কিঞ্চিৎ দিলেও যেন দিতে পারি, কেউ যেন বঞ্চিত না হয়: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৫০ লাখ পরিবারকে নগদ অর্থ সহায়তা কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। ঢাকা, ১৪ মে। ছবি: পিআইডি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৫০ লাখ পরিবারকে নগদ অর্থ সহায়তা কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। ঢাকা, ১৪ মে। ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের দুর্ভোগ, অর্থকষ্ট উল্লেখ করে বলেছেন, ‘প্রতিটা জায়গায় মানুষের কষ্টটা দূর করাটাই লক্ষ্য। সেটাই চাই। এত বেশি মানুষ, হয়তো অনেক বেশি দিতে পারব না। কিন্তু, কিঞ্চিৎ পরিমাণ দিলেও যেন দিতে পারি, কেউ যেন বঞ্চিত না হয়।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৫০ লাখ পরিবারের প্রত্যেককে আড়াই হাজার করে টাকা নগদ অর্থ প্রদান উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রদত্ত ভাষণে এই ঘোষণা দেন।

করোনা পরিস্থিতিতে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের কষ্টের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের একটা দায়িত্ব আছে, আমি ইতিমধ্যে একটা তালিকা করতে বলে দিয়েছি, সকল মসজিদে ঈদ-রমজান উপলক্ষে আমি কিছু আর্থিক সহায়তা দেব, সেই তালিকাটাও আমরা করে দিচ্ছি।’ দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও সাত হাজার কওমি মাদ্রাসাকে ঈদের আগে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও সাত হাজার কওমি মাদ্রাসাকে ঈদের আগে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। সেই পদক্ষেপও আমি নিয়েছি।’


প্রথম পর্যায়ে বিভিন্ন কওমি মাদ্রাসায় সহায়তার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অনেক মাদ্রাসা রয়েছে, যেখানে এতিমখানা আছে, তারা খুব একটা কষ্টের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল। তাদের কথা চিন্তা করে ইতিমধ্যে প্রায় ৬ হাজার ৮৬৫টি কওমি মাদ্রাসায়, যেখানে এতিমখানা আছে, সেখানে আমরা আর্থিক সহায়তা দিয়েছি।’ এ খাতে সরকারের প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোন মাদ্রাসায় কতজন এতিম আছে, আমরা হিসাব নিয়েছি, সে হিসাব অনুযায়ী প্রত্যেক মাদ্রাসায় আমরা টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি। এভাবে বিভিন্ন জায়গায় যারা এতিম-অসহায় যারাই আছে, কোনো শ্রেণিই যেন অবহেলিত না থাকে, সেদিকে লক্ষ রেখে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি’, যোগ করেন তিনি।

ধান কাটায় কৃষকদের সাহায্য করায় ছাত্রলীগকে ধন্যবাদ জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, আওয়ামী লীগ নেতারা ধান কাটায় সাহায্য করায় আজ সারা বাংলাদেশের কৃষকের গোলাভরা ধান। শেখ হাসিনা আরও বলেন, প্রচুর খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়েছে। আল্লাহর রহমতে, অন্তত খাদ্যের কষ্ট হবে না। সেটা আমরা ব্যবস্থা করতে পারব। কিছু নগদ সাহায্য দেওয়া একান্ত অপরিহার্য। আমরা সেটুকু ব্যবস্থা করছি। তিনি বলেন, ‘সেই সঙ্গে যাঁরা এখন বেকার আছেন, তাঁরা কিছু কিছু কাজ করতে পারেন। যেখানে জমিজমা আছে একটা কিছু চাষাবাদ করা, একটু কাজ করা। নিজেও উদ্যোক্তা হয়ে একটু কাজ করেন। নিজে আর্থিকভাবে যেমন আপনারা দাঁড়াতে পারেন বিভিন্ন কাজ করে (এসব কাজ) দেশেরও সহায়তা হতে পারে।’


শেখ হাসিনা বলেন, ‘ফসল তোলার সময় আমাদের যে সমস্যাটা ছিল, যোগাযোগব্যবস্থাটা বন্ধ। তারপর আমরা যখন উদ্যোগ নিলাম, আমাদের প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পদক্ষেপ নিল। কিন্তু সেখানেও লোকবলের অভাব ছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি প্রথমে আমাদের ছাত্রলীগকে আহ্বান জানালাম। যে যেখানে আছে, তাদের নিজের এলাকা-সব জায়গায় তাদের নামতে হবে এবং ধান কাটায় কৃষকের পাশে দাঁড়াতে হবে।মনে রাখতে হবে ধান থেকে চাল হয়। আর এ চাল থেকে কিন্তু ভাত হয়। আমাদের মূল খাদ্য। কাজেই সেই কাজ করতে লজ্জার কিছু নেই, তা গর্বের বিষয়। আমরা যেটা খেয়ে জীবন বাঁচাই, সেই জায়গায় শ্রম দেব না, এই দৈন্যতা যেন কারও মনে না থাকে,’ যোগ করেন সরকারপ্রধান।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় ‘এন-৯৫’ সম্পর্কেও কথা বলেন এবং এটি সাধারণের জন্য নয় বরং করোনা রোগীকে যারা সেবা প্রদান করবেন, তাঁদের পরিধানের জন্যই দেওয়া হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন। এ ছাড়া ঘরে সংক্রমণমুক্ত পরিবেশে থাকলে তিনি মুখের পরিধেয় মাস্ক খুলে রাখার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।

দুই বিশেষায়িত ব্যাংককে ২৫০০ কোটি টাকা

শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে কর্মহীন হয়ে পড়া লোকজন এবং বিদেশফেরত জনগণ যাতে স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারেন, সে জন্য, কর্মসংস্থান ব্যাংকে ২ হাজার কোটি এবং প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে ৫০০ কোটি টাকা আমানত হিসেবে দেবে সরকার।

একই অনুষ্ঠান থেকে তিনি অনলাইন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে স্নাতক ও সমমান পর্যায়ের ২০১৯ সালের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি ও টিউশন ফি বিতরণ কার্যক্রমের ও উদ্বোধন করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, কর্মসংস্থান ব্যাংকের ঋণ প্রদান বৃদ্ধি করার জন্য আরও দুই হাজার কোটি টাকার বিশেষ আমানত দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘যুবক শ্রেণিকে যাতে বেকার হয়ে ঘুরে না বেড়াতে হয়, সে জন্য সেখান থেকে তারা ঋণ নিতে পারবে। নিজেরা ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবে।


প্রবাসীদের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের যারা প্রবাসী, তারা রেমিট্যান্স পাঠায়। তাদের যেন ঘরবাড়ি বিক্রি করে, ঋণ নিয়ে বিদেশে যেতে না হয়, তার জন্য প্রবাসী কল্যাণ নামে আরেকটি বিশেষায়িত ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সেই ব্যাংকেও আমরা আরও টাকা দেব। সেখানে আমরা অতিরিক্ত ৫০০ কোটি টাকা দেব। এর আগে ওখানে আমরা প্রায় ৪০০ কোটি টাকা দিয়েছি।’


প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা জানেন, এখন প্রবাসে কাজের পরিধি সীমিত হয়ে গেছে। সেখানেও বহু মানুষ কাজ হারাচ্ছে এবং অনেকে দেশে ফিরে আসছে। তারা আমার দেশের নাগরিক। তারা ওখানে কষ্ট করুক, সেটা আমি চাই না। তারা ফিরে আসলে ফিরে আসবে। কিন্তু এখানে এসে তারা যেন কাজ করে খেতে পারে, তাদের সেই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাটা আমরা করে দিচ্ছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, তিনি যখন প্রথমবার সরকারে আসেন, তখন দেশের যুবসমাজের বেকারত্বের অভিশাপ দূর করার জন্যই এই কর্মসংস্থান ব্যাংক সৃষ্টি করেন। এ ব্যাংক থেকে শিক্ষিত হোক আর অশিক্ষিত হোক, যেকোনো যুবক বা তরুণ-তরুণী কোনো জামানত ছাড়াই স্বল্প সুদে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারেন। এই ঋণ নিয়ে তাঁরা একা ব্যবসা করতে পারেন অথবা বন্ধুবান্ধব মিলে ব্যবসা করতে পারেন, যোগ করেন তিনি।

ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সংযুক্ত হয়ে শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।