ভালো নেই দক্ষিণের ৭০০ পাটিকর পরিবার

করোনাভাইরাসের হানায় থমকে গেছে দক্ষিণাঞ্চলের পাটিকরদের পাটি বোনা। প্রথম আলো ফাইল ছবি
করোনাভাইরাসের হানায় থমকে গেছে দক্ষিণাঞ্চলের পাটিকরদের পাটি বোনা। প্রথম আলো ফাইল ছবি

করোনাভাইরাসের কারণ দৃষ্ট দুর্যোগে থমকে গেছে দক্ষিণাঞ্চলের পাটিকরদের জীবন-জীবিকা। দুই মাস ধরে পাটি বিক্রি বন্ধ থাকায় মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন প্রায় ৭০০ পাটিকর পবিারের অন্তত তিন হাজার মানুষ।

বরিশালের বাকেরগঞ্জ, ঝালকাঠির নলছিটি, রাজাপুর, পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলায় এসব পাটিকর পরিবারের বাস।

শুক্রবার বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার কাঁঠালিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বিক্রি না থাকলেও প্রক্রিয়াজাত করা পাটি বুনে সময় পার করছেন পাটিকরেরা। গ্রামটিতে পারিবারিক ঐতিহ্য ধারণ করে পাটি বুননের কাজ করে চলেছে দেড় শ পরিবার। এই গ্রামের পাটিকর অঞ্জনা রানী (২৫) বলেন, দুই মাস ধরে একটা পাটিও বিক্রি হয়নি। পাঁচজনের সংসার চলছে টানাটানি করে। প্রথমে ধার-দেনা করে চললেও এখন আর সেই উপায়ও নেই।

কাঁঠালিয়া পাটিকর কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিদ্ধেশ্বর দত্ত বললেন, 'গত ২ মাস ধরে আমাদের ১ টাকাও উপার্জন নেই। উপার্জন বন্ধ থাকায় সব পরিবার সীমাহীন কষ্টে দিন কাটাচ্ছে।'

বাকেগঞ্জের আরেক পাটিকর গ্রাম হেলেঞ্চা। এই গ্রামের পাটিকরেরা বললেন, বাংলা নববর্ষ, ঈদসহ বিভিন্ন উৎসব-পার্বণে তাদের বোনা পাটির যথেষ্ট চাহিদা থাকে। কিন্তু করোনা দুর্যোগে এবার বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে একটি পাটিও বিক্রি হয়নি। এখন ঈদ এসেছে। কিন্তু পাটির কোনো চাহিদা নেই। পাটি বিক্রি না হওয়ায় তাদের আয় বন্ধ। ধার-দেনা করে কোনোভাবে জীবন চালাচ্ছেন। সরকারি-বেসরকারি সহায়তাও অপ্রতুল। ফলে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। বাকেরগঞ্জের কাঁঠালিয়া, দাড়িয়াল, বাদুরপুর, নীলগঞ্জ, উত্তমপুরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের অন্তত ৪০০ পরিবার এমন খারাপ অবস্থায় আছেন।

বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাধবী রায় বলেন, 'পাটিকরদের এই দুর্দশা লাঘবে আমরা উদ্যোগ নেব।'

ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার মোল্লার হাট, রাজাপুর উপজেলার মঠবাড়ি ইউনিয়নের হাইলাকাঠী, ডহরশংকর, সাঙগুর গ্রামের কয়েক শ পরিবারও একইভাবে চরম আর্থিক সংকটের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।

রাজাপুরের হাইলাকাঠী-ডহরশংকর শীতলপাটি উন্নয়ন সমিতির সভাপতি তাপস পাটিকর বলেন, সপ্তাহে অন্তত ২০০ পাটি এখান থেকে সরবরাহ করা হতো। কিন্তু করোনার কারণে পাইকার আসতে না পারায় তাঁরা গত দুই মাসে একটি পাটিও বিক্রি করতে পারেননি। কৃষিকাজের অভিজ্ঞতা না থাকায় কৃষিকাজেও নামতে পারছেন না। ফলে এসব পরিবার এখন সীমাহীন দুর্দশায় আছে।

রাজাপুরের ইউএনও মো. সোহাগ হাওলাদার বলেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে পাটিশিল্পীদের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

দক্ষিণের শীতলপাটির ঐতিহ্য ৩০০ বছরের পুরনো। বংশ পরম্পরায় তিন শতাব্দী ধরে এ অঞ্চলের পাটিকরেরা সেই পেশাকে আগলে রেখেছেন। নানা সংকটে তাদের স্বচ্ছলতার জৌলুস নেই। এর সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে করোনার দুর্যোগ।

২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শীতলপাটিকে 'দ্য ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউমিনিটি' হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ইউনেস্কোর একটি কমিটি।

পাটিকরদের জীবন-জীবিকা নিয়ে কাজ করছেন বরিশালের বেসরকারি সংস্থা রানের নির্বাহী পরিচালক রফিকুল আলম। তিনি বলেন, এই শিল্পের সঙ্গে ৭০০ পরিবারের তিন হাজারের বেশি মানুষ জড়িত। করোনার থাবায় তাদের জীবন-জীবিকা থমকে গেছে। তাদের প্রতি দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।