কয়েকটি দিন ফিরে পাওয়ার সাধ

>করোনাভাইরাস পাল্টে দিয়েছে সবার জীবনের বাস্তবতা। আমরা এখানে শুনছি পাঠকের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার কথা। তাঁরা লিখছেন পরিবারের আনন্দ-বেদনাভরা গল্প। শোনাচ্ছেন এ সময়ের কোনো মানবিক সাফল্যের কাহিনি। প্রথম আলো মানুষের সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছে পাঠকের গল্প। দেশ বা প্রবাস থেকে আপনিও লিখুন আপনার অভিজ্ঞতার কথা। লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]

শুক্র ও শনিবার আমার ছুটি। এ দুই দিন বাসায় থাকি। রেস্ট নিই। দাওয়াত থাকলে সেখানে যাই। কোনো সময় আত্মীয়ের বাসায় যাই। কখনো হয়তো শপিংয়ে যাই। এসব বিষয়ে স্ত্রী সঙ্গে থাকে। তবে আমি ঘরকুনো মানুষ। ঘরে থাকতেই ভালোবাসি।

এবার কিন্তু টানা ঘরে বসে আছি। করোনাভাইরাস সবকিছু স্থবির করে দিয়েছে। রোববার থেকে বৃহস্পতিবার সপ্তাহের পাঁচ দিনে অফিসের ব্যস্ততা নেই।

আমার বাসা ধানমন্ডি। অফিস গুলশানে। তাই ট্রাফিক জ্যাম এড়াতে আগেভাগে অফিসে রওনা করতে হয়। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে শেভ করা, গোসল করা। তারপর রেডি হয়ে নাশতা করে অফিসের পথ ধরি। বেশ কিছুদিন হলো এই রুটিনে নেই। এখন ঘুমানো বা ওঠার কোনো তাড়া নেই। এখন টিভিতে খবর দেখে ও পত্রিকা পড়ে সময় কাটে। অফিসের কোনো কাজ থাকলে ফোনে ও মেইলে তা শেষ করি।

মোবাইল ফোন ও অনলাইনই যেন আমাদের জীবন সচল রেখেছে। এবার এসবের ওপর নির্ভর করেই আমাদের কাটাতে হয়েছে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন। এমন নীরব-নির্জন বর্ষবরণ আমার জীবনে আর দেখিনি। এ যেন ছিল এক অচেনা পয়লা বৈশাখ। কোথাও কোনো উৎসব ছিল না। চারদিকে শুধু ভয় ও আতঙ্ক। সবাই বাসায় বসে কাটিয়ে দিয়েছে বছরের প্রথম দিন। আগের বছর কি তা আমরা ভাবতে পেরেছিলাম?

এটাও কি কখনো ভেবেছি, আমেরিকায় যেসব আত্মীয়স্বজন আছে, তাদের নিয়ে এত টেনশনে থাকতে হবে। আমার মেয়ে থাকে কলারোডায়। ছেলে ক্যালিফোর্নিয়ায়। ওদের দূরে থাকা বাবা-মা হিসেবে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের কষ্ট দেয়। কিন্তু পড়াশোনার জন্য আমরাই তো ওদের সেখানে পাঠিয়েছি। তাই সাময়িক দূরে থাকা মেনে নিয়েছি। কিন্তু করোনাভাইরাস সব দেশকে এককাতারে এনে নামিয়েছে। সারা পৃথিবীতেই লকডাউন। ঘরবন্দী জীবন। আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যুর হিসাব করা। এই চলছে।

এভাবেই এবার এল রমজান মাস। রোজার শেষে আসবে ঈদ। কিন্তু এবার আমরা উৎসব আসলে করতে পারব? দুঃখভারাক্রান্ত মনে বৈশাখ চলে গেছে আমাদের। রোজার শুরুও একইভাবে। ঈদ কি আর আনন্দদায়ক থাকবে?

তারপরও আনন্দঘন দিন আসবে—এ আশা নিয়ে আছি। করোনার সময়ে আরও একটি আশা রয়েছে মনের ভেতরে। এ যাত্রায় যদি টিকে যাই, তবে তা শুধু সম্ভবপর হবে। ছেলেমেয়েরা পড়া শেষে আমাদের মাঝে ফিরবে। পরিবারের চারটি মানুষ একই সঙ্গে নববর্ষ উদযাপন করব। একই সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করব। এমন কিছুদিন ফিরে পেতে, করোনার সময়ে ঘরবন্দী জীবনে আছি। এসব সাধ পূরণ হবে কি না, যদিও তার কিছু আসলে আমার হাতে নেই।

*লেখক: হেড অব পাবলিক রিলেশনস অ্যান্ড মিডিয়া ডিভিশন, সিটি ব্যাংক