করোনার সংক্রমণ কমাতে কোয়ারেন্টিনে মনোযোগ জরুরি

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

করোনা সংক্রমণ কমাতে সন্দেহভাজনদের কোয়ারেন্টিন (সঙ্গনিরোধ) ঠিকমতো হচ্ছে না। বিভিন্ন জেলার শনাক্ত রোগী ও কোয়ারেন্টিনের তথ্যে সামঞ্জস্য নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বিষয়ে মনোযোগ ও নজরদারির ঘাটতি আছে।

জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলেন, করোনা সংক্রমিত ব্যক্তির রোগের লক্ষণ দেখা দেওয়ার দুই দিন আগে ও লক্ষণ দেখা দেওয়ার পর ১৪ দিনের মধ্যে অন্য যাঁরা এই ব্যক্তির এক মিটার দূরত্বের মধ্যে ১৫ মিনিট বা তার বেশি সময় অবস্থান করবেন, তাঁদের সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। সংস্পর্শে আসা এমন ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে হবে। খুঁজে বের করার নির্দিষ্ট পদ্ধতি হচ্ছে কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং। কোয়ারেন্টিনের জন্য কন্ট্যাক্ট ট্রেসিংয়ের কাজটি জরুরি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আটজন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের উপদেষ্টা কমিটির একটি সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে, আটটি বিভাগের সব কটিতেই হোম কোয়ারেন্টিন ও হোম আইসোলেশনের ব্যাপারে মনোযোগ কম দেওয়া হয়েছে। কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং করে সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে কোয়ারেন্টিন বা আইসোলেশনে নেওয়ার কাজটি ঠিকমতো হচ্ছে না। ১৫ মে অনুষ্ঠিত ওই সভায় কোয়ারেন্টিন, আইসোলেশন, কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং এবং ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়।

বিশেষজ্ঞদের একজন প্রথম আলোকে বলেছেন, প্রতিদিন আট বিভাগের পরিচালকদের মাধ্যমে তাঁরা দেশের সব জেলার করোনাবিষয়ক তথ্য পান।  

সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশনের তথ্য সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, একজন মানুষের সংস্পর্শে বহু মানুষ আসেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে গতকাল পর্যন্ত ২ লাখ ৪৩ হাজার ৯৬০ জনকে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে। এর মধ্যে বাড়িতে কোয়ারেন্টিন করা হয় ২ লাখ ২৯ হাজার ৮১৮ জনকে। কিন্তু বিভিন্ন জেলার সংক্রমিত ও কোয়ারেন্টিনে থাকা মানুষের অনুপাতে পার্থক্য দেখা যাচ্ছে।

>

সংক্রমণ প্রতিরোধে সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে তাঁদের কোয়ারেন্টিনে রাখা জরুরি।

সর্বশেষ ১৮ মের হিসাব অনুযায়ী, চট্টগ্রাম জেলায় এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টিনে থাকা মানুষ ১ হাজার ৬৬০ জন। আর আক্রান্ত মানুষ ৬৯৫ জন। অর্থাৎ সংক্রমিত একজনের বিপরীতে সন্দেহভাজন ব্যক্তি ছিল ২.৩ জন। রাজধানীর বাইরে ঢাকা জেলায় এ পর্যন্ত আক্রান্ত ২৯০ জন। এই জেলায় কোয়ারেন্টিনে ৫ হাজার ৭৬২ জনকে রাখা হয়। হবিগঞ্জ জেলায় আক্রান্ত ছিলেন ১১২ জন, পাশাপাশি কোয়ারেন্টিনে ছিলেন ২ হাজার ৫৮২ জন। এই জেলায় একজন সংক্রমিত ব্যক্তির বিপরীতে ২৩ জনকে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ১০ হাজার ব্যক্তি রাজধানীতে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, রাজধানীতে হোম কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ১১ হাজার ১৫৩ জনকে। ঢাকা শহরে বলা যায়, একজন সংক্রমিত ব্যক্তির জন্য সন্দেহভাজন একজনকে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) স্বাস্থ্যকর্মীরা নারায়ণগঞ্জে দেখেছিলেন, একজন সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে প্রায় ১০০ মানুষ এসেছিলেন। নারায়ণগঞ্জের মতো করে খুঁজলে সারা দেশে আরও বেশি মানুষ কোয়ারেন্টিনে থাকার কথা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন হোম কোয়ারেন্টিনে যাঁরা আছেন, তাঁদের খবর ফোন করে নেওয়া হচ্ছে। রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার মাধ্যমে আরও উদ্যোগ চলমান আছে।’ কন্ট্যাক্ট ট্রেসিংয়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে এটি করা হবে। সরকারের এটুআই এ কাজে যুক্ত হচ্ছে।

সংক্রমণ প্রতিরোধে সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিকে খুঁজে বের করা প্রথম কাজ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞদের একজন জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সাল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে খুঁজে পেলে তাঁকে বাড়িতে অথবা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে নিতে হবে। সেখানে ব্যক্তির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। জ্বর, সর্দি-কাশি, গলাব্যথা—রোগের এসব লক্ষণ থাকলে তাঁকে আইসোলেশনে নিতে হবে। আইসোলেশন বাড়িতে বা প্রতিষ্ঠানে হতে পারে। এরপর তাঁর করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা করতে হবে। রোগ শনাক্ত হলে তাঁকে বাড়িতে রেখে বা হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে হবে। কিন্তু কাজটি পুরোপুরি হচ্ছে না।