'আমরা আকাশের পরিস্থিতি দেখে আশ্রয়কেন্দ্রে যাব'

খুলনার দাকোপের বানীশান্তা পিনাকপানি বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে খিঁচুড়ি রান্নার কাজ চলছে। তবে এই আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো লোক আসেনি বলে ফাঁকাই আছে। ছবি: প্রথম আলো
খুলনার দাকোপের বানীশান্তা পিনাকপানি বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে খিঁচুড়ি রান্নার কাজ চলছে। তবে এই আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো লোক আসেনি বলে ফাঁকাই আছে। ছবি: প্রথম আলো

খুলনায় আজ বুধবার ভারি বৃষ্টিপাতের পর দুপুরের দিক থেকে দমকা বাতাস বইতে থাকে। পশুর, শিবসা ও ভদ্রা নদীতে জোয়ারের পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। কিন্তু এরপরও বেশির ভাগ আশ্রয়কেন্দ্র এখনো ফাঁকা পড়ে আছে।

উপকূলীয় উপজেলা দাকোপে সকাল থেকে দুই দফা ভারি বৃষ্টি হয়েছে। তবে দুপুর ১২টার দিক থেকে মেঘাচ্ছন্ন আকাশে কিছুটা রোদের দেখা মেলে। মিনিট দশেক পর রোদ মিলিয়ে যায়। এর পরপরই দমকা বাতাস বইতে শুরু করে। বেলা একটার দিক থেকে দমকা হাওয়ার পাশাপাশি হালকা বৃষ্টি শুরু হয়েছে। পশুর, শিবসা ও ভদ্রা নদীতে অন্যদিনের তুলনায় জোয়ারের উচ্চতা বেশ কিছুটা বেশি ছিল।

স্থানীয়ভাবে সিপিপির সদস্যরা ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে আসার জন্য মাইকিং করে যাচ্ছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষকে আনার জন্য উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছেন। তবে দুপুর নাগাদ বেশির ভাগ আশ্রয়কেন্দ্র ফাঁকাই আছে। দুই–একটি আশ্রয়কেন্দ্রে খিঁচুড়ি রান্নার কাজ চলছে।

আজ দুপুর ১২টার দিকে দাকোপের বানীশান্তা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য দেবাশীষ মণ্ডল স্থানীয় টিএ ফারুক মাধ্যমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এই এলাকার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে চান না। গতকাল মঙ্গলবার রাতে কয়েকজন এসেছিলেন। তবে সকালে চলে গেছেন। আবার সকালে কিছু প্রবীণ মানুষ এসছিলেন, তাঁরা বাড়ি চলে গেছেন। তবে বিকেলে আবার আসবেন বলে জানিয়েছেন। এখন আশ্রয়কেন্দ্রে স্বেচ্ছাসেবীরা ছাড়া আর কেউ নেই।

১১ বছর মে মাসে ঘূর্ণিঝড় আইলা দাকোপের সুতারখালী ও কামারখোলা ইউনিয়নকে বিধ্বস্ত করেছিল। কামারখোলা ইউনিয়নের ফকিরডাঙ্গা বিএফসি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (এখন আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত) সভাপতি শ্যামল জোয়াদ্দার বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রে লোক আসেনি। তবে আজ বিকেলে বা সন্ধ্যার দিকে কিছু লোকজন আসতে পারেন। এলাকার মানুষ ঝড়ের চেয়ে জলোচ্ছ্বাসকে বেশি ভয় পায়। এলাকায় নতুন বেড়িবাঁধ কিছুটা আশা জোগাচ্ছে।

সুতারখালী পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রে আজ দুপুর পর্যন্ত মাত্র দুজন ছিলেন বলে জানান চিকিৎসক রজত মণ্ডল।

সুতারখালী গ্রামের বাসিন্দা রনজিৎ মণ্ডল বলেন, 'বিকেলের দিকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাব। সংকেত যা–ই দেখাক, আমরা আকাশের পরিস্থিতির দিকে খেয়াল রাখি। সেভাবে আশ্রয়কেন্দ্রে যাব। রেডিও–টিভিতেও খোঁজ রাখছি। আর রাস্তায় ভীষণ কাদা। ওই কাদা মাড়িয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়াটা কঠিন। এ ছাড়া আশপাশে এখন বেশকিছু পাকা– আধা পাকা ভবন আছে। তাৎক্ষণিকভাবে সেখানেও আশ্রয় নেওয়া যাবে।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দাকোপের বানীশান্তা পিনাকপানি বিদ্যালয়ে (আশ্রয়কেন্দ্র) গিয়ে দেখা যায়, সেখানে খিঁচুড়ি রান্নার কাজ চলছে। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই রান্নার কাজ করছেন। ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক কৌশিক রায় বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত অল্প কয়েকজন মানুষ আছেন। আরও অনেকেই হয়তো আসবেন। বিকেল নাগাদ ঝড়টি প্রবল আকার ধারণ করতে পারে। তাই আগেভাগেই রান্নার কাজ শেষ করা হচ্ছে। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা সামাজিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনেই রান্নার কাজ করছেন।'