করোনা মোকাবিলায় তরুণদের উদ্যোগ নিয়ে 'লেটস টক'

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

‘তরুণেরা কাজে এগিয়ে আসছে। আসলে এখন তাদেরই এগিয়ে আসার সময়। তাদের কাজের প্রতি আমি স্যালুট জানাই। তার বেশ যত্নসহকারে কাজগুলো করছে। আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে কাজটা করলে এই যুদ্ধে জয়ী হতে পারব। না মানলে তা ঠিক হবে না।’

কথাগুলো বলছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের উইকেট কিপার মুশফিকুর রহিম। করোনা মোকাবিলায় তরুণদের উদ্যোগ নিয়ে গতকাল সোমবার রাতে অনলাইনে আয়োজিত ‘লেটস টক’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। তরুণদের জোট ইয়াং বাংলা এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিআরআইয়ের নেতৃত্বে এ জোট কাজ করে।

সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আজ এ তথ্য জানানো হয়।

‘লেটস টক’ অনুষ্ঠানে মুশফিকুর রহিম বলেন, ‘আমরা মাঠের মানুষ, শেষ দুই মাস ঘরে বসে আছি। আসলে সবার আগে নিজের সেফটি গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য ঘরে থাকতে হবে। এটা বেশ ডিফিকাল্ট এবং চ্যালেঞ্জিং। আমরা কেউ এমন পরিস্থিতি আগে দেখিনি। কিন্তু নিজেদের নিরাপত্তার জন্যই সরকারের নির্দেশাবলি আমাদের পালন করা উচিত। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যাঁরা আছেন, নার্স–ডাক্তার তাঁরা আমাদের নিরাপত্তার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে হলেও আমাদের সরকারি নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে।’

এই অনুষ্ঠানে চিরকুট ব্যান্ডের সুমি বলেন, ‘দেশের তরুণেরা এই মহামারির সময় যেভাবে এগিয়ে এসেছেন, যেভাবে কাজ করছেন, তা সত্যিই অতুলনীয়। যেই দেশের প্রত্যেক মানুষ বয়সভেদে বড় থেকে ছোট যোদ্ধায় পরিণত হয়, সে দেশের খুব বেশি ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এমন দুর্যোগ আর প্রতিকূলতা নিয়েই আমরা চলেছি। এবার হয়তো একটু বড় আকারে হচ্ছে। কিন্তু আমরা তা মোকাবিলা করতে পারব। আমাদের (শিল্পীদের) কাজ মানুষকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে সবল রাখা। আর সে জন্যই আমরা সামনে নিয়ে আসছি “আলোর গান”। আপনিও আপনার বাড়ির জানালার ধারে দাঁড়িয়ে এই গান গেয়ে পাঠিয়ে দিতে পারেন আমাদের কাছে।’

অনুষ্ঠানে ব্র্যাকের পরিচালক নবনীতা চৌধুরী বলেন, সম্প্রতি লকডাউনে গৃহ নির্যাতনের পরিমাণ বেড়ে গেছে। নবনীতা বলেন, বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের সঠিক পরিসংখ্যান নেই। নারীরা জানেন না করোনা মোকাবিলায় জরুরি সহায়তা নিতে বা নির্যাতনের শিকার হলে কোথায় ফোন করবে। গৃহ নির্যাতনের ফলে শিশুরাও ঝুঁকির মুখে থাকছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, তরুণেরা অনেক কাজে এগিয়ে যাচ্ছেন। সেই সঙ্গে এখন তরুণদের দেখাতে হবে, ‘আমি অকারণে বাহিরে যাই না’।

তরুণদের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে সাংসদ ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, ‘বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ইয়াং বাংলার বেশ কিছু সংগঠনের সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে। আমি গত ২৬ মার্চ থেকেই চট্টগ্রামে। সেখানে এবং দেশের অন্যান্য স্থানে দেখেছি। তরুণেরা অনেক কাজ করেছে। এই মহামারি প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, বিশ্বের কোনো সরকার এর জন্য প্রস্তুত ছিল না। প্রতিনিয়ত নতুন পরিস্থিতিতে নতুন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। এটা আজকেই শেষ নয়। এটা কবে শেষ হবে তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বলতে পারছে না। কোনো বিশেষজ্ঞ জানেন না। এমন অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী ১৮ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এর আওতায় সব উদ্যোক্তা রয়েছেন।’

আয়েশা খান বলেন, কর্মসংস্থান ব্যাকে ৫০০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। যেখান থেকে তরুণেরা জামানতবিহীনভাবে ঋণ পাবেন। কীভাবে তরুণদের সহায়তা করা যায়, তা নিয়ে ভাবা হচ্ছে। আজকের এখানে থাকা অনেক তরুণ উদ্যোক্তাই তাঁদের কাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারি সহায়তা পেয়েছেন।

বর্তমান স্টার্টআপ ও উদ্যোগগুলোর অবস্থার কথা বলতে গিয়ে জেসিআই বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট সারাহ কামাল বলেন, ‘অবস্থা কবে স্বাভাবিক হবে, তা আমরা জানি না। আর স্বাভাবিক হলেও তা কেমন স্বাভাবিক হবে, তাও আমরা জানি না। আর সে কারণেই আমাদের যেমন ঝুঁকি রয়েছে, তেমনি যথেষ্ট সুযোগও রয়েছে। সব সম্ভাবনা নিয়ে আমাদের কাজ করা উচিত।’

জাগো ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা করভী রাকশান্দ তরুণদের কার্যক্রম প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমাদের তরুণেরা সব সময় আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে পরবর্তী সব আন্দোলনে বড় ভূমিকা রেখেছে এই তরুণেরা। আমি মনে করি ইয়ুথ অর্গানাইজেশনগুলোর ন্যাশনাল ম্যাপিং করা এবং সমন্বয় করার প্রয়োজন। আমাদের তরুণদের জন্য অসাধারণ একটি মন্ত্রণালয় রয়েছে, তার অধীনে কাজটি হওয়া উচিত।’

নাহিম রাজ্জাকের সঞ্চালনায় হওয়া এই অনুষ্ঠানে আরও কথা বলেন জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী ফাহিমা খাতুন, নড়াইল ভলান্টিয়ার্সের সাদাত রহমান, অল ফর ওয়ান ফাউন্ডেশন কামরুন নেসা মীরা, নওগাঁ এনআইওয়াইএসএইচএএন সংগঠনের মাহিদুর রহমান এবং দ্য আর্থ ফাউন্ডেশনের জাফির শাফি।