দিল্লিতে তাবলিগে যাওয়া জালাল উদ্দিনের খোঁজ নেই

জালাল উদ্দিন খান
জালাল উদ্দিন খান

ভারতের দিল্লিতে নিজামুদ্দিন এলাকার তাবলিগ জামাতের মারকাজে গিয়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে আটকে পড়া বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার বাসিন্দা জালাল উদ্দিন খানকে (৬২) নিয়ে উদ্বিগ্ন তাঁর পরিবার। প্রায় এক মাস ধরে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ নেই তাঁর। জালাল উদ্দিনকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সহযোগিতা চেয়ে বগুড়ার জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছেন তাঁর স্ত্রী হাসনা বেগম। গতকাল বৃহস্পতিবার শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মাধ্যমে তিনি এই লিখিত আবেদন করেন।

জালাল উদ্দিন খান বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার আড়িয়া কাটিবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বগুড়া মাঝিড়া সেনানিবাসে বেসামরিক সদস্য হিসেবে ডিপ্লোমা প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি করতেন। ২০১৭ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেছেন। এ বছরের ১৬ জানুয়ারি টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা থেকে কাকরাইল মসজিদে যান। সেখান থেকে তিনি ৮০ দিনের চিল্লা দিতে ১২ জনের একটি দলের সঙ্গে ভারতের দিল্লিতে মারকাজ নিজামুদ্দিনে যান। ১১ এপ্রিল বেনাপোল সীমান্ত হয়ে ট্রেনে তাঁর দেশে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু এক মাস ধরে তাঁর সঙ্গে পরিবারের কোনো যোগাযোগ নেই। তাঁর অবস্থান সম্পর্কেও কোনো তথ্য নেই পরিবারের কাছে।

স্ত্রী হাসনা বেগম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ১৯ জানুয়ারি রাজধানীর কাকরাইল মারকাজ মসজিদ থেকে ১১ জনের সঙ্গে তাঁর স্বামী দিল্লির মারকাজ নিজামুদ্দিনের জামাতে অংশ নিতে ভারতে রওনা দেন। সেখান থেকে কয়েক দফা পরিবারের সঙ্গে কথাও হয়। সর্বশেষ ১৭ এপ্রিল তিনি (জালাল উদ্দিন) একটি ভয়েস টেক্সট পাঠান। সেখানে স্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘যদি না ফিরি তবে কিছু করার চেষ্টা করবা।’ এরপর থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। এ অবস্থায় তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা, উৎকণ্ঠা এবং উদ্বিগ্ন।

কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী শারমিন সুলতানা। তিনি বলেন, ‘বাবার জন্য খুব ভয় ও উৎকণ্ঠা হচ্ছে। শুনেছি তাবলিগ জামাতের বাংলাদেশি ওই দলের দুই সদস্য করোনাভাইরাস পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। তবে বাবার সঙ্গে যত দিন যোগাযোগ ছিল তত দিন পর্যন্ত তিনি সুস্থ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন।’

পরিবারের ভাষ্যমতে, যোগাযোগ থাকা অবস্থায় জালাল উদ্দিন পরিবারকে জানিয়েছেন, বিভিন্ন রাজ্য ঘুরে ১৭ মার্চ তাঁরা উত্তর প্রদেশের শামলি জেলায় পৌঁছান। সেখানে একটি তাবলিগ মসজিদে অবস্থানকালে দুজনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হন। এই দুজনকে আইসোলেশনে নেওয়া হয়। এরপর জালাল উদ্দিনসহ ১০ জনকে ভাওয়ান শহরের একটি সরকারি কলেজ ভবনে প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। এ সময় তাবলিগ জামাতের বাংলাদেশি ১২ জনের বিরুদ্ধে পর্যটক ভিসা নিয়ে ভারতে প্রবেশ করে বেআইনিভাবে ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ার অভিযোগ তুলে ফরেনার্স অ্যাক্টে মামলা করে উত্তর প্রদেশ রাজ্যের পুলিশ।

জানতে চাইলে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা পারভীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভারতে তাবলিগ জামাতে গিয়ে নিখোঁজ জালাল উদ্দিন খানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে তাঁর স্ত্রীর আবেদন হাতে পেয়েছি। দাপ্তরিক নিয়ম অনুযায়ী এটি নথিভুক্ত করে আগামী কর্মদিবসে জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হবে।’

জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, আবেদন হাতে পেলে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।