সাড়ে ৫ হাজার রোহিঙ্গা কঠোর নজরদারিতে

কক্সবাজারের মধুরছড়া আশ্রয়শিবিরে পাহাড়ের ঢালুতে ঝুঁকিপূর্ণ রোহিঙ্গা বসতি। প্রথম আলো
কক্সবাজারের মধুরছড়া আশ্রয়শিবিরে পাহাড়ের ঢালুতে ঝুঁকিপূর্ণ রোহিঙ্গা বসতি। প্রথম আলো

কক্সবাজারের উখিয়ার লম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরের এফ ব্লকের ১ হাজার ২৭৫ রোহিঙ্গা পরিবারকে গতকাল শুক্রবার কঠোর লকডাউনে আনা হয়েছে। এসব পরিবারের প্রায় সাড়ে ৫ হাজার রোহিঙ্গাকে ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। 

বসতি ছেড়ে কোনো রোহিঙ্গা যেন এদিক-সেদিক যাতায়াত করতে না পারেন, সে জন্য সেখানে নিরাপত্তাব্যবস্থা কঠোর করেছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) কার্যালয়।

এদিকে গতকাল কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ল্যাবে আরও তিন রোহিঙ্গার নমুনায় করোনার জীবাণু পাওয়া গেছে। কিন্তু সিভিল সার্জন মাহবুবুর রহমান বলেন, সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি দুই রোহিঙ্গার পরিচয় নিশ্চিত করতে পেরেছেন। ল্যাবের তথ্য অনুযায়ী, এ নিয়ে করোনায় আক্রান্ত রোহিঙ্গার সংখ্যা ৪।

বৃহস্পতিবার শিবিরের একজন রোহিঙ্গা পুরুষের নমুনায় করোনা জীবাণু পাওয়া যায়। ওই দিন সন্ধ্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের শিবির থেকে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আইসোলেশন সেন্টারে আনা হয়। গতকাল আক্রান্ত ব্যক্তির ছয় সদস্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।

বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাস করছে।

আরআরআরসি কার্যালয়ের প্রধান স্বাস্থ্য সমন্বয়কারী আবু তোহা এমআরএইচ ভুঁইয়া গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, গত ৮ এপ্রিল থেকে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবির লকডাউনে আছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার একজন রোহিঙ্গার করোনা শনাক্ত হওয়ায় আশপাশে বসবাসরত আরও ১ হাজার ২৭৫ পরিবারের ৫ হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে কঠোর লকডাউনে আনা হয়েছে। ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা অবস্থায় কোনো রোহিঙ্গা ঘর থেকে বের হতে পারবেন না। খাবারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ঘরে পৌঁছে দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর অবস্থানে আছে।

আবু তোহা বলেন, বৃহস্পতিবার কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে দুজন রোহিঙ্গার করোনা শনাক্ত হয়েছে বলে বলা হয়েছিল। এর মধ্যে একজন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির বাসিন্দা। বড়ুয়া সম্প্রদায়ের ওই ব্যক্তি দ্রুত সেবা পাওয়ার আশায় রোহিঙ্গা শরণার্থী পরিচয় দিয়ে শিবিরে এমএসএফ হাসপাতালে এসে পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন। তাঁকে বান্দরবানের সিভিল সার্জনের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে। তাঁর বাড়িসহ আশপাশের কয়েকটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। 

কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অনুপম বড়ুয়া বলেন, গতকাল এই ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৮৪ জনের। এর মধ্যে ২১ জনের নমুনায় করোনা জীবাণু পাওয়া গেছে। এর মধ্যে তিনজন রোহিঙ্গা। গতকাল পর্যন্ত কক্সবাজারে করোনা রোগীর সংখ্যা ১৫৭। এর মধ্যে চারজন রোহিঙ্গা।

সিভিল সার্জন মাহবুবুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরে করোনা ধরা পড়ায় ঝুঁকি বেড়েছে। ঝুঁকি মোকাবিলায় নমুনা সংগ্রহের কাজ বাড়ানো হচ্ছে। আরও রোহিঙ্গার মধ্যে করোনা ছড়িয়ে পড়লে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে।