'আতঙ্কিত না হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন'

মাহমুদা বেগম।
মাহমুদা বেগম।

‘আমরা নার্সরা কর্মব্যস্ত মানুষ। রোগীর সেবায় ব্যস্ত থাকতে হয়। সেই মানুষকে হঠাৎ রোগী হয়ে থেমে যেতে হলো। যেতে হলো আইসোলেশনে। কাজের মানুষ হিসেবে যা ছিল আমার জন্য অনেক কঠিন।’

রাজশাহীর করোনাজয়ী নার্স মাহমুদা বেগম (৫০) গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বললেন এসব কথা। সবার প্রতি তাঁর পরামর্শ, আতঙ্কিত না হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন, তাহলে করোনা জয় করা সহজ হবে।

পবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এই জ্যেষ্ঠ নার্সের করোনা শনাক্ত হয় গত ২৮ এপ্রিল। শুরুতে তেমন আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। এরপর ধীরে ধীরে তিনি সুস্থ হতে থাকে। আক্রান্ত হওয়ার ১৫, ১৬ ও ১৮ দিনের মাথায় তাঁর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। প্রতিবারই ফল আসে নেগেটিভ। এরপর ১৭ মে তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।

সুস্থ হওয়ার পর আবার রোগীর সেবায় ফিরে যেতে চান মাহমুদা বেগম। কিন্তু নিয়মের কারণে এখনই কাজে ফিরতে পারছেন না। তাঁকে আরও ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে (সঙ্গনিরোধ) থাকতে হবে। মাহমুদা বললেন, ‘আমি এখন পুরোপুরি সুস্থ। এখনই কাজে ফিরতে প্রস্তুত। কিন্তু নিয়মের কারণে আরও কিছুদিন বাসাতেই থাকতে হচ্ছে।’

অসুস্থ থাকার সময় সাহস জোগানোর জন্য স্বামী ও সহকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান এই নার্স। মাহমুদা বেগম বলেন, তাঁর ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ ছিল। তাই একটু ভয়েই ছিলেন। তবে পাশে থেকে তাঁর স্বামী সাহস জুগিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রাবেয়া বসরী ও হাসপাতালের তাঁর সহকর্মীরা তাঁর প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। আইসোলেশনের যাওয়ার আগে বাসায় খাবার, শাকসবজি, ফলমূল পাঠিয়েছেন। আইসোলেশনে আসার পর তাঁকে ও তাঁর পরিবারের জন্য রান্না করে খাবার পাঠানো হয়েছে।

করোনা শনাক্ত হওয়ার পর কিছু মানুষের কটু কথা শুনতে হয়েছে মাহমুদাকে; যা ভীষণ কষ্ট দিয়েছে তাঁকে। তিনি বলেন, ‘মানুষকে সেবা দিতে গিয়েই তো আমার করোনা হয়েছে। কিন্তু আমার যখন করোনা হয়েছে, তখন আমাকে মানুষ কী চোখে দেখেছে, এটা বলে বোঝানো যাবে না। করোনা হলেই তাঁকে ফেলে রেখে যাওয়া উচিত নয়। তাঁর পাশে আরও বেশি করে দাঁড়ানো দরকার।’

নিজের চিকিৎসার অভিজ্ঞতার বিষয়ে মাহমুদা বলেন, দিনে পাঁচ থেকে ছয়বার গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে গড়গড়া করেছেন। পাশাপাশি মসলা দিয়ে চা পান করেছেন। করোনার জন্য আর তেমন বাড়তি কোনো ওষুধ সেবন করতে হয়নি তাঁকে।

পবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রাবেয়া বসরী বলেন, মাহমুদা আরও ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকবেন। এরপর তিনি আবার হাসপাতালের কাজে ফিরবেন।

মাহমুদার করোনা শনাক্ত হওয়ার দিনই পবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স লকডাউন করে দেওয়া হয়েছিল। তিনি সুস্থ হওয়ার পর মৌখিকভাবে লকডাউন তুলে দেওয়া হয়েছে।

পবার ইউএনও মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন বলেন, এখন হাসপাতাল পুরোদমে চলছে।