বাগেরহাটে আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি প্রস্তুত হচ্ছে স্কুল-কলেজ

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের সতর্কবার্তার পর বাগেরহাটের উপকূলীয় এলাকায় সংকেত পতাকা উত্তোলন করেছেন এক স্বেচ্ছাসেবক। আজ সোমবার শরণখোলা উপজেলার বকুলতলা গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের সতর্কবার্তার পর বাগেরহাটের উপকূলীয় এলাকায় সংকেত পতাকা উত্তোলন করেছেন এক স্বেচ্ছাসেবক। আজ সোমবার শরণখোলা উপজেলার বকুলতলা গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাব মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের প্রশাসন। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্থানীয় লোকজনের থাকার জন্য জেলার ২৩৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি স্কুল ও কলেজ খুলে রাখার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ব্যবস্থা করা হচ্ছে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি ও শুকনা খাবারের।

এদিকে মাঠের পাকা বোরো ধান যেন নষ্ট না হয়, তাই দুর্যোগ শুরুর আগেই তা কেটে কৃষকের ঘরে তুলতে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। ইতিমধ্যে জেলার ৮৫ ভাগ ধান কেটে কৃষকের ঘরে তোলা হয়েছে। বাকি ১৫ ভাগ ধান মঙ্গলবার সকালের মধ্যে কাটা শেষ করতে পারবে বলে আশা স্থানীয় কৃষি বিভাগের।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ দেশের খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যেতে পারে। আম্পান ১৯ মে শেষরাত থেকে ২০ মে বিকেল অথবা সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

তবে উপকূলীয় জনপদে এখনো আম্পানের তেমন কোনো প্রভাব লক্ষ করা যায়নি। সোমবার দিনভরই বাগেরহাটের আবহাওয়া ছিল রৌদ্রোজ্জ্বল। তবে তাপমাত্রা বাড়ায় ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে। ফলে অস্বস্তি বেড়েছে জনজীবনে। আবহাওয়া ভালো থাকায় স্বাভাবিক রয়েছে মোংলা বন্দরে জাহাজে পণ্য ওঠানো–নামানোর কাজ। মোংলা বন্দরে বর্তমানে ১১টি দেশি–বিদেশি জাহাজ অবস্থান করছে।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, করোনা সংক্রমণের মধ্যে আবহাওয়া বিভাগ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পূর্বাভাস জারি করেছে। এই দুর্যোগ মোকাবিলায় স্থানীয় মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় ইতিমধ্যে জরুরি সভা হয়েছে। জেলা ও উপজেলাগুলোতে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। দুর্যোগের আগে মাঠে থাকা বোরো ধান দ্রুত কেটে ঘরে তুলতে কৃষি বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক জানান, উপকূলের মানুষকে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগেই আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হবে। করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে যাতে স্থানীয় লোকজন থাকতে পারেন, সে জন্য জেলার ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও সংশ্লিষ্ট উপজেলার স্কুল ও কলেজগুলো খুলে রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বাগেরহাটের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক রঘুনাথ কর প্রথম আলোকে বলেন, চলতি মৌসুমে বাগেরহাট জেলায় ৫২ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। চারটি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার, ৯৭টি রিপার ও হ্যান্ড রিপার এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় ইতিমধ্যে মাঠের ৮৫ ভাগ ধান কেটে ঘরে তোলা গেছে। ঘূর্ণিঝড় আম্পান আঘাত হানার আগে মাঠে থাকা বাকি ১৫ ভাগ ধান কেটে ঘরে তুলতে এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। স্ব স্ব উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা তাঁদের সহযোগিতা করছেন। দুর্যোগ আঘাত হানার আগেই সব ধান কৃষকের ঘরে উঠে যাবে বলে মনে করছেন এই কৃষি কর্মকর্তা।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার শেখ ফকর উদ্দিন জানান, আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী মোংলা বন্দরে স্থানীয় ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত জারি রয়েছে। বন্দরে বর্তমানে সার, ফ্লাইঅ্যাশ, কয়লাবাহীসহ ১১টি দেশি–বিদেশি জাহাজ অবস্থান করছে। বিকেল নাগাদ আরও নতুন চারটি জাহাজ বন্দরে ভেড়ার কথা রয়েছে। বন্দরে অবস্থান নেওয়া জাহাজগুলোতে পণ্য ওঠানো–নামানোর কাজ অব্যাহত রয়েছে। বন্দরে একটি ঘূর্ণিঝড় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। পাশাপাশি সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।