আবারও কাজে যোগ দিলেন করোনাজয়ী চিকিৎসক

আবদুল বাসেত
আবদুল বাসেত

হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজেই আক্রান্ত হন করোনাভাইরাসে। কিন্তু ভেঙে পড়েননি। বিশ্বাস রেখেছেন সুস্থ হয়ে আবার রোগীর সেবায় নিজেকে উজাড় করে দেবেন। তাঁর বিশ্বাসের জয় হয়েছে। সুস্থ হয়ে আবারও ফিরেছেন কর্মস্থলে, দিচ্ছেন রোগীদের সেবা।

এই চিকিৎসকের নাম মোহাম্মদ আবদুল বাসেত। তিনি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা। অসুস্থ হওয়ার ২৬ দিন পর গতকাল রোববার কাজে যোগ দিয়েছেন তিনি।

গতকাল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম বা পিপিই, গ্লাভস পরে হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন আবদুল বাসেত। করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সাবান দিয়ে ঘন ঘন হাত ধোয়া, মুখে হাত না–দেওয়াসহ রোগীদের নানা ধরনের পরামর্শ দিচ্ছিলেন তিনি।

আবদুল বাসেত বলেন, ‘আক্রান্ত হওয়ার পর পুরোপুরি একা হয়ে যাই। এমন কঠিন বাস্তবতা পেরিয়ে কাজে যোগ দিতে পেরে অন্য রকম লাগছে। ভালো লাগছে সহযোগী চিকিৎকদের কাছে পেয়ে।’

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার বাজালিয়া গ্রামের বাসিন্দা এই চিকিৎসক বলেন, ‘করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জন্মাবে। সে হিসেবে পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবু সতর্ক হয়ে হাসপাতালের দায়িত্ব পালন করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি চিকিৎসক হিসেবে কাজে যোগ দিতে হবে, সেটাই স্বাভাবিক। আমাকে দেখে আরও অনেকে সাহসী হোক। করোনাযুদ্ধে আমাদের জিততেই হবে।’

আবদুল বাসেত ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র। ৩৭তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে গত বছরের শুরুর দিকে প্রথমে যোগ দেন সিলেটে। চলতি বছরের শুরুর দিকে বদলি হয়ে ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন। সরকারি চিকিৎসক হিসেবে এটা তাঁর দ্বিতীয় কর্মস্থল। একই কর্মস্থলে সহকারী সার্জন হিসেবে আছেন তাঁর স্ত্রী তানজিলা তামান্নাও।

আবদুল বাসেত বলেন, নমুনা পরীক্ষায় গত ২২ এপ্রিল করোনা পজিটিভ হয়। এর তিন দিন আগে তাঁর জ্বর আসে। ২৮ এপ্রিল তাঁর শরীর থেকে তৃতীয়বার নমুনা সংগ্রহ করে চট্টগ্রামের বিআইটিআইডি ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। ফলাফল নেগেটিভ আসে। করোনা শনাক্তের পর তিনি আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিতে যান। পরে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে তিনি ১ মে বাড়ি ফেরেন। পরে বাসায় ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকেন।

>

 অসুস্থ হওয়ার ২৬ দিন পর গতকাল রোববার কাজে যোগ দিয়েছেন ফটিকছড়ি হাসপাতালের চিকিৎসক আবদুল বাসেত।

এই চিকিৎসকের ধারণা, নিজ কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি আক্রান্ত হয়েছেন। ফটিকছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পার্শ্ববর্তী হাটহাজারীর কাটিরহাট-সরকারহাট এলাকার রোগীরা চিকিৎসাসেবা নিতে যান। দুই উপজেলাতেই বিদেশফেরত প্রবাসী আছেন। তিনি বলেন, ‘১৫ এপ্রিল আমাদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ফ্লু কর্নারে জ্বর-সর্দিতে ভোগা রোগী এসেছিলেন। যাঁদের কারও কারও আপনজন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জফেরত। সেদিন রাতেই আমার খারাপ লাগা শুরু।’

চিকিৎক বাসেত বলেন, করোনায় আক্রান্ত হওয়া দোষের কিছু নয়। করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়াতে হবে। এ জন্য সবার সহযোগিতা দরকার। তাঁর মতে, করোনায় আক্রান্ত হলে মনোবল হারালে চলবে না। ভয় পেলে ক্ষতি আরও বেশি। ভিটামিন সি-জাতীয় খাবার ও ফলমূল খেলে এবং বাসায় ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানো যায়। একটু বয়স্কদের জন্য এটা খুবই কার্যকর।

২৯ বছর বয়সী এই চিকিৎসক আরও বলেন, ‘অনেকেই মুঠোফোনে আমার কাছে পরামর্শ চাইছেন। তাঁদের বলেছি, মনোবল চাঙা রাখতে, তবেই করোনাজয় সম্ভব।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিকিৎসা শেষে আবদুল বাসেত কাজে যোগ দেওয়ায় আমরা খুশি। সরকারি স্বাস্থ্যসেবায় এখন গতি ফিরবে।’