ঘরে থেকেই পরিবারের চার সদস্যের করোনাজয়

করোনামুক্ত হওয়ার পর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে তাঁদের ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানানো হয়। টুমচর গ্রাম, শরীয়তপুর। ছবি: সংগৃহীত
করোনামুক্ত হওয়ার পর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে তাঁদের ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানানো হয়। টুমচর গ্রাম, শরীয়তপুর। ছবি: সংগৃহীত

শরীয়তপুরের প্রথম করোনা রোগে আক্রান্ত হন সদর উপজেলার চিতলিয়া ইউনিয়নের টুমচর গ্রামের গৃহবধূ টুম্পা মাঝি (২৪)। এরপর গত ১৩ এপ্রিল তাঁর বাবা নরেন কীর্তনীয়া (৫০) ও মা শেফালি রানীর (৪৫) শরীরেও করোনা শনাক্ত হয়। এর এক সপ্তাহ পর টুম্পার ভাশুরের ছেলে সাড়ে ছয় বছরের আনিক মাঝির শরীরেও করোনা ধরা পড়ে।

হাসপাতালের চিকিৎসা ছাড়াই এক মাস ঘরে থেকে ওই পরিবারের চার সদস্য করোনা রোগ সেরেছে। বুধবার শরীয়তপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা তাঁদের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে করোনা সেরে যাওয়ার সংবাদ দেন। এ সময় তাঁদের ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানানো হয়।

গ্রামবাসী জানান, সদর উপজেলার টুমচর গ্রামের হরিদাস মাঝির স্ত্রী টুম্পা মাঝির বাবা ও মা নারায়ণগঞ্জ জেলা শহরে থাকতেন। গত মার্চ মাসে টুম্পা তাঁর শিশুসন্তানকে নিয়ে সেখানে যান। নারায়ণগঞ্জে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হলে তাঁর স্বামী হরিদাস মাঝি গত ৯ এপ্রিল তাঁদের নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আসেন। খবর পেয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে তাঁদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ১৩ এপ্রিল স্বাস্থ্য বিভাগ জানতে পারে, টুম্পা, তাঁর বাবা নরেন ও মা শেফালি করোনায় আক্রান্ত। তাঁদের পরিবারসহ আশপাশের পরিবারগুলোকে অবরুদ্ধ করে স্থানীয় প্রশাসন।

টুম্পা মাঝি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কোনো অসুস্থতা বোধ ছিল না। পরিবারের চার সদস্যই সুস্থ ছিলাম। নিয়মিত গরম চা, দুধ ও লেবুর শরবত খেয়েছি। কাউকে কোনো ওষুধ খেতে হয়নি। আমার দুধের শিশুটার জন্য দুশ্চিন্তা হতো। এই এক মাস করোনা নিয়েই তাকে সামলেছি। খাবার খাইয়েছি, কাছে রেখেছি। সবার আশীর্বাদে আর সৃষ্টিকর্তার কৃপায় আমরা এখন করোনামুক্ত হয়েছি। যখন করোনামুক্ত হওয়ার খবরটি শুনেছি, তখন খুব আনন্দ লেগেছে। মনে হয়েছে মুক্ত পৃথিবীতে ফিরেছি। এত সহজে করোনা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে তা ভাবতেও পারিনি।’

টুম্পার স্বামী হরিদাস মাঝি বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। পরিবারের তিন সদস্য করোনা পজিটিভ হওয়ার পর চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। আমার একটি ঘর। সেখানেই সবার সঙ্গে আমাকে থাকতে হয়েছে। অবরুদ্ধ অবস্থার মধ্যে খুব সমস্যায় ছিলাম। ঘরের খাবার শেষ হয়ে গিয়েছিল। প্রথম দিকে কেউ এগিয়ে আসেনি। ১০ দিন পর প্রশাসনের লোক এসে খোঁজ নিয়েছেন, খাদ্যসহায়তা দিয়েছেন। সাত দিন পর ভাতিজারও করোনা শনাক্ত হয়। তখন ঘাবড়ে গিয়েছিলাম।’

ওই পরিবারের নিয়মিত খোঁজ নিতেন চিতলিয়া ইউনিয়নের স্বাস্থ্যকর্মী মোক্তার হোসেন। তিনি বুধবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে আমার ওপর দায়িত্ব ছিল ওই চারজনের খোঁজ নেওয়া। প্রথম দিকে ফোন করে খোঁজ নিতাম। পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে ওই গ্রামে গিয়ে নিয়মিত তাঁদের খোঁজ নেওয়া হয়। তাঁরা কোনো রকম উপসর্গ ছাড়াই করোনা রোগে আক্রান্ত হন এবং হাসপাতালে না গিয়েই সুস্থ হয়েছেন।’

জেলা সিভিল সার্জন আবদুল্লাহ আল মুরাদ প্রথম আলোকে বলেন, শরীয়তপুরের প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়েছেন। এটা অত্যন্ত আনন্দের খবর। তাঁদের মধ্যে একজন শিশু রয়েছে। তাঁদের কোনো রকম উপসর্গ ছিল না। তেমন কোনো চিকিৎসাও নিতে হয়নি। স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে ঘরে ছিলেন। পুষ্টিকর ও ভিটামিন জাতীয় খাবার খেয়েছেন। এক মাসেই তাঁরা করোনামুক্ত হয়েছেন। এখন তাঁদের সাত দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।