চিংড়ির দাম কেজিতে ৫০০ টাকা কম, ঘেরমালিকেরা বিপাকে

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় বড় বড় হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ। হাটবাজারগুলোতেও বেচাকেনা অনেক কম। দেশের বাইরেও রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে। এসব কারণে বাজারে চাহিদা কমে গেছে চিংড়ির। বর্তমানে বাজারদর অনুযায়ী উৎপাদন খরচের অর্ধেকও উঠবে না। তাই ধারদেনা ও ঋণ নিয়ে চিংড়ি চাষ করায় সাতক্ষীরার চিংড়ি ঘেরের মালিকেরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।

সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরা জেলায় ৬৬ হাজার ৮৬২ হেক্টর জমিতে ৪৪ হাজার ৯৩৫টি বাগদা চিংড়ির ঘের রয়েছে। এসব ঘেরে বছরে ৩৫০ কোটি চিংড়ি পোনা প্রয়োজন। ঘেরের মালিকের সংখ্যা ৫২ হাজার ৪৪৫। চলতি মৌসুমে বাগদা চিংড়ির উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২৯ হাজার ৪৪১ টন।

সাতক্ষীরা শহরের লাবসা এলাকার চিংড়ি ঘেরের মালিক শেখ অহিদুজ্জামান জানান, তাঁর দেবহাটা এলাকায় ১০ বিঘা জমিতে চিংড়ি ঘের রয়েছে। চলতি বছর বিঘাপ্রতি ইজারামূল্য দিতে হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। গত বছর বিঘাপ্রতি ইজারামূল্য ছিল ১২ হাজার টাকা। চলতি মৌসুমে প্রতি হাজার  চিংড়ি রেণু কিনতে হয়েছে ৭০০ টাকায়। গত বছর এ সময় প্রতি হাজার চিংড়ির রেণু কিনেছেন ২৭০ টাকায়। এর সঙ্গে বেড়িবাঁধ নির্মাণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ ও পাহারাদারের বেতন মিলিয়ে  পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা খরচ হয়।  গত বছর প্রতি কেজি চিংড়ির দাম ছিল ১০০০ টাকা থেকে ১১০০ টাকা। অথচ এখন প্রতি কেজি চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫২০ টাকায়। সব মিলিয়ে চিংড়ির বাজারমূল্য না বাড়লে উৎপাদন খরচ উঠবে না।

আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা গ্রামের আবদুল আজিজ জানান, তাঁর ৩০ বিঘা জমিতে চিংড়ির ঘের রয়েছে। জমির ইজারামূল্য, ঘেরে রেণু ছাড়া—সব মিলিয়ে তাঁর খরচ হয়েছে ২০ লাখ টাকা। গত বছর এ ঘেরে চাষ করতে খরচ হয়েছিল ১৫ লাখ টাকারও কম। তিনি জানান, বড় চিংড়ির দাম গত বছরের চেয়ে অর্ধেকরও কম। ছোট চিংড়ি স্থানীয় মানুষ খাওয়ায় দাম একটু বেশি। তিনি স্থানীয় এক মহাজনের কাছ থেকে সুদে টাকা নিয়েছেন। চিংড়ির বাজারমূল্য না বাড়লে তিনি চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়বেন।

সাতক্ষীরা শহরের কাজী আনিসুজ্জামান জানান, তাঁর দেবহাটার টিকেট এলাকায় একটি ৩০ বিঘার চিংড়ি ঘের রয়েছে। প্রতি মাসে দুবার বিঘাপ্রতি দুই হাজার চিংড়ি রেণুর ছাড়তে হয়। চিংড়ির রেণুর দাম বেশি ও সংকট থাকায় তিনি একবার রেণু ছেড়ে আর এপ্রিল মাসে থেকে  ছাড়তে পারেননি। রেণু ও জমির ইজারামূল্য বেশি আবার উৎপাদিত চিংড়ির বাজারমূল্য অর্ধেক হওয়ায় ব্যাংক ঋণ কীভাবে পরিশোধ করবেন, তা নিয়ে তিনি চরম হতাশার মধ্যে পড়েছেন।

 সাতক্ষীরা চিংড়ি চাষি সমিতির সভাপতি আবুল কালাম জানান, রেণুসংকট ও দাম বেশির পাশাপাশি  জমির ইজারমূল্য বেশি দিতে হওয়ায় চিংড়ির উৎপাদন খরচ অনেক বেড়েছে। অথচ উৎপাদিত চিংড়ির দাম অর্ধেকও পাওয়া যাচ্ছে না। ইতিমধ্যে তিনি চলতি বছর চিংড়ি চাষ করে  দুই কোটি টাকা লোকসানে পড়েছেন। ছোট চাষিদের অবস্থা আরও করুণ। ব্যাংক  ঋণ নিয়ে চিংড়ি চাষ করায় তাঁদের দুশ্চিন্তার  শেষ নেই।  সব মিলিয়ে চিংড়িশিল্প হুমকির মধ্যে পড়েছে।

সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান, চিংড়িশিল্প ও চাষিদের বাঁচতে চিংড়ি হিমাগারের মালিকদের চিংড়ি কিনতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে সাতক্ষীরার পেঙ্গুইন, আইসিআই ও অরগানিক চিংড়ি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো অল্প পরিসরে চিংড়ি কিনছে। এর ফলে চিংড়ির দাম কেজিতে ১০০ টাকা করে বেড়েছে। তা ছাড়া সরকারিভাবে ঘেরমালিকদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। কী সুবিধা দিলে তাঁরা লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারেন, উচ্চপর্যায়ে তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।