আম্পান মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি তিন বাহিনী ও পুলিশের

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে ঝোড়ো বাতাস বইতে শুরু করেছে। সঙ্গে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি। ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ডাকবাংলা এলাকা, কয়রা উপজেলা, খুলনা, ২০ মে। ছবি: সাদ্দাম হোসেন
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে ঝোড়ো বাতাস বইতে শুরু করেছে। সঙ্গে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি। ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ডাকবাংলা এলাকা, কয়রা উপজেলা, খুলনা, ২০ মে। ছবি: সাদ্দাম হোসেন

ঘূর্ণিঝড় আম্পান-পরবর্তী দুর্যোগ মোকাবিলায় সেনা, নৌ, বিমান এবং পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। বিশেষ সরঞ্জামসহ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার দল নিয়ে প্রস্তুত রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

চট্টগ্রাম, খুলনা ও মোংলা অঞ্চলে ২৫টি জাহাজ নিয়ে তৈরি আছে নৌবাহিনী। সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকায় দ্রুততম সময়ে জরুরি উদ্ধার, ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা দেওয়ার জন্য বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ, চিকিৎসা ও উদ্ধার অভিযানের জন্য বিমানবাহিনীর রয়েছে ৬টি পরিবহন বিমান ও ২২টি হেলিকপ্টার। অন্যদিকে ক্ষয়ক্ষতি থেকে মানুষের জীবন ও সম্পত্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা কাজ শুরু করেছেন।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় আম্পান আজ বুধবার বিকেল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে সুন্দরবনের কাছ দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, দুর্যোগ মোকাবিলায় সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ও অন্যান্য মন্ত্রণালয় এবং সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। সেনাবাহিনী বেসামরিক প্রশাসনের সঙ্গে দুর্যোগ-পূর্ববর্তী ও দুর্যোগ-পরবর্তী কার্যক্রমের সমন্বয় করেছে। সেনাবাহিনী নিজস্ব উৎস থেকে ১৮ হাজার ৪০০ ত্রাণের প্যাকেট তৈরি করেছে এবং ৭১টি ছোট মেডিকেল টিম প্রস্তুত রেখেছে। ১৪৫টি ছোট দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দল মোতায়েনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

ভূমিধস বিষয়ে অভিজ্ঞ দল বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের রক্ষায় কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মোতায়েনের জন্য রয়েছে। ৩১৩টি স্পিডবোট, ১৫টি পানি বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্ট, ২৩৯ আউট বোর্ড মোটর, ৪টি জাপানি উদ্ধার বোর্ড, ৬টি ফাইবার গ্লাস বোর্ড, ১১৫টি শার্ক বোর্ড এবং ২টি ল্যান্ডিং ক্র্যাফট প্রস্তুত আছে।

যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী তিন স্তরের প্রস্তুতি নিয়েছে। তাদের ২৫টি জাহাজ সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকায় রাখা হয়েছে। সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকায় অনুসন্ধান কাজের জন্য নৌবাহিনীর দুটি মেরিটাইম প্যাট্রোল এয়ার ক্র্যাফট এবং দুটি হেলিকপ্টার রয়েছে। সেই সঙ্গে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুরসহ উপকূলীয় এলাকায় মোতায়েনের জন্য নৌকন্টিনজেন্ট প্রস্তুত আছে।

উদ্ধার অভিযানের প্রয়োজন হলে নৌবাহিনীর দুটি মেরিটাইম প্যাট্রোল এয়ারক্রাফট ও দুটি হেলিকপ্টার বঙ্গোপসাগরে অনুসন্ধান চালাবে। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নৌবাহিনীর জাহাজগুলো উদ্ধার তৎপরতা ও ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তা করবে। এ সময় নৌবাহিনীর জাহাজ ‘সমুদ্রজয়’ ও ‘সমুদ্র অভিযান’ কক্সবাজারে এবং ‘গোমতি’ মোংলা এলাকায় নিয়োজিত থাকবে। বানৌজ ‘সুরভি’ থাকবে চট্টগ্রামের বহির্নোঙর থেকে মহেশখালী এলাকায়; বানৌজ ‘বঙ্গবন্ধু’, ‘স্বাধীনতা’, ‘প্রত্যয়’, ‘সংগ্রাম’ ও ‘প্রত্যাশা’ বহির্নোঙর থেকে চট্টগ্রামের পোতাশ্রয় এলাকায়; বানৌজ ‘দুর্জয়’, ‘নির্মূল’ ও ‘শাপলা’ চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকায়; বানৌজ ‘অতন্দ্র’ সন্দ্বীপ ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় এবং বানৌজ ‘অপরাজেয়’ হাতিয়া এলাকায় নিয়োজিত থাকবে।

উপকূলীয় জেলা ভোলা, নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুরে নৌবাহিনীর এলসিইউ-০১ এবং এলসিইউ-০২, বরিশাল ও আশপাশের এলাকায় বানৌজ ‘হাতিয়া’, ‘সন্দ্বীপ’, ‘শাহ পরাণ’ এবং ‘শাহ মখদুম’; বরগুনা, বরিশাল, সাতক্ষীরা ও ঝালকাঠির অভ্যন্তরীণ রুটে নৌবাহিনীর এলসিটি-১০৪ এবং এলসিটি-১০৫ এবং কর্ণফুলী চ্যানেলে বানৌজ ‘খাদেম’ নিয়োজিত থাকবে। খুলনা নৌ-অঞ্চলের দুটি জাহাজ সাতক্ষীরা ও দুবলার চরের উদ্দেশে খুলনা নৌ জেটি ত্যাগ করেছে। বরিশাল, বরগুনা ও পটুয়াখালীতে টহলরত তিনটি জাহাজকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নৌবাহিনীর আরও পাঁচটি জাহাজ বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলায় ত্রাণ সহায়তা প্রদানের জন্য রয়েছে।

বিমানবাহিনীর ৬টি পরিবহন বিমান ও ২২টি হেলিকপ্টার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ, চিকিৎসা ও উদ্ধার অভিযানের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

এদিকে পুলিশ আম্পানের মতো শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে জনগণের সহযোগিতা চেয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার সময় পারলে শুকনো খাবার ও খাওয়ার পানি সঙ্গে নিতে হবে। রাতে চলাচলে প্রয়োজনে হয় এমন সব ইলেকট্রনিক উপকরণ যেমন লাইট, ব্যাটারি ইত্যাদি সঙ্গে রাখতে হবে। ঘরে থাকা বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, গ্যাসের চুলা বন্ধ রাখতে হবে।

এতে আরও বলা হয়, আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার সময় স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী যেমন মাস্ক, গ্লাভস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার নিতে কেউ যেন ভুলবেন না। যতটা সম্ভব সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই অবস্থানের চেষ্টা করুন। যেকোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্বেচ্ছাসেবক বা পুলিশের সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।