কড়াকড়ির মধ্যেও ঢাকা ছাড়ার চেষ্টা মানুষের

করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ফেরি চলাচল বন্ধ। ঈদ উপলক্ষে বাড়ি যেতে ভোর থেকে ঘাটে আসতে থাকে মানুষ। ফেরি না ছাড়ায় বিক্ষুব্ধ জনতা একপর্যায়ে ইটপাটকেল ছোড়ে। তবু উপায় হয়নি, তাই ঘাটে হাজারো মানুষের অপেক্ষা। গতকাল বিকেল সাড়ে চারটার দিকে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ঘাটে।  হাসান রাজা
করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ফেরি চলাচল বন্ধ। ঈদ উপলক্ষে বাড়ি যেতে ভোর থেকে ঘাটে আসতে থাকে মানুষ। ফেরি না ছাড়ায় বিক্ষুব্ধ জনতা একপর্যায়ে ইটপাটকেল ছোড়ে। তবু উপায় হয়নি, তাই ঘাটে হাজারো মানুষের অপেক্ষা। গতকাল বিকেল সাড়ে চারটার দিকে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ঘাটে। হাসান রাজা

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গতকাল মঙ্গলবার থেকে খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ঢাকা থেকে বাইরে যেতে এবং ঢাকায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এ জন্য ঢাকার প্রবেশমুখে কড়া পাহারা বসিয়েছে পুলিশ। যাঁরা সকালের দিকে এই কড়াকড়ির আগে বিভিন্ন ঘাটে পৌঁছে গেছেন, তাঁদেরও ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। ঈদ পর্যন্ত এই অবস্থা থাকবে বলে জানা গেছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, করোনার সংক্রমণ রোধে পুলিশ এ ব্যবস্থা নিয়েছে। এর আগে ঢাকাবাসীকে অনুরোধ করা হয়েছিল যে তাঁরা যেন এই শহর ছেড়ে না যান। কিন্তু দেখা গেছে, তারপরও মানুষ দলে দলে শহর ছাড়ছেন। এ জন্য শহরের প্রবেশমুখে পাহারা বসানো হয়েছে।

গতকাল সকালে রাজধানীর গাবতলীসংলগ্ন আমিনবাজার সেতুর কাছে দেখা গেছে, পুলিশ আমিনবাজার সেতু হয়ে ঢাকার বাইরে যেতে বা ঢুকতে দিচ্ছে না। আমিনবাজার সেতুতে ওঠার আগে গাবতলী পুলিশ ফাঁড়ির সামনে নিরাপত্তাচৌকি (চেকপোস্ট) বসিয়ে ঢাকার বাইরে যাওয়া ও ঢাকায় প্রবেশ করা লোকজনকে ঠেকানো হচ্ছে।

সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তারা জানালেন, ঈদ উদ্‌যাপন করতে কাউকেই ঢাকার বাইরে যেতে এবং ঢুকতে দেওয়া হবে না। তবে জরুরি সেবায় যুক্ত ব্যক্তি বা পণ্যবাহী পরিবহন চলাচলে কোনো বাধা নেই। পুলিশের এই কড়াকড়ির আগে সকালের দিকে বেশ কিছু লোক ঢাকা ছেড়ে চলে যান।

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে ২৬ মার্চ থেকে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। পাশাপাশি গণপরিবহন, নৌযান ও অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয়। তবে পণ্যবাহী পরিবহন চালু ছিল। গত ২৬ এপ্রিল সরকার থেকে সীমিত পরিসরে পোশাক কারখানা ও কলকারখানা চালু করার ঘোষণা দেয়। বাস বন্ধ থাকায় তখন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পিকআপ, অটোরিকশা ও হেঁটে লোকজন ঢাকায় আসেন। একই ভাবে ঈদ সামনে রেখে তাঁরা আবার ফিরতে শুরু করেন।

দুপুরের দিকে গাবতলী টেকনিক্যাল মোড় ও মাজার রোড এলাকায় দেখা যায়, নিরাপত্তাচৌকি বসিয়ে মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসের আরোহীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ও পিকআপ আরোহীদের পুলিশ দফায় দফায় জেরা করে। এ সময় সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারায় অনেককেই ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

>

খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ঢাকা থেকে বাইরে যেতে এবং ঢাকায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।

তবে পুলিশের চোখ গলিয়ে অনেকেই ব্যাগ মাথায় নিয়ে হেঁটে আমিনবাজার সেতু পার হয়ে যান। এঁদের একজন মনিরুজ্জামান জানালেন, তিনি বেসরকারি একটি কোম্পানির কর্মকর্তা। করোনা পরিস্থিতিতে তাঁর অফিস বন্ধ। স্ত্রী ও সন্তান থাকেন ঝালকাঠিতে। তাঁদের সঙ্গে ঈদ উদ্‌যাপন করতে তিনি তাঁর বাড়ি ঝালকাঠির উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।

গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে যাত্রী নিয়ে খুলনার উদ্দেশে যাওয়া একটি মাইক্রোবাস আটকে দেয় পুলিশ। মাইক্রোবাসটিতে সাতজন যাত্রী ছিলেন। তাঁরা সবাই দুবাইপ্রবাসী। পুলিশ তাঁদের ঢাকার বাইরে যেতে দেবে না বলে জানিয়ে দেয়। এ সময় তাঁরা পুলিশ কর্মকর্তাদের বলেন, তাঁরা হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরসংলগ্ন হজ ক্যাম্পে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন (সঙ্গনিরোধ) ছিলেন। পুলিশকে সেই ছাড়পত্র ও পাসপোর্ট দেখান। পরে পুলিশ তাঁদের যাওয়ার অনুমতি দেয়।

 এই দলে থাকা দুবাইপ্রবাসী রোকনুজ্জামান ও শরিফ এখলাস চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকায় তাঁদের থাকার জায়গা নেই। তাই তাঁরা এখন বাড়িতে যেতে চান।

দারুসসালাম থানার কর্তব্যরত উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসে ঢাকায় ঈদ করতে এসেছিলেন অন্তত এমন ২০ জনকে (বেলা একটা পর্যন্ত) ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মোস্তাক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ঢাকার বাইরে যেতে বা আসতে দেওয়া হচ্ছে না।

 গাবতলীর মতো ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে ঢাকায় আসা-যাওয়া করছে মানুষ। তবে এই দুই মহাসড়কের প্রবেশপথ যাত্রাবাড়ী মোড়ে পুলিশের কোনো চেকপোস্ট দেখা যায়নি। গতকাল দুই দফায় এই দুটি মহাসড়কের ঢাকা অংশে দেখা যায়, প্রাইভেট কার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মাইক্রোবাস, পিকআপসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে মানুষ অবাধে আসা-যাওয়া করছেন।

পুলিশ বলছে, ঢাকায় যাওয়া-আসা ঠেকানোর জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ডেমরার সুলতানা কামাল সেতুর ওপর চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) ইফতেখার আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, এই দুই মহাসড়ক ব্যবহার করে লোকজন যাতে অন্য জেলায় না যেতে পারেন, সে জন্য সাইনবোর্ড ও ডেমরায় দুটি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। তারপরও অনেক লোককে ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না।