জুয়েলার্স সমিতির সভাপতিকে প্রাণনাশের হুমকি

বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সভাপতি এনামুল হক খানকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন সংগঠনটির এক সদস্য প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। সাংগঠনিক নির্দেশ অমান্য করে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে দোকান খোলা রাখায় দুটি প্রতিষ্ঠানকে সমিতি থেকে সাময়িকভাবে বহিস্কার করা হয়। এতে ক্ষুব্দ হয়ে একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনাা পরিচালক ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতিকে মোবাইল ফোনে প্রাণনাশের হুমকি দেন।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ মঙ্গলবার এমন দাবি করা হয়। এতে বলা হয়, করোনাভাইরাসের কারণে দোকান মালিক, কর্মচারি ও ক্রেতাসাধারণের স্বাস্থ্য ঝুঁকি চিন্তা করে সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পবিত্র ঈদুল ফিতর পর্যন্ত সকল জুয়েলারি দোকান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। তবে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও নির্দেশ অমান্য করে দোকান খোলা রাখার জন্য ভাসাভী জুয়েলার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামাল জামান মোল্লাকে সমিতি থেকে সাময়িক বহিষ্কারাদেশ এবং একইসঙ্গে বহিষ্কারাদেশ কেন স্থায়ী করা হবে না তা জানতে চেয়ে চিঠি দেন জুয়েলার্স সমিতির সভাপতি এনামুল হক খান।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বহিষ্কারাদেশে ক্ষুব্দ হয়ে কামাল জামান মোল্লা গত রোববার রাত আটটার দিকে তাঁর নিজের মোবাইল ফোন ব্যবহার করে সমিতির সভাপতি এনামুল হক খানকে গালিগালাজ করেন এবং প্রাণনাশের হুমকি দেন। এ ঘটনার পর সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জুয়েলার্স সমিতির সভাপতি গতকাল সোমবার পল্টন থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৭ মে জুয়েলার্স সমিতি কার্যনির্বাহী কমিটি টেলিকনফারেন্স করে পবিত্র ঈদুল ফিতর পর্যন্ত জুয়েলারি দোকান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে সিদ্ধান্ত না মেনে বেশ কিছু জুয়েলারি দোকান খোলে। তার পরিপ্রেক্ষিতে গত রোববার ভাসাভী জুয়েলার্সের পাশাপাশি পূরবী জুয়েলার্সকে সমিতি থেকে সাময়িক বহিষ্কারাদেশ এবং একই সঙ্গে সাময়িক বহিষ্কারাদেশ কেন স্থায়ী করা হবে না তা জানতে চেয়ে চিঠি দেন সমিতির সভাপতি এনামুল হক খান। তা ছাড়া সমিতির পক্ষ থেকে ৩০টি প্রতিষ্ঠানকে সংগঠনের নির্দেশ মেনে চলতে সতর্ক করা হয়।

জানতে চাইলে জুয়েলার্স সমিতির সভাপতি এনামুলক হক খান আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, 'প্রায় আড়াই শ সদস্যের মতামত নেওয়ার পর সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় দোকান বন্ধের সিদ্ধান্তটি হয়। তারপরও কিছু প্রতিষ্ঠান দোকান খোলা রাখে। সতর্ক করার পর ভাসাভী ও পূরবী ছাড়া সবাই বন্ধ করে দেয়। সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভাসাভী ও পূরবী জুয়েলার্সকে সাময়িক বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিষয়টি আমরার ব্যক্তিগত কোনো সিদ্ধান্ত না। তারপরও ভাসাভীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক গত রোববার রাত আটটার দিকে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও প্রাণনাশের হুমকি দেন। উনি যে ভাষা ব্যবহার করেছেন তা আমি উচ্চারণ করতে পারব না।'

এনামুল হক খান বলেন, 'জুয়েলারি দোকানের ৮-১০জন বিক্রয়কর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তের তালিকায় একাধিক মালিকও রয়েছেন। বায়তুল মোকাররমের একটি জুয়েলারি দোকানের একজন বিক্রয়কর্মী করোনায় মারাও গেছেন। এই অবস্থায় স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে আমরা কিভাবে দোকান খোলা রাখার অনুমতি দেব? '

প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ভাসাভী জুয়েলার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামাল জামান মোল্লা আজ বিকেল পাঁচটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, 'প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। সমিতির সভাপতিকে কেন আমি এই ধরণের কথা বলতে যাব? আসলে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।' দোকান খোলার বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খোলার অনুমতি দিয়েছে। সে জন্য আমরা খুলেছি। সমিতি তো সরকারের চেয়ে বড় না।'