে বিষয়ে সরকার স্পষ্ট করে কিছু বলছে না।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দ্রুত নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারির দাবি জানিয়েছেন নিয়োগবঞ্চিত চিকিৎসকেরা। এ বিষয়ে তাঁরা ৩ মে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কেউ কেউ তাঁদের ধারণা দিয়েছেন, হয়তো ‘ভেরিফিকেশন রিপোর্ট’ (পরিচয় ও ঠিকানা যাচাই–সংক্রান্ত প্রতিবেদন)–এর কারণে নিয়োগ আটকে রাখা হয়েছে।

৪ হাজার ৭৯২ জন চিকিৎসক (সহকারী সার্জন ও সহকারী ডেন্টাল সার্জন) নিয়োগের জন্য ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল ৩৯তম বিসিএসের (বিশেষ) বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। এরপর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে এক বছর পর ২০১৯ সালের এপ্রিলে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। তাতে ৪ হাজার ৭৯২ জনকে বাছাই করে নিয়োগ দিতে সরকারের কাছে সুপারিশ করে পিএসসি। এর আলোকে গত বছরের নভেম্বরে প্রথম দফায় ৪ হাজার ৪৪৩ জনকে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তাতে প্রথমে প্রায় সাড়ে তিন শ চিকিৎসক নিয়োগ পাননি। তখনই বাদ পড়া চিকিৎসকেরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে খোঁজ নেওয়া শুরু করেন। এরপর দ্বিতীয় দফায় ১৬৮ জন, তৃতীয় দফায় ১৮ জন এবং চতুর্থ দফায় আরও ৯২ জনকে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ২৩ মার্চ পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৪ হাজার ৭২১ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু এরপরও সুপারিশ পাওয়া ৭১ জনের নিয়োগ আটকে আছে। 

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ওই চিকিৎসকদের নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শিগগিরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলা হবে।

নিয়োগে বাদ পড়াদের একজন ফাইরুজ আনিকা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, বাড়ি পঞ্চগড়ে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, যেসব কারণে নেতিবাচক প্রতিবেদন আসার কথা, তার কোনোটাই তাঁর জন্য প্রযোজ্য নয়। এমনকি তাঁর বাবার বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রত্যয়নও আছে।

৩৯তম বিসিএসে মেধাতালিকায় ১০০ জনের মধ্যে থাকা প্রার্থীও আছেন বাদ পড়াদের তালিকায়। তাঁদের একজন রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করা চাঁপাইনবাবগঞ্জের মিজানুর রহমান। তিনি মেধাতালিকায় ৮০তম ছিলেন। মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করলে সবার মতো তাঁকেও বলা হয়েছে, হয়তো ‘ভেরিফিকেশন রিপোর্ট’ নেতিবাচক আসছে। 

এদিকে ৩৯তম বিসিএস থেকে সদ্য নিয়োগ পাওয়া দুই হাজার চিকিৎসককে বিভিন্ন হাসপাতালে পদায়ন করে গতকাল প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার।

সার্বিক বিষয়ে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, শুধু ওই চিকিৎসকদের নিয়োগের ক্ষেত্রেই নয়, যেকোনো নিয়োগেই কারও বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ ও রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর এমন সুর্নিদিষ্ট অভিযোগ এবং ফৌজদারি মামলা না থাকলে কাউকেই নিয়োগ থেকে বঞ্চিত করা ঠিক নয়।