করোনাজয়ী চিকিৎসক দম্পতি বললেন, মনোবল হারানো যাবে না

চিকিৎসক দম্পতি ওসমান হায়দার ও সুমাইয়া আফরিন
চিকিৎসক দম্পতি ওসমান হায়দার ও সুমাইয়া আফরিন

স্বামী-স্ত্রী দুজনই চিকিৎসক। কোভিড-১৯–এ প্রথমে আক্রান্ত হন স্বামী, এরপর স্ত্রী। তাঁদের একসঙ্গে থাকতে হয়েছে আইসোলেশনে। করোনাকালে একে অপরের কাছ থেকে পেয়েছেন সাহস ও শক্তি। করোনাজয়ী এই চিকিৎসক দম্পতি এখন আছেন হোম কোয়ারেন্টিনে। শেষ হলে আবার কাজে ফিরবেন এমন আশা তাঁদের।

আবুল বাশার মোহাম্মদ ওসমান হায়দার মজুমদার সুনামগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতলের জরুরি চিকিৎসা কর্মকর্তা। তাঁর স্ত্রী সুমাইয়া আফরিন চিকিৎসা কর্মকর্তা হিসেবে আছেন বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তাঁরা বসবাস করেন বিশ্বম্ভরপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কোয়ার্টারে।

কথা বলে জানা গেল, ওসমান হায়দারের অ্যাজমার সমস্যা আছে। তাই করোনো–পরিস্থিতি শুরুর পর থেকেই তিনি বাড়তি সতর্ক ছিলেন। কিন্তু কাজ করেন জরুরি বিভাগে। প্রতিদিন অনেক রোগীর সংস্পর্শে যেতে হয়। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় তাঁর শারীরিক দুর্বলতা দেখা দেয়। এরপর হালকা জ্বর। সেই সঙ্গে সর্দি, কাশি ও গলাব্যথা। তাঁর সন্দেহ বাড়ে। নমুনা পরীক্ষায় গত ২৪ এপ্রিল জানা যায়, তিনি করোনা পজিটিভ। ওই দিনই স্ত্রী সুমাইয়ার নমুনা দেওয়া হয়। তাঁরও কিছু উপসর্গ ছিল। ২ মে জানা গেল, তিনিও আক্রান্ত। এরপর থেকে তাঁরা আইসোলেশনে ছিলেন। তাঁদের ভয় ছিল শ্বাসকষ্ট নিয়ে। কিন্তু এই সমস্যা তাঁদের হয়নি।

ওই দম্পতি বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে তাঁদের জন্য অক্সিজেন এবং জরুরি প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্স সেবার ব্যবস্থা ছিল। এ জন্য তাঁরা জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ শামস উদ্দিন, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদসহ সহকর্মী ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান।

কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে তাঁর জন্য পরামর্শ কী, প্রশ্নে তাঁরা বলেন, আক্রান্ত হলে কোনোভাবেই মনোবল হারানো যাবে না। মানসিক দুর্বলতাকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। মনে সাহস রাখতে হবে। সচেতন ও সর্তক থাকতে হবে। এই পরিস্থিতিতে কখন কী করা দরকার, সেটি খেয়াল রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

ওসমান হায়দার বলেন, করোনার বিষয়টি সবার কাছে নতুন। এ নিয়ে কিছুটা ভয় আছে। কিন্তু ভয় নয়, দরকার সচেতনতা। বাড়ির বয়স্ক লোকজনের সতর্কতার বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর যখন যে উপসর্গ ছিল, সেটির জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ খেয়েছেন। পাশাপাশি খাবারের তালিকায় প্রোটিন, শাকসবজি, ভিটামিন সি–জাতীয় খাবার ছিল বেশি। চিকিৎসক হওয়ায় একে অপরের সঙ্গে পরামর্শ করেছেন। পরিবারের অন্য সদস্যরাও সহায়তা করেছেন।

সুমাইয়া বলেন, কেউ আক্রান্ত হলে অবশ্যই পরিবার থেকে আলাদা থাকতে হবে। এতে ভেঙে পড়ার কিছু নেই। সচেতন ও সতর্ক থাকাটা জরুরি। শ্বাসকষ্ট হলে অব্যশই হাসপাতালে যেতে হবে।

সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন মোহাম্মদ শামস উদ্দিন বলেন, সুনামগঞ্জে এ পর্যন্ত ৬৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে তিনজন চিকিৎসক রয়েছেন। এই তিনজনের মধ্যে দুজন চিকিৎসক এখন সুস্থ। সুনামগঞ্জে সব মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ২১ জন। তাঁর প্রত্যাশা, অন্যরাও সুস্থ হয়ে উঠবেন।