করোনাকালে ৬৫ শতাংশ পরিবারে নারী-শিশু নির্যাতনের শিকার

নারী নির্যাতন। প্রতীকী ছবি
নারী নির্যাতন। প্রতীকী ছবি

করোনাকালে দেশে ৬৫ শতাংশ পরিবারে নারী ও শিশু পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ঘরে আটকে পড়া, কাজ না থাকা, আয় কমে যাওয়া, খাবারের সংকট, ঋণের চাপসহ নানা কারণে পরিবারে বাড়ছে দ্বন্দ্ব ও সংঘাত। ফলে বাড়ছে পারিবারিক নির্যাতন। এর বেশিরভাগই ঘটছে শ্রমজীবী, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারে।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্ট (স্টেপস্) এবং দেশের ১৮টি জেলার বেসরকারি সংগঠনের সম্মিলিত জাতীয় প্ল্যাটফরম বা ফোরাম জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যালায়েন্সের (গ্যাড অ্যালায়েন্স) এক পর্যবেক্ষণে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

এই পর্যবেক্ষণভিত্তিক প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাকালে প্রায় সব ধরনের কাজ বন্ধ রয়েছে। তাই অনেক পরিবারে নারীদের অর্জিত সঞ্চয় দিয়ে পরিবারিক নিয়মিত খরচ চালানোর চেষ্টা করছে। এ ক্ষেত্রে নারীরা বাধা দিলে তার ওপর নেমে আসছে নানা রকমের নির্যাতন। বাধ্য হয়ে নারীদের তিল তিল শ্রমে এবং মেধায় গড়ে ওঠা ছোট ছোট উদ্যোগ ও ব্যবসার পুঁজি এখন পরিবারের প্রতিদিনের চাহিদা মেটাতে খরচ করতে হচ্ছে। এর ফলে তাদের আগামীদিনের চলার পথ আরও সংকটময় হবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট নারীরা।
স্টেপস ও গ্যাড অ্যালায়েন্স গত ২৬ এপ্রিল থেকে ১০ মে পর্যন্ত দেশের ১৮ জেলায় ৭ হাজার পরিবারের ওপর নিবিড় পর্যবেক্ষণ চালায়। তাতে দেখা যায়, ৪ হাজার ৫৫০টি পরিবারে নারী ও শিশু নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এই হিসাবে ৬৫ শতাংশ পরিবারেই নারী ও শিশুরা নির্যাতিত হচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, চলমান পরিস্থিতিতে অভাবের কারণে নারী ও শিশুদের মারধর, বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া, খেতে না দেওয়া, ঘরে আটকে রাখা, জোর করে ত্রাণ সংগ্রহের কাজে ব্যবহার ও তালাকসহ নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। এ ছাড়া পরিবারের প্রয়োজনে কিংবা স্বামীর চাপে নারীদের সর্বশেষ জমানো টাকা তাদের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। বাপের বাড়ি থেকে টাকা বা খাবার আনার জন্য নারীদের শারীরিক ও মানসিকভাবে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। এ সময়ে অনাকাঙ্ক্ষিত গভধারণ ও গর্ভপাতের ঘটনাও ঘটছে। এসব নির্যাতনের বেশিরভাগই ঘটছে শ্রমজীবী, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারে।

চলমান পরিস্থিতিতে এ পর্যবেক্ষণে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে মোবাইল ও ইমেইল ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানানো হয়। পর্যবেক্ষণে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, রাজশাহী, টাঙ্গাইল, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরিশাল, বরগুনা, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম জেলা অন্তর্ভূক্ত ছিল।