করোনাকে জয় করলেন ৮৫ বছর বয়সী জাহানারা খান

জাহানারা খান। জানুয়ারিতে ধানমন্ডির বাসায়। ছবি: সংগৃহীত
জাহানারা খান। জানুয়ারিতে ধানমন্ডির বাসায়। ছবি: সংগৃহীত

‘ওর কীভাবে এটা হলো? আমারই বা কীভাবে হয়েছিল?’ কোভিড–১৯ আক্রান্তের পর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পর এই দুই প্রশ্ন মাঝেমধ্যেই করছেন ৮৫ বছর বয়সী জাহানারা খান। আজ বুধবার মুঠোফোনে এ কথা জানান জাহানারা খানের পুত্রবধূ ফাতেমা মামুন। সুস্থ হয়ে ঢাকার ধানমন্ডিতে বাড়ি ফেরার পর জাহানারা খান জেনেছেন তাঁর বড় ছেলে ইতিহাসবিদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার পর পরীক্ষা করে দুবার করোনা নেগেটিভ আসার পর ৮ মে বাড়িতে আনা হয় জাহানারা খানকে। ফাতেমা মামুন বলেন, ‘প্রথম যখন এলেন অত্যন্ত দুর্বল ছিলেন। দুজন ধরাধরি করে ঘরে আনতে হয়েছে। দু–তিন দিন পর থেকে নিজে আবার হাঁটাচলা করতে পারছেন।’

কীভাবে সময় কাটছে জাহানার খানের? ফাতেমা মামুন বললেন, ‘আগে যে রুটিনে চলতেন, সেভাবেই সময় কাটাচ্ছেন। সকাল সাড়ে আটটার দিকে ঘুম থেকে ওঠেন। এরপর দুপুরের আগে আরেকটু ঘুমিয়ে নেনে। যখন জেগে থাকেন, তাঁর ঘর থেকেই আমাদের সঙ্গে টুকটাক কথাবার্তা বলেন। আজ দেখলাম উনি টেলিভিশন দেখছেন।’

গত দুদিন থেকে জাহানারা খানের একটু শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। তবে এই সমস্যা তাঁর আগে থেকেই। মাঝেমধ্যেই শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দেয়। বাড়িতেই নেবুলাইজ করানো, অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া তাঁর ডায়াবেটিস আছে। বেশ কয়েক বছর হৃদ্‌যন্ত্রে অস্ত্রোপচারও করা হয়েছে। বয়স ও নানা রকম রোগে ভুগে করোনাকে জয় করেছেন অশীতিপর জাহানার খান।

ঠান্ডা, শ্বাসকষ্টজনিত ও ডায়রিয়ার সমস্যা দেখা দেওয়ায় গত ১৮ এপ্রিল তাঁকে ঢাকার ধানমন্ডির পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষার পর জাহানারা খানের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেলে ১৯ এপ্রিল তাঁকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এই দুই দিন তাঁর সঙ্গেই ছিলেন মুনতাসীর মামুন। হাসাপাতালেও পৌঁছে দেন তিনি।

জাহানারা খান প্রথম কয়েক দিন হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্চা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ছিলেন। এরপর অবস্থার উন্নতি হলে তাঁকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে আরও দুবার করোনার পরীক্ষা হয়। দুবারই ফলাফল নেতিবাচক আসায় ৮ মে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। সেদিনই বাসায় ফিরে আসেন।

চিকিৎসা চলার সময়ের স্মৃতি ঠিকঠাক মনে করে বলতে পারছেন না জাহানারা খান। পরিবারের সদস্যদের শুধু বলেন, আমাকে কোথায় রেখে এসেছিলে? সদস্যরা তাঁকে জবাব দেন আপনি হাসপাতালে ছিলেন।

এখন স্বাভাবিক খাবারদাবারই গ্রহণ করছেন জাহানারা খান। ফাতেমা মামুন বলেন, ‘করোনা রোগ সম্পর্কে তিনি (জাহানারা খান) জেনেছেন, কিন্তু কীভাবে তাঁর ও তাঁর ছেলে এ রোগে আক্রান্ত হলেন, সেটা বুঝতে পারছেন না। সুস্থ হওয়ার পর বাড়িতে ফেরার জন্য আকুল হয়ে ছিলেন।’

জাহানারা খানের স্বামী সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য প্রয়াত মেসবাহ উদ্দিন খান। তাঁর তিন ছেলের মধ্যে মুনতাসীর মামুন ও মুতাসীর উদ্দিন খান ঢাকায় থাকেন। ছোট ছেলে মুতাসীম উদ্দিন খান বিদেশে থাকেন। জাহানারা খান মুনতাসীর মামুনের সঙ্গেই থাকেন।

এদিকে অসুস্থতা বোধ করায় মুনতাসীর মামুনকে ৩ মে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৪ মে জানা যায় তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। বতর্মানে তিনি ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে, বর্তমানে স্থিতিশীল।