করোনাকালে ফি নিয়ে বিপাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

করোনাকালে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শিক্ষা ফি (টিউশন ফি) আদায়ে চাপ না দিতে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলেও কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান এই সময়েও শিক্ষা ফি আদায় করছে, তাগাদাও দিচ্ছে। কেউ আদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আবার শিক্ষা ফি আদায় করতে না পারায় অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতে পারছে না।

এ রকম উভয়সংকটে পড়ে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের সহযোগিতা চাচ্ছে। অভিভাবকদের কেউ কেউ বলছেন, যেহেতু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস-পরীক্ষা নেই। তাই কয়েক মাসের শিক্ষা ফি মওকুফ করে প্রয়োজনে সরকার ভুর্তকি দিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনের সমস্যা মেটাতে পারে।

বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, দেশে সরকারি, কিন্ডারগার্টেন, এনজিও পরিচালিত স্কুলসহ সব মিলিয়ে প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে ১ লাখ ২৯ হাজার ২৫৮টি। এগুলোতে মোট শিক্ষার্থী প্রায় পৌনে ২ কোটি। সরকারি বিদ্যালয় ৬৫ হাজার ৬২০টি। বাকিগুলো বেসরকারি। মাধ্যমিকে মোট প্রতিষ্ঠান ২০ হাজার ৬৬০টি। এর মধ্যে সরকারি মাত্র ৬৭৫টি। বাকি ১৯ হাজার ৯৮৫টি বেসরকারি। মাধ্যমিকে মোট শিক্ষার্থী ১ কোটি ৩৪ লাখের বেশি। সরকারি ও বেসরকারি কলেজ আছে ৪ হাজার ৫৫১টি। এর মধ্যে বেসরকারি কলেজ ৩ হাজার ৯০০টি। কলেজে মোট শিক্ষার্থী প্রায় ৪৪ লাখ। আর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ৪৬টি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ১০৫টি। এর বাইরে কয়েক হাজার ইংরেজি মাধ্যমিক স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।

করোনাভাইরাসের কারণে গত ১৮ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সবাই কমবেশি সমস্যায় পড়েছে। একদিকে পড়াশোনার ক্ষতি, অন্যদিকে আর্থিক সংকট। বিশেষ করে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সমস্যাটি বেশি। অভিভাবকেরাও আর্থিক সমস্যায় আছেন। এ জন্য বিদ্যমান পরিস্থিতিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর ও শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থী ফি আদায়ে চাপ না দিতে প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

কিন্তু খোদ রাজধানীর কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষা ফি আদায় করছে। কেউ কেউ তাগাদাও দিচ্ছে। এমন প্রতিষ্ঠানের একটি মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এই প্রতিষ্ঠানটি এপ্রিল, মে ও জুন মাসের বেতন আদায় শুরু করেছে। মুঠোফোনভিত্তিক আর্থিক সেবার (রকেট, ন্যাকসাস পে) মাধ্যমে তারা কয়েক দিন ধরে এই টাকা আদায় শুরু করেছে।

>

কোনো কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান শিক্ষা ফি আদায় করায় অভিভাবকেরা ক্ষুব্ধ। আবার ফির অভাবে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনের সংকট।

শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার কারণসহ বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করে কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম জানালেন, তাঁরা চাপ দিচ্ছেন না। শুধু শিক্ষা ফি দিতে বলেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিভাবক প্রথম আলোকে বলেন, নানা কৌশলে ফি আদায়ে চাপ দেওয়া হচ্ছে। যেমন কলেজ শাখার পক্ষ থেকে একাদশ শ্রেণির ছাত্রীদের খুদে বার্তা পাঠিয়ে বলা হয়েছে প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এখনো দ্বাদশ শ্রেণি ‘প্রমোশন’ দেওয়া সম্ভব হয়নি। বর্তমান পরিস্থিতিতে ‘অটো প্রমোশন’ ছাড়া বিকল্প নেই। তাই বর্তমান মাস পর্যন্ত বেতন পরিশোধ করলে ‘অটো প্রমোশনের’ জন্য কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হবে। ২০ মের মধ্যে বেতন পরিশোধ করতে বলা হয়েছে।

ওই অভিভাবক বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বেশির ভাগ অভিভাবক অর্থসংকটে আছেন। এ অবস্থায় অন্তত ছয় মাস বেতন মওকুফ করে প্রয়োজনে সরকার থেকে প্রণোদনা দিয়ে সমস্যা মেটাতে পারে।

সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ গত মাসে বিকাশের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ফি আদায় করেছে। এখন ব্যাংক ও বিকাশের পাশাপাশি স্কুলে গিয়েও বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। আর ফির জন্য অভিভাবকদের তাগাদা দিয়ে অভিভাবকদের মুঠোফোনে খুদে বার্তা দেওয়া হচ্ছে।

এ ছাড়া রাজধানীর মনিপুর উচ্চবিদ্যালয়সহ আরও কিছু প্রতিষ্ঠান ফি আদায় করছে। ওয়াইডব্লিউসিএ আদায়ের উদ্যোগ নিলেও পরে তা স্থগিত করেছে।

শিক্ষকদের বেতনসংকটের কথা উল্লেখ করে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড অধ্যক্ষ ফওজিয়া প্রথম আলোকে বলেছেন, এত দিন তাঁরা বেতন নেননি। কিন্তু এখন যেকোনো সময় অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষা ফি (টিউশন ফি) চাইবেন।

অনেক প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থী ফি আদায় করতে না পারায় শিক্ষকদের বেতন দিতে পারছে না। রাজধানীর হাবীবুল্লাহ বাহার ডিগ্রি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এক প্রভাষক প্রথম আলোকে বলেন, গত ১৭ মার্চের পর থেকে শিক্ষার্থী ফি আদায় বন্ধ। ফলে তাঁরা এখনো এপ্রিল মাসের বেতন পাননি। ধার-দেনা করে চলছেন।

বর্তমান পরিস্থিতিকে উভয়সংকট বলে উল্লেখ করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই সময়ে বেশি মানবিক হতে বলছেন। শিক্ষার্থী ফি আদায়ে চাপ দেওয়া যাবে না।