ব্রি ৮১ ধানে বোরো চাষিদের মুখে হাসি

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার চৌডালা ইউনিয়নের শুক্রবাড়ি মৌজায় ব্রি ৮১ জাতের প্রদর্শনী খেত। ছবি: প্রথম আলো
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার চৌডালা ইউনিয়নের শুক্রবাড়ি মৌজায় ব্রি ৮১ জাতের প্রদর্শনী খেত। ছবি: প্রথম আলো

এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার দুই হাজারেরও বেশি বোরো চাষির মুখে হাসি ফুটিয়েছে ব্রি ৮১ জাতের ধান।ভালো ফলন পেয়ে তাঁরা দারুণ খুশি। এ ধান আবাদ করে এবার বিঘাপ্রতি তাঁদের বাড়তি আয় হবে কমপক্ষে পাঁচ হাজার টাকা।


জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা এ জাতের ধান উদ্ভাবন করেন। এবার উপজেলার যেসব চাষি ব্রি ৮১ জাতের ধান আবাদ করেছেন তাঁরা বাড়তি প্রায় ১০ কোটি টাকা আয় করবেন।


গোমস্তাপুরের রহনপুর পৌর এলাকার কৃষক আক্তারুজ্জামান এবার ছয় বিঘা জমিতে ব্রি ৮১ জাতের ধানের আবাদ করে বিঘাপ্রতি ৩০ মণ করে ফলন পেয়েছেন। এর আগে ভারতীয় জিরা জাতের বা অন্যান্য জাতের ধান আবাদ করে তিনি ২২-২৩ মণ ধান পেতেন। এমন ফলন পেয়ে তিনি দারুণ খুশি। এ ব্যাপারে তাঁর অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি উচ্ছসিত হয়ে প্রথম আলোকে বলেন, 'প্রতিবারই বোরোধান আবাদ করে খরচ উঠিয়ে লাভ করা নিয়ে হতাশায় থাকি। এবার ফলন ফাটাফাটি। ফলনের কারণেই বিঘাপ্রতি কমপক্ষে পাঁচ হাজার টাকা বাড়তি দাম পাওয়া যাবে।বেশিও হতে পারে।'


কৃষক আক্তারুজ্জামান আরও জানান, 'আমি গত বছর পরীক্ষামূলকভাবে এক বিঘায় এই জাতের ধান চাষ করেছিলেন।ফলন হয়েছিল ৩৫ মণ। তাই এবার আবাদ করেছি ছয় বিঘাতে। এবার আবহাওয়া ছিল মেঘলা। বেশি রোদ পায়নি। তাই গত বছরের মত ফলন হয়নি। আমার আশপাশের জমিতেও(নন্দীপুর মৌজা) এজাতের ধানের আবাদ করেছেন চাষিরা। সবার ফলনই ভালো। আমার প্রতিবেশি মো.কালু আবাদ করেছে ১০ বিঘা জমিতে।তাঁর ফলন আমার চেয়ে ভালো।'


এ বিষয়ে গোমস্তাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন বলেন, গত বছর পরীক্ষামূলকভাবে কিছু কৃষককে আবাদ করার জন্য এ ধানের বীজ দেওয়া হয়েছিল। প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ফলন হয়। কারণ উদ্ভাবনের পর ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে বলা হয়, এ ধানের বিঘাপ্রতি গড় ফলন ২২ মণ। কিন্তু এ উপজেলায় প্রতি বিঘায় ৩০, ৩২ ও ক্ষেত্রবিশেষ ৩৫ মণ ফলন দেখে অবাক হই। বিষয়টি ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাই। কর্তৃপক্ষ প্রদর্শনী চাষ করার জন্য ১৫ জন কৃষককে বীজ, সার ও কীটনাশক দেয় বিনা মূল্যে। অন্যদিকে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করা কৃষকদের কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে দু হাজারের বেশি কৃষককে দেওয়া হয়। এবার উপজেলার ১৯ হাজার ৫০০ বিঘা জমিতে এ জাতের ধান আবাদ করা হয়। ফলন হয়েছে বিঘাপ্রতি গড়ে ৩০ মণ। অন্য জাতের ধানের তুলনায় আট থেকে নয় মণ বেশি ধান পাওয়া যায়। অর্থাৎ কৃষকের বিঘাপ্রতি উৎপাদিত ধান থেকে এবার বাড়তি দাম পাবেন কমপক্ষে পাঁচ হাজার টাকা। সেই হিসেবে এবার বাড়তি উৎপাদন হবে ছয় হাজার ২৪০ মেট্রিক টন।টাকার মূল্যে হিসাব করলে দেখা যাবে প্রায় ১০ কোটি টাকা বাড়তি আয় করবে গোমস্তাপুর উপজেলার দুই হাজার বোরোচাষি।


এ ধানের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন বলেন, এ ধানে সেচ ও পরিচর্যা কম লাগে।অন্য ধানের চেয়ে ফলন পেতে সময়ও লাগে কম। ব্রি ২৯ জাতের ধানের তুলনায় ১০-১৪ দিন আগেই এ ধান পাকে। তিনি আরও জানান,গোমস্তাপুর উপজেলার চৌডালা ইউনিয়নের শুক্রবাড়ি মৌজায় বুধবার সকালে একটি প্রদর্শনী খেতের ধান কাটা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক শাহজাহান কবীর, মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপপরিচালক নজরুল ইসলাম প্রমুখ। ধান কাটা হয় মমিনুল ইসলাম নামের এক কৃষকের খেত থেকে।

এ বিষয়ে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক শাহজাহান কবীর প্রথম আলোকে বলেন, 'এ ধান ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করে ২০১৮ সালে। সারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় পরীক্ষামূলক আবাদ করে বিঘাপ্রতি (৩৩ শতক) ২২ মণ ধান পাওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু রাজশাহী ও কুষ্টিয়া অঞ্চলে ফলন বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এ অঞ্চলে ফলন বেশির বিষয়টি তাই নিজের চোখে দেখতে এসেছি। ফলন দেখে আমি ভীষণ খুশি।'