আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা তিন গুণ বাড়ানো হয়েছে: দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী

>
এনামুর রহমান
এনামুর রহমান
করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা মোকাবিলায় ব্যস্ত বাংলাদেশ। এরই মধ্যে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। আজ সন্ধ্যার দিকেই ঘূর্ণিঝড়টি দেশের দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের কাছের উপকূল দিয়ে অতিক্রম করা শুরু করবে। আজ বুধবার বিকেলে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিয়ে প্রথম আলোর পার্থ শঙ্কর সাহার সঙ্গে কথা বলেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান।

প্রথম আলো: করোনা বিপর্যয়ের মধ্যেই আরেকটি সম্ভাব্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় কতটুকু প্রস্তুত বাংলাদেশ?

এনামুর রহমান: প্রথম যেদিন লঘুচাপ সৃষ্টি হয় অর্থাৎ ১৫ মে যেদিন থেকে ঘূর্ণিঝড় আসার সংকেত পাওয়া গেল, সেদিন থেকেই আমরা প্রস্তুতি নিয়ে শুরু করেছি। ওই দিন প্রথম সভা হয় এবং আমরা গুরুত্বসহকারে বিষয়টি নিই। আর প্রথম দিনই আমাদের মূল ভাবনার বিষয় ছিল নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করা। আর সেদিনই আমরা সিদ্ধান্ত নিই এবার আমাদের আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়াতে হবে। আমরা বুলবুলের সময় ৫ হাজার ৬৬৭টি আশ্রয়কেন্দ্র করেছিলাম। এবার এ সংখ্যা ১৪ হাজার ৬৩৬। প্রায় তিন গুণ বাড়িয়েছি এই কেন্দ্রের সংখ্যা। আর সবটাই করা হয়েছে করোনাকে ঘিরে। যাতে সবাই খুব সহজেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে পারে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে মাস্ক সেনিটাইজার সরবরাহ করা হয়েছে।

প্রথম আলো: করোনার মধ্যে আম্পানের আসাটা মড়ার উপর খাঁড়ার ঘার মতো, এমনটা বিবেচনা করছেন?

এনামুর রহমান: এখন পর্যন্ত আম্পানের যে অবস্থান, যেদিকে ধাবিত হচ্ছে এবং বাতাসের যে গতিবেগ, এতে আমরা মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছি যে এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানবে। আর আমাদের খুলনা বিভাগে আঘাত হানবে। এর ফলে আমরা আশা করি ক্ষয়ক্ষতি কম হবে, অন্তত এখনকার অবস্থান ও গতির বিবেচনায়।

প্রথম আলো: সরকার এ দুর্যোগ মোকাবিলায় কতটুকু প্রস্তুত?

এনামুর রহমান: আমরা প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি যথাযথভাবে।

প্রথম আলো: কী ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হলো?

এনামুর রহমান: আমাদের ১৪ হাজারের বেশি আশ্রয়কেন্দ্রে ২৩ লাখ ৯০ হাজার ৩০৭ জনকে ইতিমধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। ৫ লাখ ১৭ হাজারের বেশি গবাদিপশুকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হয়েছে। খাদ্যের জন্য ৩ হাজার ১০০ মেট্রিক টন চাল, ৫০ লাখ টাকা, শিশুখাদ্যের জন্য ৩১ লাখ টাকা, গোখাদ্যের জন্য ২৮ লাখ টাকা এবং ১০ রকমের আইটেম দিয়ে শুকনো খাদ্যের প্যাকেট দেওয়া হয়েছে ৪২ হাজার। জরুরি ওষুধসহ মেডিকেল টিম দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেখানে সরবরাহের বিদ্যুৎ নেই, সেখানে সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। টাকা দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ১০ লাখ।

প্রথম আলো: আম্পানের সম্ভাব্য ধাক্কা করোনা মোকাবিলার প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করবে না?

এনামুর রহমান: ঝড় মোকাবিলায় আমাদের মন্ত্রণালয়ের যতটুকু কাজ, তা ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যেই সম্পন্ন হয়ে যাবে। এরপর ক্ষয়ক্ষতি পূরণে যে কাজ, সেখানে স্বাস্থ্য বা আমাদের মন্ত্রণালয়ের কাজ সীমিত। রাস্তাঘাট ভেঙে গেলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, বাঁধ ভেঙে গেলে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গেলে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় দেখবে।

প্রথম আলো: এবার কি আম্পানে ক্ষতি কম হবে বলে মনে করেন?

এনামুর রহমান: ঝড়ের এখনকার যে গতিপ্রকৃতি, তাতে মনে হচ্ছে, আমরা যা আশঙ্কা করেছিলাম, হয়তো তার চেয়ে কম ক্ষতি হবে।

প্রথম আলো: আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় যেসব স্বেচ্ছাসেবক আছেন, তাঁদের সুরক্ষায় বিশেষ করে করোনা থেকে সুরক্ষায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?

এনামুর রহমান: আমাদের ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) স্বেচ্ছাসেবক আছে ৫৬ হাজার। তারা সবাই নেমেছে। এ ছাড়া স্কাউট, রেড ক্রিসেন্ট ও আনসার–ভিডিপির স্বেচ্ছাসেবকেরা আছেন। তাঁদের পুরো সংখ্যাটা বলতে পারছি না। তবে সবাই লাইফ জ্যাকেটসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়েই আছে।

প্রথম আলো: আশ্রয়কেন্দ্রে যাঁরা আছেন, তাঁদের জন্য করোনা থেকে সুরক্ষায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?

এনামুর রহমান: যদি কোনো শনাক্ত রোগী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেন, তবে তাঁকে বা তাঁর পরিবারের জন্য কেন্দ্রে আলাদা ব্যবস্থা করা হবে। আর সে জন্যই এবার কেন্দ্রের সংখ্যা এত বেশি। চিকিৎসার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরাই ঠিক করে দেবেন, এমন রোগীর কক্ষে অন্য কেউ থাকতে পারবে না। ঘূর্ণিঝড়ের ফলে প্রভাব পড়তে পারে খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা ও পিরোজপুর—এই আট জেলায়। এসব জেলায় কোভিড–১৯–এর রোগী বেশ কম। প্রতি জেলায় ২০ জন বা এর চেয়ে কম। তাই আশ্রয়কেন্দ্রে সংক্রমণের আশঙ্কা কম।