ভার্চ্যুয়াল আদালতে ২৪৭ শিশুর জামিন, অভিভাবকের কাছে ফিরল ১৭৪

ভার্চ্যুয়াল আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন অভিযোগে তিনটি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে থাকা ২৪৭টি শিশু জামিন পেয়েছে। এ হিসাব গত এক সপ্তাহের। তাদের মধ্যে ১৭৪টি শিশুকে ইতিমধ্যে তাদের অভিভাবকের কাছে বুঝিয়েও দেওয়া হয়েছে।

সমাজসেবা অধিদপ্তর ও সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, ১২ মে থেকে ২০ মে পর্যন্ত ভার্চ্যুয়াল আদালতের (শিশু আদালত) মাধ্যমে ২৪৭টি শিশু জামিন পায়। এদের মধ্যে গাজীপুরের টঙ্গি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে (বালক) থাকা ১৪২ শিশু, গাজীপুরের কোনাবাড়ী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র (বালিকা) থেকে ২০ শিশু এবং যশোরের পুলেরহাটের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে (বালক) থাকা ৮৫ শিশু জামিন পেয়েছে। জামিনপ্রাপ্তদের মধ্যে টঙ্গি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে ১০৬ শিশু, কোনাবাড়ি থেকে ৯ মেয়ে শিশুকে এবং পুলেরহাট শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে ৫৯ শিশুকে তাদের অভিভাবকের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান আজ বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, গত এক সপ্তাহে শিশু আদালত থেকে ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে ২৪৭টি শিশু জামিন পেয়েছে। ইতিমধ্যে ১৭৪ শিশুকে তাদের অভিভাবকের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইউনিসেফ শিশুদের জামিন পরবর্তী সুরক্ষা তদারক করছে। শিশু অধিকার–সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ কমিটির কাছে (স্পেশাল কমিটি অব চাইল্ড রাইটস) এ বিষয়ে সংস্থাটি নিয়মিত প্রতিবেদনও দিচ্ছে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আদালতে সাধারণ ছুটি চলছে। এমন প্রেক্ষাপটে ৯ মে আদালতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার–সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারি করেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ। ফলে অডিও-ভিডিও বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে শারীরিক উপস্থিতি ছাড়া ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে বিচারকাজ পরিচালনার সুযোগ তৈরি হয়। পরদিন সুপ্রিম কোর্ট থেকে অধস্তন আদালতে শুধু জামিন–সংক্রান্ত বিষয়গুলো তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার উদ্দেশ্যে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতিতে শিশুদের জামিন বিষয়ে ১২ মে থেকে কার্যক্রম শুরু হয়।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমাজসেবা অধিদপ্তর ওই তিনটি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র পরিচালনা করে আসছে। শিশুদের বিষয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রতিষ্ঠান-২) এম এম মাহমুদুল্লাহর সঙ্গে বৃহস্পতিবার কথা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, করোনা সংক্রমণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আদালতে সাধারণ ছুটি চলছিল। এমন প্রেক্ষাপটে শিশুদের সর্বোত্তম স্বার্থ বিবেচনায় সুপ্রিম কোর্ট স্পেশাল কমিটি অব চাইল্ড রাইটসের মৌখিক নির্দেশনা অনুসারে অধিদপ্তর আইনের সংঘাতে জড়িত শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে থাকা শিশুদের আদালতভিত্তিক একটি তালিকা তৈরি করে। ১ হাজার ১৪৭ শিশুর এই তালিকা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। অন্যদিকে অধ্যাদেশ জারির পর ভার্চ্যুয়াল আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। তখন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশ অনুসারে আইনের সংঘাতে জড়িত শিশুদের তালিকা সংশ্লিষ্ট শিশু আদালতে পাঠানো হয়। ১২ মে থেকে শিশুদের জামিন শুনানি শুরু হয়। জামিন পাওয়া ১৭৪টি শিশুকে অভিভাককের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্য ৭৩ শিশুকে অভিভাবকের কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার বিষয়টি চলমান রয়েছে। ইউনিসেফ এ বিষয়ে সক্রিয় সহায়তা দিচ্ছে।