নরসিংদীতে এক পরিবারের ১৬ জনের করোনা শনাক্ত

নরসিংদীর সদর উপজেলার মাধবদীতে এক পরিবারের মোট ১৬ জন সদস্যের করোনাভাইরাসে শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ শিশু-কিশোর রয়েছে। আজ রোববার দুপুরে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন সদর উপজেলার কুইক রেসপন্স টিমের আহ্বায়ক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. শাহ আলম মিয়া। এ নিয়ে নরসিংদীর দুই উপজেলার চারটি পৃথক পরিবারের মোট ৩৬ জন করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন।

সিভিল সার্জনের কার্যালয় জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে ১৪৪ জনের নমুনা রাজধানীর মহাখালীর ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। শনিবার রাত ১০টার দিকে পাওয়া ফলাফলে নতুন করে ৩৯ জনকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়। ওই তালিকায় মাধবদীর এই পরিবারটির পাঁচজন শিশু-কিশোরসহ মোট ১৬ সদস্যের নাম রয়েছে।

কুইক রেসপন্স টিম সূত্রে জানা গেছে, আক্রান্ত পরিবারটি মাধবদী পৌর শহরের কাশীপুর এলাকার একটি বহুতল ভবনের দুটি পাশাপাশি ইউনিটে বসবাস করে। পরিবারটির দুই সদস্য ব্যবসায়িক কারণে প্রায় সময়ই নারায়ণগঞ্জে ও বাবুরহাটে যাতায়াত করেন। ধারণা করা হচ্ছে, সেসব স্থান থেকে করোনাভাইরাসের জীবাণু বহন করে নিয়ে আসার পর তা পরিবারের বাকি সদস্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন আছেন ৩০-৪৮ বছরের পাঁচজন পুরুষ (পাঁচ ভাই), ৭৫ বছর বয়সী মা, ২৪-৪০ বছর বয়সী পাঁচজন নারী (পাঁচ ভাইয়ের স্ত্রী) ও ৮-১৮ বছর বয়সী পাঁচ শিশু-কিশোর (পাঁচ সন্তান)। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর জানার পর ভবনের দুটি ইউনিটের একটিতে আক্রান্তদের সবাই আইসোলেশনে আছেন এবং অন্যটিতে আক্রান্ত নন এমন তিন সদস্য বসবাস করছেন।

পরিবারটির একজন আক্রান্ত সদস্য বলেন, ‘গত মঙ্গলবার আমাদের পরিবারের দুই সিনিয়র সদস্যের জ্বর আসে। এরপর আরও কয়েকজনের জ্বর ও হাত-পা ব্যথা করতে শুরু করে। পাঁচজনের জ্বর চলে আসার মতো ঘটনায় সন্দেহ তৈরি হলে আমাদের পরিবারের সব সদস্যের করোনা পরীক্ষার জন্য সিভিল সার্জন কার্যালয়ে যোগাযোগ করি। পরে গত বৃহস্পতিবার দুজন এসে আমাদের পরিবারের ১৯ জনের নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যান। শনিবার রাতে জানতে পারি, আমাদের পরিবারের ১৬ জনই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। এরপর থেকে প্রশাসন, পুলিশ ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন ও বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে আমরা সবাই শারীরিকভাবে সুস্থ আছি। কারও মনেই হচ্ছে না, আমরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত।’

সিভিল সার্জন মো. ইব্রাহীম জানান, মাধবদীর ওই পরিবারটির আক্রান্ত ১৬ জনকে হোম আইসোলেশনে রাখা হয়েছে এবং ওই বাড়িসহ আশপাশের এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। তাঁদের কেউ বাড়ির বাইরে বের হতে পারবেন না কিংবা ভেতরেও কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না। আগামী ২১ তারিখে আবার তাঁদের সবার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হবে।

এর আগে সদর উপজেলার মাধবদীর দুটি পরিবারে ১৩ জন ও পলাশ উপজেলার জিনারদীর একটি পরিবারে ৭ জন আক্রান্ত হন। মাধবদীর একটি পরিবারের ৯ জন সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হন গত ৭ মে। এই পরিবারটি মাধবদী বাজারের ব্যাংকপট্টির এলাকার একটি চারতলা ভবনের বাসিন্দা। ভবনটির চারতলায় পুরো পরিবারটির বসবাস এবং এর নিচের তিনটি তলাজুড়ে একটি ব্যাংকের শাখা কার্যালয়। ইতিমধ্যেই ওই ব্যাংকসহ চারতলা ভবনটি লকডাউন করেছে প্রশাসন। তবে কীভাবে প্রত্যেকে আক্রান্ত হয়েছেন, সে বিষয়ে কিছুই জানাতে পারেননি তাঁরা। এরও আগে মাধবদী পৌর এলাকার আলগী মনোহরপুরের একটি পরিবারের ৩ সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হন।

এ ছাড়া পলাশ উপজেলার জিনারদী ইউনিয়নের মাঝেরচর গ্রামের পাটকল শ্রমিক নুরুজ্জামানের (৫০) শরীরে বেশ কিছুদিন ধরে করোনার উপসর্গ দেখা দিয়েছিল। করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে গত ২৯ এপ্রিল তিনি নিজেই পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়ে আসেন। নমুনা দিয়ে আসার পরদিনই তাঁর মৃত্যু হলে সতর্কতা ছাড়াই ওই পরিবারের লোকজন স্বাভাবিকভাবে তাঁর লাশের দাফন করেন। মৃত্যুর পরদিন পাওয়া ওই নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে নুরুজ্জামানকে করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়। তাঁর দাফনে অংশ নেওয়া পরিবারের লোকজনের নমুনা এরপর সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। ৭ মে তারিখে পাওয়া ওই পরীক্ষার ফলাফলে পরিবারটির তিন নারীসহ ৭ জনের করোনা পজিটিভ আসে।

জেলা করোনা প্রতিরোধ জরুরি সেলের কর্মকর্তারা জানান, এ পর্যন্ত জেলাজুড়ে মোট ২ হাজার ১৬৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২৯২ জনকে করোনা–আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১ হাজার ১৫৭ জনের। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯০। তবে এরই মধ্যে সুস্থ হয়েছেন মোট ৮৫ জন ব্যক্তি। এই উপজেলায় এখন পর্যন্ত তিনজন ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এ ছাড়া ১০০ শয্যাবিশিষ্ট নরসিংদী জেলা হাসপাতালে ১৫ জন ও নিজ নিজ বাড়িতে ৮৭ জন আইসোলেশনে আছেন।