আম্পানে সাতক্ষীরায় জোয়ারের পানি আসবে

মাত্র সাত মাসের ব্যবধানে দুটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়েছে সাতক্ষীরার মানুষ। ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর সুন্দরবন ঘেঁষে যায় ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। তবে তখন আঘাতের সময় জোয়ার ছিল না। তাই বুলবুলের কারণে জলোচ্ছ্বাসের মাত্রা ছিল কম। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় 'আম্পান'সেই সুযোগ না–ও দিতে পারে। কারণ আজ বুধবার সন্ধ্যায় যখন আম্পান আঘাত হানবে, তখন সাতক্ষীরার সুন্দরবন নদ-নদীগুলো জোয়ারের প্রভাবে ফুলে-ফেঁপে থাকবে।

তাই আম্পানের কারণে দেশের সর্ব দক্ষিণের এই জেলার নিচু এলাকার বড় অংশ পানির নিচে ডুবে যাবে—এমন আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ( পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, পুরো জেলায় ৮০০ কিলোমিটারের বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর বড় একটি অংশ আড়পাংগাশিয়া, খোলপেটুয়া ও কপোতাক্ষ নদের পাশে। বছরের পুরোটা সময়ই পানিতে টইটম্বুর থাকে এসব নদনদী। বর্ষাকালে অনেকটাই ভয়ংকর হয়ে ওঠে এগুলো। ঘূর্ণিঝড়ের সময় নদীগুলোর পানি দুকূলে উপচে পড়ে। তখন প্রায়ই জলোচ্ছ্বাসে ডুবে যায়।

আজ দুপুর ১২ টার দিকে ভাটা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এর কোনো লক্ষণ ছিল না সুন্দরবন ঘেঁষা সাতক্ষীরার নদনদীতে। বরং ভাটার সময় নদনদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট উঁচু দিয়ে বয়ে যাচ্ছিল।

সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ–২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের প্রথম আলোকে বলেন, সন্ধ্যার পর জোয়ার শুরু হতে পারে। তখনই ঘূর্ণিঝড় আম্পান সাতক্ষীরাসহ উপকূলীয় অঞ্চল অতিক্রম শুরু করবে। এতে জলোচ্ছ্বাস এর মাত্রা আরও বেশি হবে। এমন আশঙ্কাই আমরা করছি।

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর নানা কারণে ১০ শতাংশ বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া ৮০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের অনেক অংশ ১০ থেকে ১২ বছর ঠিকমতো মেরামত করা যায়নি। তাই জলোচ্ছ্বাস হলে সাতক্ষীরা জেলার নিম্নাঞ্চলের বহু অংশ ডুবে যেতে পারে। আর সাগরে পানি না নামলে এসব নিম্নাঞ্চল থেকে পানি দ্রুত কমবে না। এ কারণে সাতক্ষীরার বহু অংশ পানিতে দীর্ঘ সময় আটকে থাকবে।

সে কারণে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের শক্তি আঘাতের সময় যদি কমে যায়, তাহলেও জলোচ্ছ্বাসের কবল থেকে সহজে রক্ষা পাওয়া যাবে না। এমন ধারণা করছে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের বহু মানুষ।

জেলার সুন্দরবনকেন্দ্রিক পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সালাউদ্দিন। পর্যটকদের ব্যবহারের জন্য তাঁর দুটো নৌযান রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতের কথা চিন্তা করেই সালাউদ্দিন তাঁর নৌযানগুলো পাউবোর বেড়িবাঁধের পাশে নোঙর করে রেখেছেন। সালাউদ্দিন বলেন, গতকাল সকালেই পাউবো বেড়িবাঁধের কাছে নৌযানগুলো রেখে দিয়েছি। কিন্তু আজ সকাল থেকে প্রচণ্ড গতিতে বাতাস বয়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যায় ঝড় এলে না জানি কী হয়! আমার ধারণা, বাতাসের সঙ্গে নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে আমার মতো অনেকের নৌযান উড়ে যেতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দীন আহমেদ জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্পান সুন্দরবনে ভেসে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ওপর দিয়ে অতিক্রম করবে আজ সন্ধ্যায়। এতে সাতক্ষীরাসহ উপকূলীয় জেলাগুলোতে ১৫ ফুটের বেশি উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। তবে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ও দ্বিতীয় পক্ষের চাঁদের সময়ের শেষদিককার প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে নিম্নাঞ্চলের বড় অংশ ডুবে যেতে পারে।