যশোরে ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিলের অভিযোগ

যশোর শহরের ঘোপ সেন্ট্রাল সড়কে সবেদা খাতুনের বাড়ির একটি মিটারে ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যুতের বিল আসে ৩৭৩ টাকা। মার্চ মাসে ওই বাড়িতে কেউ ছিলেন না। অথচ বিদ্যুতের বিল এসেছে ৫৪৪ টাকা।

কেশবপুর উপজেলার বেতিখোলা গ্রামের বাবর আলীর মিটারে মার্চ মাসে ১৮০ টাকা বিদ্যুৎ বিল হয়। কিন্তু এপ্রিল মাসে সেই মিটারে বিল এসেছে ৪৫৭ টাকা।

এমন ভুতুড়ে বিল শুধু সবেদা খাতুন বা বাবর আলীর না, যশোর জেলার অধিকাংশ মিটারে এসেছে। বিদ্যুৎ বিভাগে অভিযোগ করেও কোনো ফল পাচ্ছেন না গ্রাহকেরা। এর ফলে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যে বিদ্যুৎ বিল নিয়ে হতাশায় রয়েছেন তাঁরা। মিটার না দেখে অনুমাননির্ভর হয়ে বিল করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁরা। অনেকে গ্রাহক বাড়িতে না থাকলেও বিল দ্বিগুণ–তিনগুণ এসেছে বলে অভিযোগ করেছেন।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে চলছে লকডাউন। অবরুদ্ধ জীবনে অনেকেই কর্মহীন। মাসে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ শিথিল করে কর্তৃপক্ষ। এই অবস্থায় কেশবপুর উপজেলায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২–এর গ্রাহকদের আগামী ২০ মের মধ্যে ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিল মাসের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের জন্যে মাইকে প্রচার চালানো হচ্ছে। এ সময়ের মধ্যে বিল পরিশোধ করলে তিন মাসের মাশুল গুনতে হবে না। এমন নির্দেশনায় মানুষে খেয়ে না খেয়ে বিদ্যুতের বিল দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।

বেতিখোলা গ্রামের বিদ্যুতের গ্রাহক বাবর আলীর ছেলে রমজান আলী বলেন, ‘মার্চ মাসে ১৮০ টাকার বিদ্যুৎ বিল এসেছে। আর এপ্রিল মাসে ৪৫৭ টাকা বিলের কাগজ ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। মিটার না দেখে অনুমানের ওপর নির্ভর করে বিল করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এই দুঃসময়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। আগামী ২০ মের মধ্যে বিল পরিশোধ করার জন্যেও বিদ্যুৎ অফিস থেকে মাইকে প্রচার চালানো হচ্ছে।'

যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর অধীনে জেলার কেশবপুর, মণিরামপুর ও অভয়নগর উপজেলার বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর মহাব্যবস্থাপক অরুণ কুমার কুণ্ডু বলেন, 'করোনাভাইরাসের কারণে এপ্রিল মাসে মিটার রিডিং (হিসাব) নেওয়া যায়নি। গত বছরের এপ্রিল মাসের বিলের হিসাবে এ বছরের এপ্রিল মাসের বিল ধরা হয়েছে। যে কারণে বিলে কিছুটা হেরফের হতে পারে।’
তিনি জানান, সরকারের নির্দেশনা রয়েছে, ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিল মাসের বিদ্যুৎ আগামী ২০ এপ্রিলের মধ্যে পরিশোধ করলে তিন মাসের মাশুল গোনা লাগবে না। সে কথাটাই মাইকে প্রচার করা হচ্ছে।

ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) অধীনে যশোর শহর ও শহরতলীর প্রায় ৮২ হাজার মিটার রয়েছে। শহরের অধিকাংশ মিটারে বিলের ক্ষেত্রে একই চিত্র দেখা গেছে। অধিকাংশ গ্রাহকের নামে ভুতুড়ে বিলের কাগজ দেওয়া হয়েছে।

ঘোপ সেন্ট্রাল সড়কের ওজোপাডিকোর গ্রাহক সবেদা খাতুনের ছেলে রাসেল খান বলেন, 'আমাদের বাড়িতে পাঁচটি পরিবার বসবাস করে। প্রত্যেক পরিবারের জন্যে আলাদা মিটার রয়েছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে কয়েকটি পরিবার গ্রামের বাড়িতে চলে যায়। বাড়িতে তালা ঝুলানো থাকলেও বিল এসেছে প্রায় দ্বিগুণ।'

খড়কি এলাকার গ্রাহক হামিদুল হক বলেন, 'আমাদের বাড়ির বিদ্যুতের মাস্টার মিটারে ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা বিল আসে। সেখানে এপ্রিল মাসে এসেছে ৮১০ টাকা। আমরা এই ভুতুড়ে বিল দেখে রীতিমত অবাক হয়েছি।'

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওজোপাডিকো-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, 'এপ্রিল মাসের বিল পরের মাসের বিলের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। বিল নিয়ে কারো কোনো অভিযোগ থাকলে তার সমাধানও করে দেওয়া হবে। করোনাভাইরাসের কারণে মিটার দেখে এ মাসে বিল করা যায়নি। এ কারণে এমনটি হতে পারে। এতে গ্রাহকের কোনো লোকসান হবে না। আমরা সব ঠিক করে দেব।'