দুপুরে মামাতো ভাইকে খুন, রাতে 'বন্দুকযুদ্ধে' নিহত

বন্দুকযুদ্ধ। প্রতীকী ছবি
বন্দুকযুদ্ধ। প্রতীকী ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মো. সুজন (২৬) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে পুলিশ। রোববার দিবাগত রাত সোয়া ২টার দিকে উপজেলার ছয়ফুল্লাকান্দি ইউনিয়নের ভেলানগর এলাকার একটি বাগানে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এর আগে গত রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সুজন ছুরিকাঘাত করে মামাতো ভাই মাহবুব হাসান ওরফে বাবুকে হত্যা করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার সুজনকে নিয়ে মামলার আলাতম উদ্ধার করতে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে সুজনের সহযোগীরা। পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। সহযোগীদের গুলিতে সুজন মারা যায়।

স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বাঞ্ছারামপুর পৌর এলাকার মাতু মিয়ার মোড়ে মোটরসাইকেল মেরামতের দোকান চালাতেন মাহবুব হাসান। মামাতো ভাই সুজন মিয়ার সঙ্গে চোরাই মোটরসাইকেল বিক্রির টাকা নিয়ে মাহবুবের দ্বন্দ্ব চলছিল। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার সামাজিক সালিসও হয়েছে। কিন্তু তাঁদের দ্বন্দ্বের সমাধান হয়নি। মাহবুব ৪ মে সুজনের বিরুদ্ধে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। ওই অভিযোগের কারণে সুজন ও তাঁর সহযোগীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।

পুলিশ বলছে, গত রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামে মাহবুবকে ছুরিকাঘাত করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। মাহবুবকে উদ্ধার করে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে নিহতের পরিবার থেকে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। গত রোববার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রাম থেকে হত্যা মামলায় মো. সুজন (২৬), তাঁর দুই ছোট ভাই মো. সবুজ (২৪) ও মো. সজীবকে (২১) গ্রেপ্তার করা হয়। একই এলাকার বাসিন্দা সন্দেহভাজন আসামি আবদুর রাজ্জাককে (৩০) নরসিংদীর মাধবদী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা পূর্বশত্রুতার জের ধরে মাহবুবকে ছুরিকাঘাত করে হত্যার কথা স্বীকার করেন। সুজনের দেওয়া তথ্যমতে রাতেই অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করতে উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালায় পুলিশ। রাত সোয়া দুইটার দিকে বাঞ্ছারামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহ্ উদ্দিন চৌধুরীর থানার পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা সংস্থার যৌথ একটি দল হত্যায় ব্যবহৃত ছোরা উদ্ধারে সুজনকে সঙ্গে নিয়ে উপজেলার ছয়ফুল্লাকান্দি ইউনিয়নের ভেলানগর গ্রামের বাগানে অভিযানে চালায়। এ সময় উপস্থিতি টের পেয়ে সেখানে থাকা সুজনের সহযোগীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়। গোলাগুলির একপর্যায়ে সুজন পালানো চেষ্টা করে। সে সময় সহযোগীদের ছোড়া গুলি ও পুলিশের ছোড়া পাল্টা গুলির মধ্যে পড়ে সুজন গুলিবিদ্ধ হন। আহত হন পুলিশের পাঁচ সদস্য।

পরে অন্ধকারে তাঁর সহযোগীরা বিভিন্ন দিকে পালিয়ে যান। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত পুলিশ সদস্যদের সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে একটি দেশীয় তৈরি পাইপগান, চারটি কার্তুজের খোসা, দুই জোড়া জুতা, দুটি টর্চলাইটসহ বিভিন্ন আলামত জব্দ করা হয়।

আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন বাঞ্ছারামপুর থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মনিরুল ইসলাম, কনস্টেবল মফিজুল ইসলাম, নুরুল আমিন, মনিরুল ইসলাম, মোবারক হোসেন।

বাঞ্ছারামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহ উদ্দিন চৌধুরী জানান, পুলিশ আত্মরক্ষার্থে ৩৩টি পাল্টা গুলি ছোড়ে। মাহবুব হত্যাসহ একাধিক হত্যা, চুরি, ডাকাতির প্রস্তুতি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি মামলার আসামি নিহত সুজন। তাঁর বিরুদ্ধে বাঞ্ছারামপুর থানায় ছয়টি মামলা রয়েছে।