অসহায়দের জন্য 'মানবতার আধার' সংগ্রহশালা

সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মৌলভীবাজার সদর থানা প্রাঙ্গণে দুস্থদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করছে পুলিশ। ছবি: প্রথম আলো
সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মৌলভীবাজার সদর থানা প্রাঙ্গণে দুস্থদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করছে পুলিশ। ছবি: প্রথম আলো

করোনা সংকট কমবেশি সবাইকে বিপদে ফেলেছে। কিন্তু এই বিপদে সবচেয়ে বেশি কাবু হয়ে পড়েছেন যাঁরা দিন আনে দিন খান তাঁরা। এঁদের মধ্যে হয়তো কেউ বিভিন্ন উৎস থেকে একাধিকবার খাদ্যসহায়তা পাচ্ছেন। আবার অনেকে খাদ্যসহায়তা থেকে একেবারে বাদ পড়ছেন। এ রকম অসহায় মানুষের কাছে নিয়মিত খাদ্যসহায়তা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ।

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অভাবী মানুষ যাতে খাদ্যসহায়তা থেকে বঞ্চিত না হন, সে জন্য জেলার প্রতিটি থানায় গড়ে তোলা হচ্ছে ‘মানবতার আধার’ নামের সংগ্রহশালা। গতকাল বৃহস্পতিবার মৌলভীবাজার সদর মডেল থানায় ‘মানবতার আধার’ সংগ্রহশালার কার্যক্রম উদ্বোধন করেন পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ। এ সময় অসহায় পরিবারগুলোর মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়।

জেলা পুলিশ সূত্রে আরও জানা গেছে, করোনা সংকটে নাজুক অবস্থায় পড়েছেন শ্রমজীবী শ্রেণির মানুষ। এঁদের মধ্যে রিকশাচালক, দিনমজুর, ভিক্ষুক, ফেরিওয়ালা, চা-বিক্রেতারা আছেন। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে তাঁদের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে একই ব্যক্তি বিভিন্ন উৎস থেকে একাধিকবার সহযোগিতা পাচ্ছেন আবার কেউ কেউ একেবারেই কোনো সহায়তা পাচ্ছেন না। লোকলজ্জার কারণেও কিছু মানুষ প্রকাশ্যে এই সহযোগিতা নিতে চান না। এর বাইরেও কিছু মানুষ আছেন, যাঁদের কাজের ক্ষেত্র মৌলভীবাজার জেলা, কিন্তু তাঁরা অন্য জেলার ভোটার। এ রকম অনেক মানুষ ঘর থেকে বের হতে না পেরে অভাবে দিন কাটাচ্ছেন। স্থানীয় না হওয়ায় সরকারি-বেসরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ করা হলেও এ রকম কিছু মানুষ ত্রাণের তালিকা থেকে বাদ পড়ছেন। এই বাস্তবতায় অভাবী মানুষের কাছে সহায়তা পৌঁছানোর জন্য জেলা পুলিশ কিছু ইতিবাচক উদ্যোগ নিয়েছে।

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অসহায়দের কাছে সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রতিটি বিট পুলিশিংয়ের শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামো কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কারণ বিট পুলিশিংয়ে প্রতিটি ওয়ার্ড, ইউনিয়নের জন্য একজন উপপরিদর্শক (এসআই) বা সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আছেন। নির্ধারিত কর্মকর্তা সপ্তাহে এক বা দুই দিন সেখানে উপস্থিত থেকে পুলিশিং কার্যক্রম সম্পন্ন করেন। এই সাংগঠনিক কাঠামোকে ব্যবহার করে বিট কর্মকর্তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তি, কমিউনিটি পুলিশের সদস্য, স্বেচ্ছাসেবক ও সাংবাদিকদের সমন্বয়ে কোনো প্রকার সাহায্য পাননি, এমন ব্যক্তির তালিকা তৈরি করবেন। সাহায্য পাননি ইউনিয়নভিত্তিক এমন মানুষের আনুমানিক সংখ্যা জেলা পুলিশের ফেসবুক আইডিতে তুলে ধরে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নজরে নিয়ে আসা হবে।

জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, পুলিশ তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী অভাবী মানুষের কাছে সহায়তা পৌঁছে দেবে। এ ছাড়া ব্যক্তিগতভাবে তালিকা অনুযায়ী যাঁরা সাহায্য করতে চান, তাঁদের যানবাহনসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া হবে। পুলিশের মাধ্যমে খাদ্যসামগ্রী দিতে চাইলে তা সংগ্রহ ও বিতরণ করা হবে। তবে এই করোনা সংকটে নিয়মিত এ রকম অভাবী মানুষকে সহায়তা করার জন্য জেলার সাতটি থানাতেই গড়ে তোলা হয়েছে ‘মানবতার আধার’ সংগ্রহশালা। এই সংগ্রহশালায় যেকোনো ব্যক্তি খাদ্যসামগ্রী এনে দিতে পারবেন। এখান থেকে অভাবী মানুষের কাছে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হবে। অভাবী মানুষ যাঁরা থানায় আসছেন, তাঁদের এখান থেকে দেওয়া হচ্ছে খাদ্যসামগ্রী। এ ছাড়া প্রত্যন্ত এলাকার যাঁরা থানায় ফোন করছেন, তাঁদের বাড়িতেও ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।


মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জিয়াউর রহমান, সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন ও পরিদর্শক (তদন্ত) পরিমল দেবের তত্ত্বাবধানে শুধু মৌলভীবাজার সদর মডেল থানা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পাঁচ হাজার অসহায় পরিবারকে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়েছে।

‘মানবতার আধার’ সংগ্রহশালার কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে পুলিশের নিয়মিত কাজের পাশাপাশি খাদ্যসামগ্রী বিতরণ হচ্ছে একটি মানবিক উদ্যোগ। তালিকা করে জেলার অভাবী পরিবারগুলোকে ‘মানবতার আধার’ সংগ্রহশালা থেকে খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হচ্ছে। জেলার সাতটি থানায় এসে অনেক হতদরিদ্র খাদ্যসামগ্রী নিয়ে যাচ্ছেন।