ডাকছে রমনার সবুজ চত্বর

>

করোনাভাইরাস পাল্টে দিয়েছে আমাদের জীবনের বাস্তবতা। দেশ–বিদেশের পাঠকেরা এখানে লিখছেন তাঁদের এ সময়ের আনন্দ–বেদনাভরা দিনযাপনের মানবিক কাহিনি। আপনিও লিখুন। পাঠকের আরও লেখা দেখুন প্রথম আলো অনলাইনে। লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]

আমরা যাঁরা রমনা এলাকার বাসিন্দা, প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে রমনা পার্কে হাঁটতে যাওয়া ছিল আমাদের দীর্ঘদিনের অভ্যাস। সকালবেলা রমনা পার্কের সবুজ চত্বরে ঘণ্টাখানেক হেঁটে ফুরফুরে হয়ে এবং সারা দিনের কাজের শক্তি নিয়ে বাসায় ফিরতাম। করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর সকালবেলা রমনা পার্কে হাঁটতে যাওয়ার অভ্যাসটা বন্ধ করতে হয়েছে।

করোনা তো প্রতিদিনের জীবনযাপনের ধরনই পাল্টে দিয়েছে। এখন মাস্ক, হ্যান্ড গ্লোভস, আই প্রোটেকটিভ গ্লাস পরে ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্সের অফিসে আসি। পুলিশ কমিশনার মহোদয় মাঝেমধ্যে জরুরি মিটিং ডাকেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্সে আয়োজিত সভাগুলোতে করোনা–কালে পুলিশের কাজের বিভিন্ন কৌশল নির্ধারণ করা হয়। মাঝেমধ্যে রাস্তায় ও ট্রাফিক ব্যারাকে কাজ তদারকিতে যাই।

মনে সব সময় করোনার এক অজানা আতঙ্ক কাজ করে। এরই মধ্যে আমার দেহরক্ষীসহ পুলিশের বহু সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারাও গেছেন কয়েকজন পুলিশ সদস্য। দেশ ও জাতির কল্যাণে ঝুঁকি নিয়ে হলেও পুলিশের সদস্য হিসেবে বাইরে এসে কাজ করতে হচ্ছে। তারপরও প্রতিনিয়ত জীবনকে অবরুদ্ধ বলে মনে হয়। সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আশপাশে ঘুরতে যেতাম। মাঝেমধ্যে বেইলি রোডের রেস্টুরেন্টে যেতাম খেতে, সেটাও বন্ধ। চাকরির কারণে ঝুঁকি নিয়ে নিজে অফিস, রাস্তা ও ব্যারাকে গেলেও পরিবারের বাকি সদস্যরা বাসায় সম্পূর্ণ বন্দী।

শুক্রবার ও বিশেষ ছুটির দিনগুলোতে সারা দিন বাসায় পত্রিকা ও বই পড়েই সময় কাটাই। রমনা পুলিশ কমপ্লেক্সের সুউচ্চ শিমুল ভবনের ১১ তলার বাসার ব্যালকনিতে বসে মাঝেমধ্যে সুবিস্তৃত রমনার সবুজ বনরাজির দিকে তাকিয়ে থাকি। বসে বসে গাছের ওপর বৃষ্টি পড়ার দৃশ্য দেখি। চারদিকের উঁচু উঁচু ভবনের দিকে তাকিয়ে মনে হয়, হাজারো লোক বন্দী হয়ে বসে আছেন নিজ নিজ ঘরে। সামনের রাস্তায় ঢাকার চিরচেনা সেই যানজট চোখে পড়ে না। বিচ্ছিন্ন কিছু গাড়ি চলছে।

আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দীর্ঘদিন হলো দেখা নেই। দেশ–বিদেশে যে যেখানে আছেন, সেখানেই বন্দী। খুব সতর্কতার সঙ্গে সপ্তাহে এক দিন বাজার করা হয় ঘরের জন্য। সময় যেন পার হতে চায় না। কবে কাটবে এই করোনার আতঙ্ক?

মনে মনে ভাবি, আবার যে কবে সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে রমনা সবুজ চত্বরে হাঁটতে যাওয়ার সুযোগ পাব!