সহায়তার বাইরে ৮ হাজার পরিবার?

রাঙামাটির চার উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্রাম এখনো মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতায় বাইরে রয়ে গেছে। মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের এসব মানুষ সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন।

এ ছাড়া সড়ক যোগাযোগও না থাকায় যুগ যুগ ধরে সব ধরনের নাগরিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত এসব মানুষ।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জুরাছড়ি উপজেলার দুমদুম্যা ইউনিয়ন, বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক, বিলাইছড়ি উপজেলায় ফারুয়া, বড়থলি ও বরকল উপজেলার বড় হরিণা ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রামে অন্তত আট হাজার পরিবার রয়েছে। শহর ও লোকালয় থেকে ১০০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে হওয়ায় কোনো মুঠোফোন প্রতিষ্ঠান সেখানে টাওয়ার স্থাপন করেনি।

জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কর্মহীন ও হতদরিদ্র মানুষের জন্য মানবিক সহায়তা দিচ্ছে সরকার। পরিবারপ্রতি ২ হাজার ৫০০ টাকা ও ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে। নগদ সহায়তা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। রাঙামাটি জেলার ৬০ হাজার পরিবার এসব সহায়তা পাবেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, আইসিটি মন্ত্রণালয় এসব সহায়তা বিতরণ করবে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, দুর্গম এলাকার এসব বাসিন্দার একমাত্র উপার্জনের উৎস জুমচাষ। জুমচাষের সুবিধার কারণে এখনও এসব এলাকায় কিছু পাহাড়ি বসবাস করে আসছেন। তা ছাড়া ১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধের পর উদ্বাস্তু হয়ে ও পাহাড়ে সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে অনেকেই গভীর বনে আশ্রয় নেন। সেখানে তাঁরা জুমচাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এ ছাড়া কিছু এলাকায় নেটওয়ার্ক থাকলেও সামর্থ্য না থাকায় অনেকেই মুঠোফোন ব্যবহার করেন না। এরা সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন।

>

করোনায় দরিদ্র মানুষকে নগদ সহায়তা দেওয়া হবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে
প্রত্যন্ত এলাকায় নেই মোবাইল নেটওয়ার্ক

জুরাছড়ির দুমদুম্যা ইউনিয়নের সাবেক হেডম্যান সমূর পাংখোয়া বলেন, ‘আমাদের গ্রামে মানুষ মোবাইল কি জিনিস, তা এখনো জানেন না। এখন সরকারি সহায়তার জন্য মুঠোফোন নম্বর খোঁজা হচ্ছে। কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থা ছাড়া আমরা সহায়তা পাব না।’

একই ইউনিয়নের কন্যামনি তঞ্চঙ্গ্যা (৬০) বলেন, ‘দেড় মাস ধরে খেয়ে, না–খেয়ে দিন পার করছি। শুনেছি, সরকার টাকা ও চাল দেবে। এটা পেলে উপকার হতো।’

জুরাছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আমার উপজেলায় করোনার কারণে কর্মহীন ও হতদরিদ্র ২ হাজার পরিবারের তালিকা চাওয়া হয়। আমরা এরই মধ্যে তালিকা করে পাঠিয়েছি। কিন্তু এর মধ্যে এক হাজার পরিবারের কোনো মোবাইল নম্বর দিতে পারিনি। নগদ সহায়তা হিসেবে ২ হাজার ৫০০ টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেওয়ার কথা।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, রাঙামাটি জেলায় ৬০ হাজার পরিবারকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সহায়তা দেওয়া হবে। বেশ কিছু এলাকায় মুঠোফোন নম্বর ছাড়া তালিকা দেওয়া হয়েছে। এখন তাঁদের কীভাবে সহায়তা দেওয়া হবে, এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি। আপাতত তাঁদের বাদ দিয়ে দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে তালিকা প্রণয়নের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।