বাগেরহাটে নদ-নদীর পানি বাড়ছে, বাঁধ উপচে প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা

ভাঙনের ঝুঁকিতে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার বলেশ্বর নদ ঘিরে বেড়িবাঁধের গাবতলা অংশ। ছবিটি আজ বুধবার সকালে তোলা। ছবি: প্রথম আলো
ভাঙনের ঝুঁকিতে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার বলেশ্বর নদ ঘিরে বেড়িবাঁধের গাবতলা অংশ। ছবিটি আজ বুধবার সকালে তোলা। ছবি: প্রথম আলো

ঘূর্ণিঝড় আম্পান আঘাত হানার আগেই উপকূলীয় নদ–নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার বলেশ্বর নদে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৭ ফুট পানি বেড়েছে। এতে বাঁধ উপচে প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে বিভিন্ন এলাকায়।

শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের গাবতলা গ্রামের আশার আলো মসজিদ সংলগ্ন বাঁধ ছুঁই ছুঁই করছে জোয়ারের পানি। শরণখোলার রায়েন্দা বাজারের পাশের বেড়িবাঁধ উপচে পানি প্রবেশ রোধে স্থানীয়রা মাটি দিয়ে বাঁধ উঁচু করতে চেষ্টা করছেন।

ঘূর্ণিঝড় আম্পান আঘাত হানার আশঙ্কায় গতকাল মঙ্গলবার রাতে জেলায় প্রায় ৯০ হাজার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সকালে কিছু লোক বাড়ি ফিরলেও দুপুরের আগে থেকে লোকজন আবার আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে শুরু করেছে। প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবকেরাও স্থানীয় অধিবাসীদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছে।

আজ দুপুর পর্যন্ত বাগেরহাট উপকূলীয় এলাকার ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক বিরাজ করছে সিডর বিধ্বস্ত শরণখোলার সাউথখালী এলাকায়। ২০০৭ সালে আঘাত হানা সিডরের কেন্দ্রস্থল ছিল শরণখোলা। সেই সময় ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধের স্থলে নতুন বাঁধ নির্মাণকাজ শেষ না হওয়াও এবারও জলোচ্ছ্বাসে বড় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। সেখানে জোয়ারের পানি বাঁধ উপচে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহীনুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, শরণখোলার আশার আলো মসজিদ কাম সাইক্লোন শেল্টার সংলগ্ন বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। দুপুরে জোয়ারের সময় এখানে পানি বেড়ে বাঁধ ছুই ছুই অবস্থা ছিল। পানি এর চেয়ে বাড়লে বাঁধ উপচে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন সবাইকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নিতে কাজ করছে। এরই মধ্যে উপজেলার ২০ হাজারের বেশি মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ইফতারের প্রয়োজনীয় খাবার নিয়ে অন্যরাও দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্রের ‍দিকে যাচ্ছেন। ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো ছাড়াও সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থানীয়দের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামরুল ইসলাম বলেন, জেলার ৯৭৭টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে ১ লাখ ৬২ হাজারের বেশি মানুষ দুপুর পর্যন্ত আশ্রয় নিয়েছেন। যেহেতু সন্ধ্যায় ঝড়টি আঘাত হানতে পারে, তাই সবাই দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে যাচ্ছেন। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে নজরদারি করা হচ্ছে। দুর্গত মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে জেলায় প্রায় ১২ হাজার স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। স্থানীয় প্রশাসন ও রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি আশ্রয়কেন্দ্রের এসব মানুষদের খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও মোমবাতি সরবরাহ করেছে। এ ছাড়া ১৩ হাজার গবাদি পশু আশ্রয়কেন্দ্রে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। জেলায় ২০০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ৩ লাখ টাকা, শিশুখাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা ও ২ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার এবং গোখাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে আম্পানের প্রভাবে অতিবর্ষণ ও ঝড়ো হাওয়ায় মাঠে থাকা কৃষি ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ। বাগেরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক রঘুনাথ কর বলেন, বাগেরহাটে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে করলা, ঝিঙে, ঢেঁড়শসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির আবাদ করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৮০০ হেক্টরে পাট, ১১০০ হেক্টরে পানের বরজ ও ৩৪৯ হেক্টরে আউশ ধানের বীজতলা করা হয়েছে। আম্পানের প্রভাবে অতিবর্ষণে জলাবদ্ধতা, জোয়ারের জলোচ্ছ্বাস ও ঝড়ো বাতাসে এসব ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।