পায়রা বিদ্যুত কেন্দ্রর বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু

পায়রা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র
পায়রা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাকয়লাভিত্তিক পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট বাণিজ্যিক উৎপাদনে এসেছে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতা ৬৬০ মেগাওয়াট হলেও এটি থেকে ৬৮০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে।

কেন্দ্রটির মালিক বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি (বিসিপিসিএল) সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এর মধ্যে দিয়ে দেশের বড় কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হলো।সরকারি প্রতিষ্ঠান নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড ( বাংলাদেশ) ও চীনের ন্যাশনাল মেশিনারি এ·পোর্ট অ্যান্ড ইমপোর্ট কোম্পানি (সিএমসি) এর সমান মালিকানায় পটুয়াখালির পায়রাতে দুটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে বিসিপিসিএল। প্রতিটি কেন্দ্রে ৬৬০ মেগাওয়াটের একটি করে ইউনিট রয়েছে। এ নিয়ে পায়রাতে দুটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ২ হাজার ৬৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। এ কেন্দ্রটি আমদানি করা কয়লা দিয়ে চলবে। কয়লা আসছে ইন্দোনেশিয়া থেকে। চলতি বছর জুনের মধ্যে দ্বিতীয় ইউনিটেরও উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। যদিও করোনা ভাইরাসের প্রকোপের কারণে এটি কিছুটা বিলম্বিত হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।আমদানি করা কয়লা দিয়ে দেশে এটাই প্রথম কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ শেষে বাণিজ্যিক উৎপাদনে গেল। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ প্রথমে যাবে গোপালগঞ্জে। তারপর সেখান থেকে দেশের অন্যান্য জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ হবে।

বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার ফলে বরিশাল বিভাগের ছোট ছোট তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ নেওয়া বন্ধ করবে তারা। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়ে সাশ্রয়ী হবে। তেল চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ কয়লা চালিত কেন্দ্র থেকে অনেক বেশি।জানতে চাইলে বিসিপিসিএল এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এম খোরশেদুল আলম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, কেন্দ্রটি এত দিন পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদন করছিল। এখন বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদন শুরু করেছে। কেন্দ্রটি বাণিজ্যিক উৎপাদনে আনতে এই করোনার মধ্যে চীনা প্রকৌশলীরা অনেক পরিশ্রম করেছেন। করোনা ভাইরাসের মধ্যে এটি দেশের জন্য অনেক বড় সুখবর ।করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও বাণিজ্যক উৎপাদন শুরু করায় বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিসিপিসিএলের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারিদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখা হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রতিশ্রুত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে আন্তরিকভাবে কাজ বিদ্যুৎ বিভাগ। তিনি আরও বলেন, দেশের সব থেকে বড় বিদ্যুত কেন্দ্রটি করোনার প্রকোপের মধ্যেও উৎপাদনে আসায় প্রমাণ হয়েছে উন্নয়নের গতি থেমে নেই। আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তিতে কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছে। পৃথিবীর সর্বাধুনিক এই প্রযুক্তির ব্যবহার বাংলাদেশেই প্রথম নয়, দক্ষিণ এশিয়াতেও প্রথম।

গত ১৩ জানুয়ারি এ বিদ্যুত কেন্দ্রটি জাতীয় গ্রিডে পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুত সরবরাহ শুরু করে। এরপর থেকে নানা পরীক্ষা নিরিক্ষায় সফল হওয়ার পরই বৃহস্পতিবার বাণিজ্যকি উৎপাদন শুরু করতে পারল কেন্দ্রটি।বিদ্যুৎ বিভাগ সরকারি পর্য়ায় দেশে বেশ কয়েকটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ শুরু করেছে। এর মধ্যে বাগেরহাটের রামপাল একটি ও কক্সবাজারের মাতারবাড়ি অন্যতম। এসব কেন্দ্র আমদানি করা কয়লা দিয়ে চলবে। এর মধ্যে প্রথম বাণিজ্যিক উৎপাদনে এলো পায়রা। অন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর নির্মাণ কাজ চলছে।