ষষ্ঠ দিনে অধস্তন আদালতে ৩৬৩৩ জনের জামিন, করোনা রোধে গঠিত উপদেষ্টা কমিটির সুপারিশ জানাতে নির্দেশ হাইকোর্টের

তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে সারা দেশের অধস্তন আদালত থেকে আজ সোমবার বিভিন্ন মামলায় ৩ হাজার ৬৩৩ জন জামিন পেয়েছেন। পৃথক ফৌজদারি মামলায় হাইকোর্টের পৃথক দুটি বেঞ্চ থেকে ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতিতে শুনানির মাধ্যমে ২২ জন অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পেয়েছেন। এ হিসেবে ৩ হাজার ৬৫৫ জন জামিন পেয়েছেন।

সুপ্রিম কোর্ট মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সোমবার সারা দেশের অধস্তন আদালতে ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে ৫ হাজার ৭৩০টি জামিন আবেদনের শুনানি ও নিষ্পত্তি হয়। এর মধ্যে অধস্তন আদালতে ৩ হাজার ৬৩৩ জন বন্দীর জামিন মঞ্জুর হয়েছে। এর মধ্যে শিশু আদালতে ৫৯টি জামিন আবেদনের শুনানি হয়, যেখানে ৪২ জন শিশু জামিন পেয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ২৫৩টি জামিন আবেদনের শুনানি হয়, যেখানে ১৩১ জন জামিন পেয়েছেন।

এর আগে ১১ মে ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতিতে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। এ হিসেবে আজ ছিল কার্যক্রমের ষষ্ঠ দিন। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, কার্যক্রম শুরুর পর ১১ মে কুমিল্লার জেলা জজ আদালতে ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতিতে এক মামলায় একজনের জামিন মঞ্জুর হয়। পরদিন সারা দেশের অধস্তন আদালতে ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতিতে শুনানির মাধ্যমে ১৪৪ জনের জামিন হয়। তৃতীয় দিনে ১৩ মে সারা দেশের অধস্তন আদালতে বিভিন্ন মামলায় ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতিতে ১ হাজার ১৩ জনের জামিন মঞ্জুর হয়। ১৪ মে চতুর্থ দিনে সারা দেশের অধস্তন আদালত থেকে বিভিন্ন মামলায় ১ হাজার ৮২১ জন জামিন পান। ১৭ মে পঞ্চম দিন বিভিন্ন মামলায় অধস্তন আদালত থেকে ৩ হাজার ৪৪৭ জন জামিন পান। এ হিসেবে অধস্তন আদালতে ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতিতে জামিন শুনানি ও নিষ্পত্তি বাড়ছে।

হাইকোর্টে ২২ জনের জামিন
এদিকে হাইকোর্টের পৃথক দুটি বেঞ্চে শুনানির জন্য আজ ৮১টি জামিন আবেদন ওঠে। এর মধ্যে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিমের হাইকোর্ট বেঞ্চে ৬০টি আবেদন ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতিতে শুনানির জন্য ছিল।

আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, এর মধ্যে ৩৩টি আবেদনের ওপর শুনানি হয়। এর মধ্যে ১৮টি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ১৮ জনের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেন। গুরুত্ব বিবেচনা করে অপর সাতটি আবেদন নিয়মিত বেঞ্চে উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে। অপর আটটির কোনোটিতে আইনজীবী না থাকায় ও কোনোটিতে সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আদালত নট টুডে (সোমবার নয়) রেখেছেন। কার্যক্রম শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত এই বেঞ্চে ৪৭০টি আবেদন জমা পড়েছে। ইতিমধ্যে ২৫টি আবেদন নিষ্পত্তি হয়েছে।

অন্যদিকে বিচারপতি জে বি এম হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চে ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতিতে শুনানির জন্য আজ ২১টি আবেদন ছিল, যার মধ্যে ২০টির ওপর শুনানি হয় বলে জানান সংশ্লিষ্ট আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে নিয়োজিত ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল বশির আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এর মধ্যে চারটি জামিন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত চারজনের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেছেন।

আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য, অপর ছয়টি আবেদনে আদালত নো অর্ডার দিয়েছেন। তিনটি আবেদনে নট টুডে (সোমবার নয়) এবং আটটিতে আবেদনের শুনানি আপাতত মুলতবি (পাস ওভার) রাখা হয়। এখন পর্যন্ত এই বেঞ্চে ৩৪টি আবেদন জমা পড়েছে, যার মধ্যে ১০টির নিষ্পত্তি হয়েছে।

উপদেষ্টা কমিটির সুপারিশ জানাতে নির্দেশ
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে উপদেষ্টা কমিটির নেওয়া পদক্ষেপ ও সুপারিশ সম্পর্কে এক সপ্তাহের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রিটের শুনানি নিয়ে আজ এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে দায়িত্বরত চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রীর (পিপিই, গ্লাভস, সার্জিক্যাল মাস্কসহ অন্যান্য সুরক্ষাসামগ্রী) ব্যবস্থা নিশ্চিত করতেও বলা হয়েছে। ২৮ মে পরবর্তী আদেশের জন্য বিষয়টি আসবে।

প্রতিটি বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের প্রবেশপথে হলুদ জোন স্থাপন করে আগত রোগীকে জরুরি চিকিৎসাসেবা দিতে নির্দেশনা চেয়ে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে ১৪ মে হাইকোর্টে ওই রিট করা হয়। এর ওপর আজ শুনানি হয়। আদালতে ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতিতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম।

পরে মনজিল মোরসেদ প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৮ সালের সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন অনুসারে গত ২৪ মার্চ ১৩ সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটি গঠিত হয়। কমিটি করোনা প্রতিরোধে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে ও সুপারিশ করেছে, সেগুলো প্রতিবেদন আকারে এক সপ্তাহের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে কমিটির চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যানকে ওই প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে দায়িত্বরত চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রীর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যসচিব, অতিরিক্ত সচিব (হাসপাতাল) ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট আদালত সূত্রের তথ্য, এই বেঞ্চে ২২টি রিট আবেদন জমা পড়েছে। ইতিমধ্যে তিনটির নিষ্পত্তি হয়েছে। ২২টির মধ্যে ৪টি রিট আগামীকাল মঙ্গলবার শুনানির জন্য উঠছে।