মানবিক সহায়তার খসড়া তালিকায় স্বজনপ্রীতির অভিযোগ

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত হতদরিদ্রদের জন্য মানবিক সহায়তার খসড়া তালিকায় প্রকৃত দুস্থরা বাদ পড়ছে। ইউপি সদস্য ও সরকারদলীয় নেতারা প্রভাব খাটিয়ে ঢোকাচ্ছেন নিজেদের পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের। যাঁদের অনেকেই স্বাবলম্বী বলে অভিযোগ উঠেছে। মানবিক সহায়তার তালিকায় দুস্থদের বাদ দিয়ে স্বজনপ্রীতির এই অভিযোগ উঠেছে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার জিন্নাগড় ইউনিয়নে।

ইউনিয়নটির ৩ নম্বর ওয়ার্ডে তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য ৬৫ জনের নাম চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে ৫৫টি নাম অন্তর্ভুক্তির দায়িত্ব পেয়েছেন ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি বাবুল পণ্ডিত ও সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন পেয়েছেন ১০টি নাম। ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতারা নিজেদের বাড়ি ও আশপাশের আত্মীয়স্বজনের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

ওয়ার্ডবাসীর অভিযোগ, ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের আনাচকানাচে অনাহারী অসহায় অনেক ঘরবন্দী মানুষ আছেন, তাঁদের নাম তালিকায় আসেনি। তালিকার ৫০ শতাংশ নাম স্বাবলম্বী লোকজনের। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রুহুল আমিন বরাবর এমন অভিযোগ দাখিল করলে তিনি পাওয়ার যোগ্য নন এমন মাত্র দুটি নাম বাতিল করেছেন বলে জানান।

একই অভিযোগ পাওয়া গেছে অন্য উপজেলাতেও। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভোলা জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগ আমরাও পেয়েছি, এগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। প্রথমে জনপ্রতিনিধিরা তালিকা করেছেন। ইউএনওরা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের দিয়ে প্রতিটি নাম যাচাই-বাছাই করছেন। বাছাইয়ে সহায়তা পাওয়ার যোগ্য নয় এমনদের বাদ দেওয়া হচ্ছে।’

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, তবে এক পরিবারে চার ভাই—চারজনই সহায়তা পেতে পারেন। যদি তাঁরা চার পাতিলে (খানা) খান, আর চারজনই গরিব-দিনমজুর হন। দেখা গেছে, এক ইউনিয়নের মেম্বারের ছেলে রিকশা চালান, বাবার সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই, তাহলে তিনিও পাওয়ার যোগ্য।

ইউপি সদস্য একচেটিয়াভাবে তাঁর বাড়ির আশপাশের লোক ও স্বজনদের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করছেন, গ্রামের অধিকতর দরিদ্ররা বাদ পড়ছেন—এমন প্রশ্ন করলে ডিসি বলেন, ‘ভোলা জেলায় ৫৫ হাজার নাম এসেছে। সবাই তো আর তালিকায় আসবেন না। এদিকে প্রশাসনের লোকজন গ্রামের সবাইকে চেনেন না। প্রকৃত অভাবী-অসহায়দের খুঁজে বের করা সত্যিই জটিল। এমন লোকদের তথ্য জানেন ইউপি সদস্য। এখন তাঁরা বারবার চেনা মুখদের ঘুরেফিরে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করছেন, তাঁরা দায়িত্বটা সঠিকভাবে পালন করছেন না। এ হলো সমস্যা।’

তালিকার তথ্য ও স্থানীয় ব্যক্তিদের অভিযোগ থেকে জানা যায়, চরফ্যাশন উপজেলার জিন্নাগড় ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আব্দুল মান্নান বসবাস করেন পণ্ডিত বাড়িতে। ওই বাড়ির ১১ জন এবং আব্দুল মান্নানের স্বজন ফরাজী বাড়ির ৩ জন, দুলামিয়া বাড়ির ২ জনসহ ১৮ জনের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এটি করেছেন ইউপি সদস্য মান্নান।

আরও দেখা যায়, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির বাড়িসহ তাঁদের একাধিক স্বজনের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। যাঁদের ৫০ ভাগ সহায়তা পাওয়ার অযোগ্য। এ বিষয়ে ইউপি সদস্য মান্নান বলেন, তিনি একাই পণ্ডিত বাড়ির বাসিন্দা না, আওয়ামী লীগ সভাপতি বাবুল পণ্ডিতও এ বাড়ির বাসিন্দা। আওয়ামী লীগ সভাপতি-সম্পাদকসহ তাঁরা তিনজনে মিলে তালিকা করেছেন। পরে ইউএনও প্রতিনিধি তদন্ত করে সেখান থেকে ২-৩ জন বাদ দিয়ে অন্য নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

জানতে চাইলে চরফ্যাশনের ইউএনও বলেন, তিনি অভিযোগ পেয়েছেন, ১৩ জন স্বাবলম্বীর নাম তালিকায় এসেছে, যাঁরা ইউপি সদস্যের স্বজন। এই অভিযোগ তদন্ত করে দুজন পাওয়ার যোগ্য নয় বলে তাঁদের বাদ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সিরাজ গোলদার তাঁর স্ত্রী বিবি মরিয়াম, ছেলে আ. অহিদ ও আ. শহিদ এবং পুত্রবধূ জামেলা খাতুনকে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে ইউপি সদস্য সিরাজ গোলদার পুরো অভিযোগ সত্য নয় দাবি করে বলেন, তিনি শুধু অহিদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন।