হাসপাতালের ৮৪% করোনা রোগীর লক্ষণ মৃদু

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

হাসপাতালে ভর্তি করোনা রোগীদের ৮৪ শতাংশের লক্ষণ মৃদু। মারাত্মক অসুস্থতা নিয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ দশমিক ৩ শতাংশ রোগী। করোনা রোগীর জন্য নির্ধারিত রাজধানীর ১১টি হাসপাতাল এবং ঢাকাসহ আট বিভাগের হাসপাতালের তিন দিনের সরকারি হিসাব বিশ্লেষণ করে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে ১১ থেকে ১৩ মে—এই তিন দিনের তথ্য সংগ্রহ করেছে প্রথম আলো। এতে এক দিনে ছাড়পত্র পেয়েছেন কত রোগী, সেই তথ্যও আছে। তবে প্রতিদিনের সংবাদ ব্রিফিংয়ে সুস্থ হওয়ার যে তথ্য দেওয়া হয়, তার সঙ্গে এর বড় ফারাক আছে।

রোগীর লক্ষণ সম্পর্কে জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৈশ্বিক প্রবণতাও এ রকম। বলা হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ রোগী মৃদু লক্ষণযুক্ত থাকে।’ তিনি বলেন, কোনো দিন রোগী বাড়লে বা কমলে শতাংশের ক্ষেত্রে কিছু হেরফের হতে পারে।

রাজধানীর কুয়েত–বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল
কলেজ হাসপাতাল, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাসপাতাল, রিজেন্ট হাসপাতাল (উত্তরা), রিজেন্ট হাসপাতাল (মিরপুর), সাজেদা ফাউন্ডেশন হাসপাতাল (কাঁচপুর), ঢাকা মহানগর হাসপাতাল, মিরপুর নীলকুটি হাসপাতাল ও সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের তথ্য নিয়মিত সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ ছাড়া আট বিভাগের সব জেলার তথ্যও সংগ্রহ করা হচ্ছে। রাজধানীতে ১৩ মে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি ছিল রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাসপাতালে (১ হাজার ১৬ জন)। আর একই দিনে সবচেয়ে কম রোগী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে (১০ জন)।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র বলছে, হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিনই রোগী বাড়ছে। ৭ মে হাসপতালগুলোতে ২ হাজার ৬৬৪ জন রোগী ভর্তি ছিল। ১১ মে তা বেড়ে হয় ৩ হাজার ১৭২ জন। ১১ থেকে ১৩ মে—এই তিন দিনে গড়ে ৩ হাজার ৩৩৩ জন রোগী ভর্তি ছিল।

সংক্রমণের ধরন

তিন দিনের (১১ থেকে ১৩ মে) হিসাবে দেখা যাচ্ছে, গড়ে হাসপাতালে ৩ হাজার ৩৩৩ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, এঁদের মধ্যে মৃদু লক্ষণযুক্ত ছিল ২ হাজার ৮০৫ জন বা ৮৪ দশমিক ১ শতাংশ। মাঝারি ও মারাত্মক উপসর্গ নিয়ে ভর্তি ছিলেন যথাক্রমে ৩১৮ ও ১৪৩ জন। এ ছাড়া ভেন্টিলেটরে ছিলেন ২০ জন রোগী। আর কিডনির সমস্যা নিয়ে ডায়ালাইসিস সেবা নিচ্ছিলেন ৪৭ জন। মোট রোগীর মধ্যে ৭০ জনকে আলাদা করা যায়, যাঁরা করোনার পাশাপাশি অন্য অসুখেও আক্রান্ত ছিলেন।

>

করোনা রোগীর জন্য নির্ধারিত রাজধানী ঢাকাসহ আট বিভাগের হাসপাতালের তিন দিনের তথ্য।

আইইডিসিআরের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা বলেন, ‘শুধু মারাত্মক উপসর্গের রোগীদের মধ্যেই যে একাধিক রোগ থাকবে, তা নয়। মৃদু লক্ষণযুক্ত রোগীরও অন্য রোগ থাকতে পারে।’

করোনাভাইরাসের বিষয়ে গবেষণা দুনিয়াজুড়ে চলছে। এর সংক্রমণক্ষমতা ও আক্রান্ত হওয়ার পর রোগের উপসর্গ নিয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে এখনো পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। ১৪ এপ্রিল প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কৌশলপত্রে বলা হয়েছিল, ৪০ শতাংশের রোগের লক্ষণ থাকে মৃদু, ৪০ শতাংশের মাঝারি। ১৫ শতাংশ রোগীর উপসর্গ থাকে মারাত্মক। আর বাকি ৫ শতাংশ রোগীর পরিস্থিতি থাকে জটিল।

হিসাবে অমিল

একটি ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বুলেটিনে প্রচার করা তথ্য ও সমন্বিত নিয়ন্ত্রণকক্ষের তথ্যের মধ্যে পার্থক্য পাওয়া গেছে। বুলেটিনের তথ্য সংগ্রহ ও সমন্বয়ের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বলেছেন, তারাঁ ২৪ ঘণ্টার তথ্য ব্যবহার করেন। সকাল ৮টা থেকে পরদিন সকাল ৮টা। আর অভ্যন্তরীণ ব্যবহার ও পরিস্থিতি বিশ্লেষণের জন্য তথ্য সংগ্রহ করা হয় বিকেল চারটা পর্যন্ত। দুটি কাজই হয় রাজধানীর মহাখালীর নতুন স্বাস্থ্য ভবনের নিচতলায় চালু হওয়া সমন্বিত নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে।

এখন প্রতিদিন বেলা আড়াইটায় করোনাবিষয়ক সংবাদ বুলেটিন পাঠ করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা। ১১, ১২ ও ১৩ মে তিনি করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা বলেছিলেন যথাক্রমে ১১, ১১ ও ১৯ জন। অর্থাৎ ওই তিন দিনে করোনায় মারা গিয়েছিলেন মোট ৪১ জন। অভ্যন্তরীণ ব্যবহার ও পরিস্থিতি বিশ্লেষণের জন্য তৈরি করা ছকেও মৃত্যু সংখ্যা একই আছে।

সংখ্যায় মিল নেই শুধু রোগীর ছাড়পত্রের ক্ষেত্রে। বুলেটিন অনুযায়ী, ওই তিন দিনে রোগী সুস্থ হয়ে বাড়িতে গেছেন ৭১১ জন। আর অভ্যন্তরীণ ব্যবহার ও পরিস্থিতি বিশ্লেষণের জন্য করা হিসাব বলছে, এই সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি—মোট ১ হাজার ৫৪৯ জন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘বুলেটিনের তথ্যকেই সঠিক বলে ধরে নিতে হবে।’ অন্যদিকে নাসিমা সুলতানা বলেন, বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলবেন।