রংপুরে হাঁড়িভাঙা আমচাষিদের মাথায় হাত

করোনাভাইরাসের কারণে এ বছর হাঁড়িভাঙা আমের বাজার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। ছবি: মঈনুল ইসলাম
করোনাভাইরাসের কারণে এ বছর হাঁড়িভাঙা আমের বাজার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। ছবি: মঈনুল ইসলাম

করোনাভাইরাস দুর্যোগে রংপুরের সুস্বাদু হাঁড়িভাঙা আমবাগানের বড়ই দুর্দিন চলছে। আমচাষিদের মাথায় হাত উঠেছে।পাইকারি ব্যবসায়ী মিলছে না। কেউ কেউ গত বছরের চেয়ে এবার অর্ধেক দামে আম বাগান বিক্রি করছেন। এই মুহূর্তে সরকারিভাবে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে জরুরি উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন আমচাষিরা।

আঁশবিহীন হাঁড়িভাঙা আম অত্যন্ত মিষ্টি এবং সুস্বাদু। কয়েক বছর ধরে রংপুরের বিভিন্ন স্থানে উৎপাদন হচ্ছে এই আমের। রংপুরের চাহিদা মিটিয়েও দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক চাহিদা গড়ে তুলেছে। চাষিরা এই আম উৎপাদনের জন্য প্রতিবছর অপেক্ষা করেন। কিন্তু এ বছর করোনাভাইরাসের কারণে এই আমের বাজার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। তাঁদের স্বপ্ন ভঙ্গ হচ্ছে। পাইকারি ব্যবসায়ী আশানুরূপ না আসায় এ বছর আমের বাজার নিয়ে হতাশ আমচাষিরা।

আমচাষিরা জানান, প্রতিবছর মার্চ মাসের শেষ থেকে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আমের পাইকারি ব্যবসায়ীরা আমবাগান কিনতে এলেও এ বছর তার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এরপরও যাঁরা এ দুর্যোগে এসে আমবাগান কিনেছেন, তাও কিনেছেন অর্ধেক দামে। গত বছরের চেয়ে প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন চাষিরা। তবে অধিকাংশ বাগান অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে আছে। এর ফলে আমচাষিদের মাথায় হাত উঠেছে। বিপুল পরিমাণ টাকা লোকসান গুনতে হবে। এ অবস্থায় আমচাষিরা কৃষি বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ এলাকার আমচাষি নওশাদ আলীর চার একর জমির ওপর আমবাগান। তিনি বলেন, ‘গত বছর এই বাগান থেকে আয় হয়েছে সাড়ে ছয় লাখ টাকা। কিন্তু এ বছর করোনাভাইরাসের কারণে পাইকারি ব্যবসায়ী না আসায় ইতিমধ্যে এই বাগান অর্ধেক দামে তিন লাখ টাকায় বিক্রি করেছি। সার্বিক পরিস্থিতির কারণে লাভের আশা না করে এই আম বাগান বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি।’

একই এলাকার অন্য একজন আমচাষি মোকসেদুল ইসলামের আড়াই একর জমির ওপর আমবাগান। তিনি বলেন, ‘এখনো পাইকারি ব্যবসায়ী পাইনি। করোনাভাইরাসের কারণে এ বছর এই আমের যে কী দশা হবে, তা এখনো বলতে পারছি না। এবার আমের বাজার নিয়ে চিন্তায় আছি।’


তিনি আরও বলেন, ‘আমচাষিরা যাতে ক্ষতির সম্মুখীন না হন, এ জন্য এই মুহূর্তে কৃষি বিভাগকে এগিয়ে আসতে হবে। তাঁদের উদ্যোগ নিতে হবে।’

একই এলাকার কোরবান আলীর চার একর জমির ওপর আম বাগান। তিনিও পাইকারি ব্যবসায়ী না পাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।পুঁজি হারিয়ে ফেলার আশঙ্কা করছেন।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি বছর রংপুর জেলায় তিন হাজার পাঁচ হেক্টর জমিতে আমের চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাঁড়িভাঙা আমের চাষ হয়েছে ১ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে। সেই সঙ্গে আমের ফলনও বেশ ভালো হযেছে। গত বছর এই আম প্রতি হেক্টরে ফলন হযেছিল ৯ দশমিক ৪ মেট্রিক টন। এবারও আমের ফলন ভালো হয়েছে।

কৃষি বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘করোনাভাইরাসের এই প্রাদুর্ভাবে রংপুরের ঐতিহ্যবাহী হাঁড়িভাঙা আমের বাজার নিয়ে আমরা খুব চিন্তিত। এই আমের মৌসুমের এই সময় ব্যবসায়ীরা এসে বাগান কিনে থাকেন। কিন্তু ব্যবসায়ীরা এবার আমের বাজার নিয়ে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন। ঠিকমতো বাজার না পেলে আমের পচন হয়ে বিরাট লোকসানের মুখে পড়তে হবে।’

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের উপপরিচালক সরওয়ারুল হক প্রথম আলোকে বলেন, করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে আমবাগানে। এ কারণে চাষিরা ভীষণ উদ্বিগ্ন। আমচাষিরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, এ জন্য কৃষি বিভাগ হাঁড়িভাঙা আম বাজারজাত করার পরিকল্পনা নিয়েছে।